সবজি চাষে পাবনা জেলার অন্যতম উপজেলা ঈশ্বরদী। বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য কৃষি উৎপাদন অঞ্চল গুলোর মধ্যে একটি অন্যতম জেলা পাবনা। এ জেলার সবচেয়ে উঁচু উপজেলা ইশ্বরদী, এখানকার জায়গা উঁচু ও ফসলি জমি উর্বর হওয়ায় বার মাস বিভিন্ন ফসল উৎপাদন হয়। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে খাদ্য চাহিদা মেটাতে ভূমিকা রাখে। শীত এসেছে মৌসুমী আবাদ সবজি ও বাজারে উঠা শুরু হয়েছে।

এ বছর ইশ্বরদী উপজেলায় গাজর চাষে কৃষকরা ভালো ফলন বৃদ্ধি পাওয়ায় অধিক লাভবান হওয়ার আশা করছেন। উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের জমিতে আবাদ চলছে পুষ্টিকর গাজর। যা শুধু সবজি নয় ফল হিসেবে মানুষের কাছে পছন্দনীয় খাদ্য। পাবনা জেলার ঈশ্বরদী উপজেলায় গাজর চাষ হয়ে থাকে। আবহাওয়া ভালো থাকায় ভালো ফলন ও ভালো মূল্য পাওয়ার আশা করছেন, এখানকার গাজর চাষিরা।

এ বছর ঈশ্বরদীত গাজরের ফলন ৪০ মট্রিক টন এর সম্ভাবনা রয়েছে। তবে কৃষকরা বলছেন, জ্বালানি তেল এর দাম বৃদ্ধি পাওয়ায়, কৃষি খাতে খরচ বেড়েছে। এই মৌসুমে এক কেজি বীজের দাম ২১,৫০০ টাকা, যা গত বছর এ বীজের মূল্য ছিল ১৭,৩০০ এতে প্রতি কেজি বীজের দাম বাড়ছে ৪০০০ টাকা। স্থানীয় শ্রমিক সংকটের কারণে দুপুরের খাবারসহ ৫০০-৭০০ টাকা মজুরির নীচে এখন শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। কোন সময় এক হাজার টাকা পর্যন্ত মজুরি দিতে হয়।

বাণিজ্য প্রতিদিনের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

এ বছর এক বিঘা জমিতে গাজর চাষে খরচ প্রায় ৪০-৫০ হাজার টাকা হয়েছে। তবে সবজি- ফলমূল সংরক্ষণাগার থাকলে কৃষক আরও বশি লাভবান হতেন বলছেন, কৃষি বিভাগের কর্মকর্তা এবং কৃষকরা। ঈশ্বরদীসহ উত্তরবঙ্গে সবজি সংরক্ষণাগার না থাকায় কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ সংরক্ষণাগার থাকলেও স্থানীয়দের পক্ষে সংরক্ষণ করা সম্ভব হয় না। এলাকার কৃষকরা দীর্ঘদিন ধরে সরকারি উদ্যাগে সবজি ও ফল সংরক্ষণাগার বাস্তবায়ন করার দাবি জানালেও তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না।

কৃষকরা জানান, একই মৌসুমে জমিতে দুই দফায় গাজরের আবাদ হয়ে থাকে। তবে কেউ একবার আবার কোন কৃষক দুই দফায় গাজর আবাদ করে থাকেন। রবি মৌসুমের শুরুতে গাজরের আবাদ শুরু হয়। আবাদের তিন মাসের সময় গাজর পরিপূর্ণ হয়ে উঠে। গাজর জমিতে থাকতেই বেপারীরা কিনে নেন। উঁচু জমিতে গাজর চাষ ও অনুকূল আবহাওয়া থাকায় রোগ বালাই কম হয়। এবং স্বল্প শ্রম উৎপাদনে বেশি ভালো মূল্য পাওয়ায় গাজর চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের।

গাজর চাষ করেই অনেক কৃষকদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়েছে। এখানকার গাজর ভালো স্বাদ ও পানি কম থাকায় স্থায়িত্ব বেশী হওয়ায় চাহিদাও প্রচুর। এ কারণে ঈশ্বরদীর গাজরের সুনাম ও চাহিদা দেশব্যাপী রয়েছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় ভারে হতে গাজরের জমিতে ব্যস্ত সময় কাটছে কৃষক ও শ্রমিকদের। আর ৮/১০দিন পর থেকেই শুরু হবে গাজর উঠা।

