আগামীকাল ১৭ অক্টোবর (১ কার্তিক) আধ্যাত্মিক সাধক বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহের ১৩২ তম তিরোধান দিবস। লালন মেলা উপলক্ষে গত কয়েকদিন ধরেই কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়া লালন আখড়াবাড়িতে হাজার হাজার ভক্ত-অনুসারীরা দূরদূরান্ত থেকে আসতে শুরু করেছেন। কালি নদীর পাড় ঘেঁষে লালন মাঠে প্রায় কয়েকশো অস্থায়ী থাকার জায়গা ও দোকান বসেছে।

করোনাভাইরাস মহামারি সংক্রমণ রোধে পরপর দু’বছর তিরোধান দিবস উপলক্ষে লালন মেলা স্থগিত ছিল। দীর্ঘদিন পর কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ার আখড়াবাড়িতে আগামীকাল সোমবার (১৭ অক্টোবর) থেকে তিন দিনব্যাপী শুরু হবে লালন মেলা। আসতে শুরু করেছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভক্ত-অনুসারী, বাউল, সাধু আর বিদেশি লালনভক্ত অনুরাগীরাও।

মরমি সাধক ফকির লালন শাহ কুষ্টিয়ার শহরতলি কুমারখালী উপজেলার চাপড়া ইউনিয়নের ছেঁউড়িয়া গ্রামে ১৮৯০ সালের ১ কার্তিক মারা যান। এখানে পরবর্তীতে লালন মেলার আয়োজন শুরু করে লালন একাডেমি।

বাণিজ্য প্রতিদিনের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

লালনের আখড়াবাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ফকির লালন শাহের ১৩২ তম তিরোধান দিবস উপলক্ষে হাজার হাজার ভক্ত-অনুসারীরা দূরদূরান্ত থেকে আসতে শুরু করেছেন ছেঁউড়িয়ায় লালন শাহ আখড়াবাড়িতে। কালি নদীর পাড় ঘেঁষে লালন মাঠে কয়েকশো অস্থায়ী থাকা-বসার জায়গা ও দোকান বসেছে। কেউ সঙ্গীদের সাথে নিয়ে গান গাইছেন, কেউ রান্না করছেন, অনেকেই গাজা সেবন করছেন। তারা চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, মানিকগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা, চাঁদপুর, মাদারীপুর সহ দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে এসেছেন। গত এক সপ্তাহ ধরে তারা জড়ো হচ্ছেন ছেঁউড়িয়ায়।

মানিক পাগল নামের এক ব্যক্তি বলেন, গত ৬দিন আগে আমি এখানে এসেছি। আমি একজন লালন ভক্ত মানুষ। লালন সাঁইয়ের তিরোধান দিবস উপলক্ষে আমি এখানে এসেছি। আমার মতো হাজারো ভক্ত-অনুসারীরা এখানে এসেছেন। প্রতিদিনই লোকজন আসছে বিভিন্ন জেলা থেকে। লাখ লাখ মানুষের সমাগম হবে লালন মেলায়।

সাথী-সঙ্গী ও পরিবারের সদস্যদের সাথে নিয়ে আসা মোমিন আলী বলেন, আমরা নারায়ণগঞ্জ এলাকা থেকে গত কয়েকদিন আগে ছেঁউড়িয়ায় এসেছি। আমরা নিজেরা এখানে রান্নার ব্যবস্থা করেছি, এখানে থাকার ব্যবস্থাও করেছি। লালন ফকিরের তিরোধান দিবস উপলক্ষে আমরা এসেছি। লালন মেলা শেষে আমরা এখান থেকে চলে যাবো।

স্থানীয় চায়ের দোকানদার জালাল ও চটপটি বিক্রেতা রিপন বলেন, গত এক সপ্তাহ ধরে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লালন ভক্তরা এসে জড়ো হচ্ছেন।। তারা তিরোধান দিবস উপলক্ষে এখানে আসছেন। এতে আমাদের বেচা-কেনা আগের তুলনায় ভালো হচ্ছে।

লালন একাডেমির অ্যাডহক কমিটির সদস্য তাইজাল আলী খান বলেন, করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে গত দুইবার লালন মেলা বন্ধ ছিল। এবারও লালন মেলার আয়োজন করা হয়েছে। আগামীকাল থেকে তিনদিন ব্যাপী লালন মেলা হবে। কয়েকদিন আগে থেকেই দূরদূরান্ত থেকে ছেঁউড়িয়ায় আসতে শুরু করেছেন ভক্তরা অনুসারীরা। অন্যান্য বারের চেয়ে এবার বেশি মানুষের আগমন ঘটতে পারে।

এসব বিষয়ে কথা বলার জন্য কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক ও লালন একাডেমির অ্যাডহক কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ সাইদুল ইসলামের মুঠোফোনে কল দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার খাইরুল আলম বলেন, লালন মেলা উপলক্ষে মাজার প্রাঙ্গণ ও তার আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। মাজার এলাকা সিসি ক্যামেরার আওতায় থাকবে। পুলিশ, র‌্যাব ও সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা মোতায়েন আছে।

তিন দিনব্যাপী লালন মেলা অনুষ্ঠানে প্রতিদিনই আলোচনা সভা শেষে মঞ্চে শুরু হবে লালন সঙ্গীত। যা গাইবেন লালন একাডেমির শিল্পীরা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত বাউল শিল্পী ও ভক্তরা। মাজার প্রাঙ্গণ পরিষ্কার করে বর্ণিল পরিবেশের সৃষ্টি করছে একাডেমি কর্তৃপক্ষ।

প্রসঙ্গত, ১২৯৭ বঙ্গাব্দের পহেলা কার্তিক উপমহাদেশের প্রখ্যাত সাধক বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহের মৃত্যুর পর থেকে তার স্মরণে লালন একাডেমি ও জেলা প্রশাসন এই মেলা চালিয়ে আসছিল। প্রতিবছর ১ কার্তিক আড়ম্বপূর্ণ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে কুষ্টিয়ার কুমারখালির ছেঁউড়িয়ায় ফকির লালন শাহের তিরোধান দিবস পালন করা হয়।