গ্রাহকদের কাছে ডলার বিক্রিতে বাংলাদেশ ব্যাংক দুটো পদ্ধতি ব্যবহার করে থাকে। নগদ লেনদেনের পাশাপাশি কার্ডের মাধ্যমে ডলার বিক্রি করা হয়। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে কার্ডে বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেন ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে। কিন্তু পরবর্তী দুই মাসে এই পদ্ধতিতে কমে এসেছে ডলার বিক্রির পরিমাণ। ২০২৩ সালের প্রথম মাস জানুয়ারিতে আগের মাসের তুলনায় ১৯ কোটি টাকা কমে বিক্রি হয়েছে ৬২০ কোটি টাকার সমপরিমাণ ডলার। কিন্তু ফেব্রুয়ারি মাসে তা আরও কমে দাঁড়িয়েছে ৫৫৭ কোটি টাকায়। অর্থাৎ আগের মাসের তুলনায় গত ফেব্রুয়ারিতে ডলার বিক্রি কমেছে ৬৩ কোটি টাকা। এ নিয়ে কার্ডে টানা দুই মাস বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেন কমেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।

তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের ফেব্রুয়ারিতে বৈদেশিক মুদ্রায় মোট ৩৯ হাজার ৪৬৪ কোটি টাকা লেনদেন হয়। এর মধ্যে দেশি মুদ্রায় লেনদেন হয়েছে ৩৮ হাজার ৯০৬ কোটি এবং বৈদেশিক মুদ্রায় ৫৫৭ কোটি টাকা। যা আগের মাসের তুলনায় পর্যায়ক্রমে ২৩০ কোটি এবং ৬৩ কোটি টাকা কম। একই সাথে কার্ডে মোট লেনদেনেও ভাটা দেখা গিয়েছে। আগের মাসের তুলনায় ফেব্রুয়ারিতে কার্ড ব্যবহারে লেনদেন কমেছে ২৯৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা।

বাণিজ্য প্রতিদিনের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

দেশে অনেক আগেই ক্রেডিট কার্ডে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের অনুমোদন দেওয়া হয়। আর ২০২০ সালের জুনে ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের হিসাবের বিপরীতে আন্তর্জাতিক ডেবিট কার্ড ইস্যুর অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে নিয়মিত কার্ডে লেনদেনের হার বেড়েই চলছিলো। তাছাড়া বিদেশ থেকে কোন পণ্য কিনতে কার্ডে সহজে লেনদেন করতে পারায় বেড়েছিলো বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম মাস থেকেই কার্ডে বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেন বাড়ছে। জুলাইয়ে কার্ডে লেনদেন হয় ৪৪০ কোটি টাকা। এরপরের মাসে আগস্টে ৫২০ কোটি টাকা লেনদেন হয়। অর্থবছরের তৃতীয় মাস সেপ্টেম্বরে লেনদেন হয়েছিলো ৫৮৫ কোটি টাকা, অক্টোবরে লেনদেন হয় ৬০৫ কোটি টাকা, নভেম্বরে ৫৭২ কোটি টাকা, ডিসেম্বরে ৬৩৯ কোটি টাকার লেনদেন হয়। কিন্তু চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে কার্ডে বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেন কমে দাঁড়ায় ৬২০ কোটি টাকায়। ফেব্রুয়ারিতে তা আরও কমে ৫৫৭ কোটি টাকায় নেমে আসে।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, গ্রাহকদের কাছে নগদ ও কার্ডে দুইভাবেই ডলার বিক্রি করে ব্যাংকগুলো। ভ্রমণ, চিকিৎসা, শিক্ষা ও ব্যবসার কাজে অনেকেই বিদেশে কার্ডের মাধ্যমে ডলার নিয়ে থাকেন। সম্প্রতি দেশে ডলার সংকট প্রকট হওয়ায় কার্ডে বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেন কমেছে। তাছাড়া উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে অনেকে আয়েশি জীবন থেকে দূরে সরে যাচ্ছেন। এতেও দৈনন্দিন জীবনে ডলারের ব্যবহার কমে আসছে।

দেশে রেমিট্যান্স ও রপ্তানি ভালো থাকায় ২০২১ সালের আগস্টে রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়ায় ৪৮ বিলিয়ন ডলার। ওই বছরের আগস্টের পর থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক টানা ডলার বিক্রি শুরু করে। আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির ডলার বিক্রি অব্যাহত থাকলেও আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় গত বছর এপ্রিল থেকে ডলারের সংকট তৈরি হয়। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংক ধীরে ধীরে দাম ও রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি বাড়াতে থাকায় রিজার্ভ কমতে থাকে।

জানা যায়, গত ২০২১-২২ অর্থবছর শেষে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৩ হাজার ৩৪০ কোটি ডলার। বর্তমানে তা ৩ হাজার কোটি ডলারের আশে-পাশে নেমে এসেছে। তবে রোজা এবং ঈদকে ঘিরে গত মাস থেকে প্রবাসী আয়ে কিছুটা ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি লক্ষ্য করা গেছে। মার্চ মাস শেষে প্রবাসীরা পাঠিয়েছে ২০১ কোটি মার্কিন ডলার।

দেশের রিজার্ভের পরিমাণ কমতে থাকায় ব্যাংকগুলোতে ডলার সংকট তৈরি হয় ২০২২ সালের এপ্রিল থেকে। গত ১২ জুলাই প্রথমবারের মতো দেশের খোলাবাজারে ডলার বিক্রি হয় ১০০ টাকায়। এরপরে ক্রমান্বয়ে দাম বাড়লে-কমলেও একইবছরের ১০ আগস্ট ডলারের দাম আরও বেড়ে দাড়ায় ১২০ টাকায়। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন পদক্ষেপ হাতে নেয়। পরবর্তীতে কিছুটা স্বস্তি ফেরে খোলা বাজারের ডলারের দামে। বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংক নির্ধারিত ১০৭ টাকায় ডলার বিক্রি হচ্ছে। যদিও খোলা বাজারে এর থেকে সামান্য বেশিতে বিক্রি করা হচ্ছে ডলার।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য মতে, বাংলাদেশি একজন নাগরিক ভ্রমণের জন্য বছরে ১২ হাজার ডলার সঙ্গে নিতে পারবে। চিকিৎসার জন্য অনুমতি ছাড়া ১০ হাজার ডলার এবং শিক্ষার জন্য গ্রেড ১২-এর নিচে বাইরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যত লাগবে তত নিতে পারবে। যা ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে কার্যকর করা হয়েছে।

এর আগে কোনো পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই ১০ হাজার ডলার বা সমমূল্যের অন্য বিদেশি মুদ্রা সাথে রাখা যাবে। আগে এই সীমা ৫ হাজার ডলার ছিল।

বিপি/ইকবাল আজাদ