Top

শ্রীপুরে পোশাক শ্রমিককে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, গ্রেফতার ৩

১১ জানুয়ারি, ২০২৫ ৯:০০ অপরাহ্ণ
শ্রীপুরে পোশাক শ্রমিককে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, গ্রেফতার ৩
গাজীপুর প্রতিনিধি :

গাজীপুরের শ্রীপুরে সহকর্মী পোশাক শ্রমিক নাজমুল হককে (২৭) বখাটেদের হাত থেকে মুক্ত করতে গিয়ে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছে পোশাক শ্রমিক (২৩)।

বখাটেরা ওই পোশাক শ্রমিককে ৪০ ঘণ্টা আটকে রেখে সঙ্ঘবদ্ধ ধর্ষণ করে। এসময় তার সহকর্মী পোশাক শ্রমিককেও বখাটেরা নির্যাতন করে। শ্রীপুর পৌরসভার কেওয়া পূর্বখন্ড (ফখর উদ্দিন প্রিন্ট কারখানা গেট) নজরুল উকিলের ভাড়া বাসায় এ ঘটনা ঘটে।

শনিবার (১১ জানুয়ারি) ভুক্তভোগী নারী চার জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত তিনজনসহ মোট ৭ জনকে অভিযুক্ত করে শ্রীপুর থানায় মামলা দায়ের করে।

শ্রীপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (অপারেশন) নয়ন কর ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান এ ঘটনায় তিনজনকে শ্রীপুরের বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

নির্যাতনের শিকার পোশাক শ্রমিক নাজমুল হক টাঙ্গাইল জেলার মধুপুর উপজেলার কোনাবাড়ী গ্রামের আব্দুল জলিলের ছেলে। সে শ্রীপুর পৌরসভার মাধখলা এলাকার মাহমুদল্লাহর বাড়ীতে ভাড়া থেকে স্থানীয় ইশরাক স্পিনিং মিল কারখানায় চকরী করে।

আসামীরা হলো শ্রীপুর পৌরসভার কেওয়া দক্ষিন খন্ড এলাকার মৃত মিজানুর রহমানের ছেলে আশরাফুল ইসলাম (২৯), উপজেলার কাওরাইদ (মোড়ল পাড়া) এলাকার মোশারফের ছেলে সাগর (২৫), কেওয়া দক্ষিন খন্ড (গারোপাড়া) এলাকার ইয়াসিন (২৪), নেত্রকোনা সদর উপজেলার হাটখোলা বাজার এলাকার হাশেম ইসলামের ছেলে মনিরুল ইসলাম নিরব (১৮) এবং তাদের সহযোগী অজ্ঞাত ৩ জন। চতুর্থ আসামী মনিরুল ইসলাম নিরব কেওয়া পূর্ব খন্ড এলাকার নজরুল ইসলামের বাড়ীর ভাড়াটিয়া।

গ্রেফতারকৃতরা হলো উপজেলার কাওরাইদ (মোড়ল পাড়া) এলাকার মোশারফের ছেলে সাগর (২৫), শ্রীপুর পৌরসভার কেওয়া দক্ষিন খন্ড এলাকার মৃত মিজানুর রহমানের ছেলে আশরাফুল ইসলাম (২৯) এবং নেত্রকোনা সদর উপজেলার হাটখোলা বাজার এলাকার হাশেম ইসলামের ছেলে মনিরুল ইসলাম নিরব (১৮)।

থানায় দায়ের করা মামলার এজাহারে ভিকটিম উল্লেখ করেন, নির্যাতনের শিকার নাজমুল হক ও আমি একই কারখানায় চাকরি করি। বুধবার (৮ জানুয়ারি) আমি বাসায় ছিলাম। ওইদিন বিকাল ৩টায় নাজমুল আমাকে ফোন দিয়ে বলে আমার সমস্যা হয়েছে, তুমি ফখর উদ্দিন কারখানার মোড়ে বটগাছের নিচে আস। তার ফোন পেয়ে আমি বিকেল সোয়া ৩ টার দিকে বট গাছের নিচে যাওয়া মাত্রই আসামী সাগর আমার পরিচয় জিজ্ঞাসা করে। পরিচয় দেওয়ার পর সে আমাকে ফখর উদ্দিন প্রিন্ট কারখানা গেট সংলগ্ন স্থানীয় নজরুল উকিলের বাসায় নিয়ে যায়। ওই বাসায় গিয়ে দেখি আমার সহকর্মী নাজমুল হককে আসামীরা মারধর করছে। আমি তাদেরকে মারধর করতে নিষেধ করি এবং নাজমুলকে ছেড়ে দিতে বলি। তাদের কাছ থেকে নাজমুলকে নিয়ে যেতে হলে ৫০ হাজার টাকা দাবী করে। আমি তাদের দাবীকৃত ৫০ হাজার টাকা দিতে রাজি না হলে রেগে গিয়ে আমাকে পাশের রুমে নিয়ে হত্যার হুমকি দিয়ে আসামী আশরাফুল ও সাগর আমাকে জোরপূর্বক পালাক্রমে ধষর্ন করে। আশরাফুল ও সাগর আমাকে ঘরে রেখে বের হলে অজ্ঞাত ৩জন আসামী ঘরে ঢুকে আমাকে পালাক্রমে ধর্ষন করে। পরে তারা আমাকে ওই ঘরে আটক রেখে শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) সকাল ৯টায় আরও ১০ হাজার টাকার জন্য মোবাইল ফোন রেখে আমাকে ছেড়ে দেয়। পরে মনিরুল ইসলা নিরব একটি অটোরিক্সা ভাড়া করে দিলে আমি বাসায় গিয়ে ঘটনাটি আমার স্বামী ও বাড়ীর লোকজনের সাথে পরামর্শ করে শনিবার (১১ জানুয়ারি) থানায় মামলা দায়ের করি।

নির্যাতনের শিকার পোশাক শ্রমিক নাজমুল হক জানান, বুধবার (৮ জানুয়ারি) বিকেল ৪টায় বেতনের টাকা তুলে বাসায় ফিরছিলেন। সহকর্মী ইয়াছিন আমাকে ফোন করে বলে ফখরুদ্দিন মোড়ে যেতে। ওই স্থানে গেলে ইয়াছিন ও তার সহযোগীরা আমাকে একটি বাড়ীতে নিয়ে পিটিয়ে নির্যাতন করে দুই লাখ টাকা দাবি করে। আমার সাথে থাকা বেতনের সাড়ে ১৪ হাজার টাকা নিয়ে যায় তারা। পরে আরো টাকার জন্য মারধর করলে আমি দুই ব্যক্তির কাছ থেকে বিকাশের মাধ্যমে আরো ৪ হাজার টাকা তাদেরকে এনে দেই।

শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জয়নাল আবেদীন মন্ডল জানান, মামলা রুজুর পরই অভিযান চালিয়ে তিনজন আসামীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদেরকে রবিবার (১২ জানুয়ারি) গাজীপুর আদালতে পাঠানো হবে।

বিএইচ

শেয়ার