Top
সর্বশেষ

করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় আরো ৫২ চিকিৎসক সংযুক্ত হলেন

০৬ জুলাই, ২০২১ ১১:৩৫ পূর্বাহ্ণ
করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় আরো ৫২ চিকিৎসক সংযুক্ত হলেন
কুষ্টিয়া প্রতিনিধি :

নাজুক করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের ৫২ জন চিকিৎসককে কুষ্টিয়া, মেহেরপুর ও ঝিনাইদহ হাসপাতালে সংযুক্ত করা হয়েছে। সোমবার রাতে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা: তাপস কুমার সরকার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এর মধ্যে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট কুষ্টিয়া করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে ২৬ জন, মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে ১৫ জন এবং ঝিনাইদহ জেনারেল হাসপাতালে ১১ জন চিকিৎসককে সংযুক্ত করা হয়েছে। সোমবার স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের এক আদেশে একযোগে ৫২ চিকিৎসককে তিন হাসপাতালে সংযুক্ত করার কথা বলা হয়েছে।

সূত্র জানায়, কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজে বর্তমানে ৯২ জন চিকিৎসক কর্মরত রয়েছেন। আর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে বর্তমানে ৪৩ জন চিকিৎসক কর্মরত রয়েছেন। নতুন ২৬ জন যোগ হওয়ায় বর্তমানে কুষ্টিয়া হাসপাতালে চিকিৎসকের সংখ্যা দাঁড়ালো ৬৯ জন। খুলনা বিভাগের বিশেষ করে কুষ্টিয়া জেলার সার্বিক করোনা পরিস্থিতি ক্রমেই অবণতি হচ্ছে। করোনা আক্রান্ত এবং উপসর্গ নিয়ে এখানে মৃত্যুর মিছিল ক্রমেই দীর্ঘ হচ্ছে। বাড়ছে শনাক্তের সংখ্যাও।

সোমবার রাতে জেলা প্রশাসনের প্রদত্ত তথ্য মতে, জেলায় গত ২৪ ঘন্টায় ১২২১ টি স্যাম্পল পরীক্ষায় এ যাবৎ কালের সর্বোচ্চ ৪৩২ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। আর মৃত্যু হয়েছে ২০ জনের। এর মধ্যে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ১৭ জন। ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট কুষ্টিয়া করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে আক্রান্ত এবং উপসর্গ নিয়ে বর্তমানে প্রায় ৩শ রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। শয্যা না থাকায় এখন রোগীদের মেঝেতে ও করিডোরে রাখতে হচ্ছে। প্রতিদিনই হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত এবং উপসর্গ নিয়ে আসা রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।

এদিকে রোগীর চাপ অত্যাধিক বৃদ্ধি পাওয়ায় হাসপাতালে অক্সিজেন সংকট দেখা দিচ্ছে। এ অবস্থায় জেলার বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন। হাসপাতালের সংকট মোকাবেলায় সোমবার বিকেলে বিআরবি গ্রুপের পক্ষ থেকে কুষ্টিয়া হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ১শ টি অক্সিজেন সিলিন্ডার, ১০ পিস হাই ফ্লো নজাল ক্যানুলা, ৬৬ পিস অক্সিমিটার ও ১শ পিস অক্সিজেন ফ্লু মিটার প্রদান করা হয়।

এ সময় বিআরবি গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক শেখ শামসুজ্জামান ও দীপেন কুমার দাশ জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মো. সাইদুল ইসলাম ও হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আবদুল মোমেনের উপস্থিতিতে এ সব চিকিৎসা সামগ্রী হস্তান্তর করেন। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার খাইরুল ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শারমিন আক্তার, হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) তাপস কুমার সরকার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

একই সাথে কুষ্টিয়া হাসপাতালের জন্য জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির পক্ষ থেকে আরও ৫০টি, বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা সেতুর চেয়ারম্যান আবদুল কাদেরের পক্ষ থেকে ১০টি ও বেসরকারি ব্যাংক ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের পক্ষ থেকে ১০টি অক্সিজেন সিলিন্ডার প্রদান করা হয়। এর আগে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও কুষ্টিয়া সদর আসনের সংসদ সদস্য মাহবুব উল আলম হানিফ ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা তিন দফায় কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের হতে ৩শ অক্সিজেন সিলিন্ডার প্রদান করেন।

জেলা প্রশাসক সাইদুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে কুষ্টিয়া জেলায় করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। গ্রাম-গঞ্জের প্রতিটি ঘরে ঘরে এখন করোনা রোগী পাওয়া যাচ্ছে। হাসপাতালে রোগীর চাপ ব্যাপকভাবে বেড়ে যাওয়ার কারণে অক্সিজেনের সংকট দেখা দিচ্ছে। সংকটের কথা শুনে বিআরবি গ্রুপ এগিয়ে এসেছেন। নি:সন্দেহে এটি প্রশংসার দাবি রাখে। বর্তমান পরিস্থিতিতে সবাই সম্মিলিতভাবে এগিয়ে না আসলে কোনভাবেই এ সংকট মোকাবেলা করা সম্ভব হবে না বলে তিনি মন্তব্য করেন।

এদিকে কুষ্টিয়া পিসিআর ল্যাবে গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ১২২১ টি নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে নতুন করে ৪৩২ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। যা এ যাবৎ কালের সর্বোচ্চ শনাক্তের ঘটনা। শনাক্তের হার ৩৫ দশমিক ৩৮ ভাগ। এ নিয়ে জেলায় করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা গিয়ে দাঁড়ালো ৯ হাজার ১৯৮ জনে। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ৫ হাজার ৯২৬ জন। মৃত্যের সংখ্যা গিয়ে দাঁড়িয়েছে ২৬২ জনে। নতুন করে শনাক্ত হওয়া ৪৩২ জনের মধ্যে রয়েছেন কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় ১০৯ জন, দৌলতপুর উপজেলায় ৭৩ জন, কুমারখালী উপজেলায় ৭৮ জন, ভেড়ামারা উপজেলায় ১০২ জন, মিরপুর উপজেলায় ৩৬ জন ও খোকসা উপজেলায় ৩৪ জন। এখন পর্যন্ত জেলায় ৬৬হাজার ৭৮৯ জনের নমুনা পরীক্ষার জন্য নেওয়া হয়েছে। নমুনা পরীক্ষার প্রতিবেদন পাওয়া গেছে ৬৪ হাজার ২০২ জনের।

বাকিরা নমুনা পরীক্ষার প্রতিবেদনের অপেক্ষায় রয়েছেন। বর্তমানে কুষ্টিয়ায় সক্রিয় করোনা রোগীর সংখ্যা ৩ হাজার ১০ জন। এদের মধ্যে হাসপাতালে আইসোলেশনে চিকিৎসাধীন আছেন ২৬২ জন এবং হোম আইসোলেশনে আছেন ২ হাজার ৭৪৮ জন।

শেয়ার