গাজীপুরের কালিয়াকৈরে শিক্ষক বশির উদ্দিনকে স্কুলের অফিস কক্ষ থেকে টেনে হিঁচড়ে লাঞ্চিত করে এবং পিটিয়ে আহত করার অভিযোগ উঠেছে গাজীপুর জেলা যুবদল নেতা ও তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে। এ সময় শিক্ষককে রক্ষা করতে এগিয়ে আসলে হামলাকারীরা স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র রিজভী আহমেদ রাজীবকে (৩৫) পিটিয়ে গুরুতর আহত করে।
রোববার (১২ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ১০ টায় উপজেলার চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকার বঙ্গবন্ধু সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।
আহত বশির উদ্দিন বঙ্গবন্ধু সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহাকারী শিক্ষক। রিজভী আহমেদ রাজীব একই উপজেলার আটাবহ ইউনিয়নের বিষাইদ গ্রামের হেলাল উদ্দিনের ছেলে। বিদ্যালয়ের দফতরিসহ আশপাশের লোকজন তাদেরকে উদ্ধার করে কালিয়াকৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে চিকিৎসাধীন রাখে। খবর পেয়ে কালিয়াকৈর থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।
অভিযুক্ত রাশেদুল ইসলাম রনি উপজেলার আটাবহ ইউনিয়নের জালশোকা গ্রামের আজিবরের ছেলে। সে গাজীপুর জেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক পদে দায়িত্বে রয়েছেন।
বঙ্গবন্ধু সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহাকারী শিক্ষক বশির উদ্দিন জানান, সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক রিপন আহমেদ, যুবদল কর্মী রাকিব হাসান ও তাজিদ মিয়া বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষে প্রবেশ করে। তারা শিক্ষককে টেনে হিঁচড়ে লাঞ্চিত করে। পরে তারা শিক্ষককে কিল, ঘুষি দিয়ে আঘাত করতে করতে গেইটের বাহিরে নিয়ে যায়। সেখানে গাজীপুর জেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদুল ইসলাম রনিসহ তার ১৫/২০ জন সহযোগী লাঠিসোটা নিয়ে অপেক্ষা করে। পরে গেইটে শিক্ষককে মারধর করতে দেখে স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র রিজভী আহমেদ রাজীব রক্ষা এগিয়ে আসলে হামলাকারীরা তাকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। পরে বিদ্যালয়ের দফতরিসহ আশপাশের লোকজন তাদেরকে উদ্ধার করে কালিয়াকৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে চিকিৎসাধীন রাখে।
তিনি আরও জানান, গাজীপুর জেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদুল ইসলাম রনির নেতৃত্বে গত ১৪ আগস্ট কয়েকজন লোক কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা এলাকায় বঙ্গবন্ধু সরকারি হাই স্কুলে যায়। সেখানে গিয়ে তারা নানা অভিযোগ তুলে ওই স্কুলের সহকারী শিক্ষক মোহাম্মদ বশির মিয়াকে পদত্যাগপত্রে জোরপূর্বক স্বাক্ষর করায়। ওই সময় তারা তাকে হুমকি দিয়ে স্কুল থেকে বের করে দেয়। পরদিন ১৫ আগস্ট ওই শিক্ষক কালিয়াকৈর থানায় একটি সাধারন ডায়েরি (জিডি) করেন।
ওই স্কুলের অপর এক শিক্ষক নাম প্রকাশ করার না করার শর্তে জানান, ওই ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হলে কমিটি শিক্ষকের পক্ষে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়। ওই প্রতিবেদন সন্তোষজনক না হলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর পুনঃতদন্তের জন্য আবেদন করেন গাজীপুর জেলা যুবদলের যগ্ম-আহবায়ক রাশেদুল ইসলাম রনিসহ সাতজনের একটি দল। গত ১ জানুয়ারি কালিয়াকৈর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মিজানুর রহমানকে প্রধান করে অপর একটি পুনঃতদন্ত কমিটি গঠণ করা হয়।
বঙ্গবন্ধু সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনন্দ কুমার বলেন, শিক্ষক বশির উদ্দিনের বিষয়ে তদন্ত চলমান থাকা অবস্থায় তাকে স্কুলের অফিস কক্ষ টেনে হিঁচড়ে কিল, ঘুষি মারতে মারতে গেটের বাহিরে নিয়ে হামলার ঘটনাটি দুঃখজনক। ওরা আমাকেও বকাঝকা এবং হুমকি দিয়েছে। আমিও আতঙ্কে আছি। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।
গাজীপুর জেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদুল ইসলাম রনি বলেন, ঘটনাস্থলে আমি ছিলাম না এবং শিক্ষককে লাঞ্চিত ও মারধরের বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। পরে শুনতে পেয়েছি বশির স্যারকে কারা যেন মারধর করে লাঞ্চিত করেছে।
গাজীপুর জেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোখলেছুর রহমান ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে বলেন, এ ঘটনায় সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে আমরা কঠোর কর্মসূচী গ্রহণ করব।
গাজীপুর জেলা যুবদলের আহ্বায়ক আতাউর রহমান মোল্লা বলেন, শিক্ষককে মারধরের ঘটনায় যুবদলের নেতাকর্মীরা জড়িত থাকলে দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কালিয়াকৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাউসার আহাম্মেদ জানান, আমি জেলায় আইনশৃঙ্খলা মিটিংয়ে ছিলাম। শুনেছি ওই শিক্ষককে বহিরাগত কয়েকজন লোক শারীরিকভাবে লাঞ্চিত এবং মারধর করেছে। হামলার বিষয়টি আমরা দেখছি এবং থানা পুলিশকেও জানানো হয়েছে।
এম জি