দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলের (ইডিএফ) আকার প্রতিনিয়ত কমাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত ছয় মাসের ব্যবধানে ইডিএফের আকার কমেছে ২৪০ কোটি ডলার। তাতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত মেনে ইডিএফের আকার কমিয়ে বর্তমানে ৪৬০ কোটি ডলারে নামিয়ে আনা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

জানা যায়, মে মাসে ইডিএফের আকার ২৩ কোটি ডলার কমিয়ে ৪৭৭ কোটি ডলারে নামিয়ে আনা হয়েছিল। এরপরে গত রোববার আরও ১৭ কোটি ডলার কমানো হয়েছে। ফলে ইডিএফ ফান্ডের আকার ৪৬০ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে।

বাণিজ্য প্রতিদিনের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

এদিকে চলতি বছরের জানুয়ারির প্রথম দিকে এই ইডিএফের আকার ছিল ৭ বিলিয়ন ডলার। এরপর মার্চের মাঝামাঝি সময়ে এর আকার কমিয়ে ৫৫০ কোটি ডলারে নামানো হয়। ইডিএফের আকার এপ্রিল মাসে ৫০০ কোটি ডলারে এবং মে মাসে ৪৭৭ কোটি ডলারে কমিয়ে আনা হয়।

আইএমএফের ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণের অন্যতম প্রধান শর্ত ছিল রিজার্ভের অর্থ দিয়ে গঠিত ৭ বিলিয়ন ডলার ইডিএফের আকার ধাপে ধাপে কমিয়ে রিজার্ভ বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে ইডিএফের এই ৭ বিলিয়ন, আরও কয়েকটি তহবিল ও শ্রীলঙ্কাকে দেয়া ২০ কোটি ডলার ঋণ এবং দু-তিনটি প্রকল্পে রিজার্ভ থেকে দেয়া ঋণসহ মোট ৮ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ থেকে আলাদা করে নিট রিজার্ভের হিসাব করার শর্ত দিয়েছিল আইএমএফ। এসব শর্ত মানতে গিয়ে ইডিএফ ফান্ড কমানো হচ্ছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতি অনুসারে, যেসব রপ্তানিকারক ইডিএফ থেকে ঋণ নেওয়ার পর দেশে রপ্তানি আয় প্রত্যাবাসন করছেন না, তারা এ তহবিল থেকে নতুন ঋণ পাওয়ার অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন।

আইএমএফের মতে, কোনো দেশের আপদকালীন সংকট মেটানোর জন্য রিজার্ভ রাখা হয়। কিন্তু এই ৮ বিলিয়ন ডলার বাংলাদেশ চাইলেই যখন-তখন খরচ করতে পারবে না। বাংলাদেশ ব্যাংক বা সরকার সেই শর্ত মেনে নিয়েছিল। এজন্য চলতি জুন থেকে আইএমএফের শর্ত মেনে নিট রিজার্ভের হিসাব প্রকাশ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইডিএফের সাম্প্রতিক আকার কমানোর তেমন প্রভাব পড়বে না ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার তারল্যে। আগের মাসগুলোর চেয়্যে ব্যাংকগুলোতে তারল্য পরিস্থিতি ভালো অবস্থানে রয়েছে উল্লেখ করে তিনি জানান, জুলাইয়ে পরিস্থিতির আরো উন্নতি হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে ১ হাজার ২৭৩ কোটি ডলার বিক্রি করা হয়েছে। ফলে জুনের প্রথম দিন পর্যন্ত রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২৯ দশমিক ৮৭ বিলিয়ন ডলার। গতকাল আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজারে ডলারের সর্বোচ্চ দর ছিল ১০৭ টাকা ৮০ পয়সা, সর্বনিম্ন ১০৭ টাকা ৭৫ পয়সা।

বিভিন্ন শর্ত জুড়ে দিয়ে গত ৩০ জানুয়ারি বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন করে আইএমএফ। এর মধ্যে বর্ধিত ঋণ সুবিধা ও বর্ধিত তহবিল সুবিধার আওতায় ৩৩০ কোটি মার্কিন ডলার এবং নতুন গঠিত তহবিল রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ফ্যাসিলিটির (আরএসএফ) আওতায় ১৪০ কোটি ডলারের ঋণ অনুমোদন করা হয়েছে। ঋণ প্রস্তাব অনুমোদনের তিন দিন পরই প্রথম কিস্তিতে ছাড় করে ৪৭ কোটি ৬২ লাখ ৭০ হাজার ডলার। ২০২৬ সাল পর্যন্ত সাড়ে তিন বছরে মোট সাত কিস্তিতে ঋণের পুরো অর্থ দেবে আইএমএফ।

রিজার্ভ কমে ২৯ বিলিয়ন ডলার
ডলার সংকটের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে আবারও ৩০ বিলিয়ন (তিন হাজার কোটি ডলার) নিচে নেমে এসেছে। গত ২৫ মে দিনের শুরুতে রিজার্ভ ছিল দুই হাজার ৯৯৩ কোটি ডলার। এরপর ব্যাংকগুলোর কাছে বিক্রি করা হয় পাঁচ কোটি ৯০ লাখ ডলার। ফলে দিন শেষে রিজার্ভ আরো কমেছে।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) মার্চ মাসে অন্তত ২২ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন ডলারের নিট রিজার্ভ রাখার লক্ষ্য নির্ধারণ করে দিয়েছিল বাংলাদেশকে। তবে ওই লক্ষ্য পূরণ হয়নি। আগামী জুনে মজুদের পরিমাণ বাড়িয়ে ২৪ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার শর্ত রয়েছে সংস্থাটির।

এ ছাড়া আগামী সেপ্টেম্বরে নিট রিজার্ভের পরিমাণ বাড়িয়ে ২৫ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলার এবং ডিসেম্বরে ২৬ দশমিক ৪১ বিলিয়ন ডলারের লক্ষ্য ঠিক করে দিয়েছে আইএমএফ। এর আগে চলতি মাসের শুরুতে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নে (আকু) মার্চ-এপ্রিল সময়ের আমদানি বিল বাবদ ১১৮ কোটি ডলার পরিশোধের পর রিজার্ভ কমে ৩০ বিলিয়নের নিচে নেমেছিল। এরপর বিশ্বব্যাংকের ঋণের টাকা আসায় তা খানিকটা বাড়ে।

বিপি/আজাদ