পাবনায় প্রায় ১৫ দিন ধরে শিল্প ও বাণিজ্য মেলার নামে চলছে অবৈধ লটারির টিকিট বিক্রয় ও সার্কাসের নামে অশ্লীল নৃত্য। এমনকি শিল্প ও বাণিজ্য মেলা থেকে সরাসরি ‘কেবল টিভি নেটওয়ার্কের’ মাধ্যমে প্রচারিত হচ্ছে শুধু বাণিজ্য মেলার দৈনিক লটারির ফলাফল ঘোষণা। যেখানে লটারির ড্র’ পরিচালক ‘ওঠাও বাচ্চা, নেড়ে চেড়ে ওঠাও’ বলে আকর্ষণীয় ঢং এ ঘোষণা করছে ফলাফল। আর পাবনা শহর ও এর আওতাভুক্ত সিংহভাগ কেবল টিভির দর্শক লটারির নেশায় বুঁদ হয়ে দেখছে ওই দৃশ্য। অথচ প্রশাসনের নেই কোন ভূমিকা। মেলা থেকে সরাসরি সম্প্রচারিত লটারির টিকিটের ফলাফল ঘোষণা সবাই দেখতে পেলেও রহস্যময়ভাবে প্রশাসন যেন চোখ থাকিতেও অন্ধ।

গত ১৭ ডিসেম্বর থেকে পাবনার রেলস্টেশন সংলগ্ন লষ্করপুরে এ শিল্প ও বাণিজ্য মেলা শুরু হয়। তীব্র শীত আর ঘনকুয়াশায় এ শিল্প ও বাণিজ্য মেলা চত্বরে তেমন ক্রেতার সমাগম না থাকলেও সার্কাসের অশ্লীল নৃত্য দেখার জন্য ও লটারি প্যান্ডেলেই কেবল উৎসুক জনতার উপচে পড়া ভীড়। শুধু লটারির নামে প্রতিদিন প্রায় অর্ধ কোটি টাকার টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে, মেলা চত্বরসহ পাবনা সদর, সুজানগর, আটঘরিয়া, চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া, ফরিদপুর, বেড়া, সাঁথিয়া ও এর আশপাশের কমপক্ষে এক দেড়শ’ স্পটে।

এছাড়াও এই শিল্প ও বাণিজ্য মেলার অন্তরালে সার্কাস প্রদর্শনের স্থলে সগৌরবে চলছে অশ্লীল নৃত্য। এ অশ্লীল নৃত্য দেখে এলাকার যুবসমাজের নৈতিক অবক্ষয় ও অধঃ পতন ঘটছে। অন্যদিকে, পুঁজি ভেঙ্গে ও ধারদেনা বা ঋণ নিয়েও এলাকার অসংখ্য গরীব, ধনীসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ লটারির টিকিট কিনে প্রতিনিয়ত প্রতারিত হয়ে নিঃস্ব হয়ে ঘরে ফিরে হাঁ-হুঁতাশ করছে। ফলে, হাতে টাকা না থাকায় নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ডের সাথে তাদের জড়িয়ে পড়ার প্রবণতা বাড়ার আশঙ্কা সচেতন মহলের। আর প্রকাশ্যে দিবালোকে মাইকে ঘোষণা দিয়ে এ মেলায় লটারির নামে প্রতিদিন কোটি টাকার জুয়া বাণিজ্য পরিচালনা করছেন জনৈক লিটন! লটারির নামে রমরমা জুয়া ও সার্কাসের অন্তরালে অশ্লীল নৃত্য প্রদর্শন করা হলেও এসব অপকর্ম কিছুতেই রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না বলে এলাকার সচেতন মহল অভিমত ব্যক্ত করেছেন।

বাণিজ্য প্রতিদিনের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

পাবনার রেলস্টেশন সংলগ্ন লষ্করপুরে চলমান শিল্প ও বাণিজ্য মেলায় বিভিন্ন স্থান থেকে আগত বেশ কয়েকজন এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, শিল্প ও বাণিজ্য মেলায় কেনাকাটা করার জন্য এসে দেখলাম নামে মাত্র কিছু দোকান পাট থাকলেও সেখানে পছন্দসই কেনাকাটার জন্য তেমন কিছুই নেই। তবে লটারি ও সার্কাসের নগ্ননৃত্য দেখার জন্যই সিংহভাগ লোকজন এসেছে মেলায়। পুলিশ পাহারাও দিচ্ছে সেখানে। পুলিশ সম্ভবত লটারির আয়োজকদের নিরাপত্তা দিতেই সেখানে অবস্থান করছেন।
এ বিষয়ে মুঠোফোনে মেলার ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের পরিচালক রাইফা ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী লিটনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ‘আমার কাজ হলো ইভেন্ট পরিচালনা করা।’ পাবনা শিল্প ও বাণিজ্য মেলায় লটারি চালানোর কোন অনুমোদন জেলা প্রশাাসন দিয়েছেন কি না? সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। আয়োজকেরা বলতে পারবেন।’

এদিকে মুঠোফোনে শিল্প ও বাণিজ্য মেলার অন্তরালে প্রতিদিন অর্ধ কোটি টাকার লটারির নামে জুয়া ও অশ্লীল নৃত্যের মতো বেআঈনী কর্মকান্ড সম্পর্কে জানতে চাইলে পাবনা জেলা প্রশাসক মোঃ বিশ্বাস রাসেল হোসেন বলেন, ‘আমরা লটারি বন্ধ করে দিয়েছি।’ কিন্তু প্রতিনিয়তই পাবনার বিভিন্ন স্থানে লটারির গাড়ি দেখা যায়। কেনার জন্য মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়ছে, লটারি বিক্রিত অটোরিক্সার নিকট। আর এ সুযোগে মানুষকে বোকা বানিয়ে লটারির টিকিট বিক্রি করছে । তাই অতিদ্রুত পাবনা শিল্প ও বানিজ্য মেলায় লটারি জুয়া ও সার্কাসের নামে অশ্লীল নৃত্য বন্ধের দাবি জানিয়েছে পাবনার সচেতন মহল।