এক বিঘা জমিত ১০০ থক ১২০ মণ গাজর আবাদ হয়ে থাকে। বিঘা প্রতি গাজরের দাম এক লাখ থেকে এক লাখ ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করছে চাষীরা। চাষীরা বলছেন, সরকারী ঋণ পেলে তারা আরাে বেশী চাষাবাদ করতে পারবে। শীতকালীন সবজি শিম, বেগুন, লাউ, বরবটি, শাক, ঝিঙা, ঢ্যাঁড়স, চিচিংগা ও ধানের পাশাপাশি গাজর আবাদ করেও এখানকার চাষিরা লাভবান হচ্ছেন। দেশের অধিকাংশ এলাকায় সবজির চাহিদা পূরণ হচ্ছে ঈশ্বরদী থেকে। এই উপজেলার লক্ষীকুন্ডা, সাহাপুর ও সলিমপুর থেকে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা গাজর কিনে নিয়ে যান ট্রাক বােঝাই করে।

বঙ্গবন্ধু স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত ঈশ্বরদীর কৃষক জাহিদুল ইসলাম জাহিদ বাণিজ্য প্রতিদিন প্রতিবেদক জানান, এবার ১০০ বিঘা জমিতে গাজর চাষ করেছি। গাজর চাষ গত বছরের তুলনায় এবার খরচটা কিছুটা বেশি হয়েছে। এবার বীজের দাম বেশি থাকায় বিঘা প্রতি গাজর চাষের খরচ হয়েছে ৪২ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা। গাজর জমি থেকেই ১ লাখ থেকে দেড় লাখ টাকা বিক্রি হচ্ছে । এবং উপজেলা কৃষি কর্মকর্তারা সহযোগীতা করছে বিভিন্ন ভাবে।

গাজর চাষী ভুট্টু আলী বলেন, এ বছর আমি ১৭ বিঘা জমিতে গাজর চাষ করেছি । খাজনা , বীজ, সার, শ্রমিক খরচ দিয়ে ১৭ বিঘা জমিতে গাজর আবাদ করতে খরচ হয়েছে প্রায় ৮ লাখ টাকা। এবার বীজ কিনেছি ২১,৫০০ টাকা কেজি যা গত বছর ছিল ১৭,৩০০ টাকা । গাজর উঠতে আর ১০/১৫ দিন সময় লাগবে। তিনি আরাে বলেন, কৃষি অফিসারদের কােন পরামর্শ আমি পায়নি।

গাজর চাষী সুলাইমান বলেন, এবার যদি আবহাওয়া ভালাে থাকে তাহলে গাজর চাষে লাভবান হব। গাজরের ফলন এবার ভালো হয়েছে। এক লাখ বিশ হাজার থেকে এক লাখ ৪০ হাজার টাকা বিক্রি হচ্ছে । আমি বিঘা প্রতি এক লাখ ২০ হাজার টাকা বিক্রি করছি। এবার গাজরের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। কৃষি অফিসাররা আমাদের সহযাগীতা করলে ফলন আরো ভালো হবে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মিতা সরকার বলেন, লাভজনক ও পুষ্টিকর সবজি হওয়ায় ঈশ্বরদীতে প্রতিবছর গাজরের আবাদ বাড়ছে। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে গাজর চাষে কৃষকদের সব রকম সহযোগিতা আমরা দিচ্ছি এবং তা অব্যাহত থাকবে। তিনি আরও জানান, এ বছর ঈশ্বরদী উপজেলার ৮৫০ হেক্টর জমিত গাজরের চাষাবাদ হয়েছে। গত বছর আবাদ হয়েছিল ৮৫৬ হেক্টর। চাহিদা থাকায় ও দাম ভালো পাওয়ায় প্রতিবছর গাজরের আবাদ বাড়ছে। গাজর বাজারে উঠলে ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি গাজর বিক্রয় হবে। এবার গাজরের ৪০ মেট্রিক টন ফলনের আশা করা যাচ্ছে। উপজেলার সাত ইউনিয়নের মধ্যে লক্ষীকুন্ডা, সাহাপুর ও সলিমপুর ইউনিয়ন গাজরের আবাদের পরিমাণ বেশি। বাকী চার ইউনিয়ন আবাদ কম হয়েছে।