Top
সর্বশেষ

ঠাকুরগাঁওয়ে স্কুল শিক্ষিকার রহস্যজনক মৃত্যু

১৮ জুলাই, ২০২১ ১১:৫৪ পূর্বাহ্ণ
ঠাকুরগাঁওয়ে স্কুল শিক্ষিকার রহস্যজনক মৃত্যু
ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি :

ঠাকুরগাঁও শহরে লাস্যময়ী সাবেক স্কুল শিক্ষিকা সান্তনা রায় মিলির (৪৯) রহস্যজনক মৃত্যুর এখনো কোন কুল কিনারা করতে পারেনি পুলিশ। তবে পুলিশ চাঞ্চল্যকর এই রহস্যজনক মৃত্যুর প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান করছে। পোস্টমর্টেম রিপোর্ট পেলেই তদন্ত সেই পথে শুরু করবে বলে জানিয়েছে পুলিশ। মিলি শহরের প্রারম্ভিক কিন্ডার গার্টেনের সাবেক এক শিক্ষিকা এবং শহরের তাঁতিপাড়ার সমীর কুমার রায়ের স্ত্রী। গত ৮ জুলাই শহরের শহীদ মোহাম্মদ আলী সড়কের পাশে মিলির বাড়ির কাছেই একটি গলিতে মিলির লাশ পাওয়া যায়। তার শরীরের বিভিন্ন অংশ আগুনে পোড়া ও ঝলসানো ছিল। এদিন সকালে ঐগলিতে লাশটি পরে থাকতে দেখে ৯৯৯ এ খবর দেয় এলাকাবাসী। পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে লাশটি উদ্ধার করে। পরে ময়না তদন্তের জন্য লাশটি ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করা হয়। কিন্তু মর্গের ডোম করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ায় লাশ দিনাজপুর মর্গে পাঠানো হয়।

নিহত শান্তনা রায়ের স্বামী সমীর কুমার রায় পঞ্চগড় চিনিকলের একজন চাকুরিজীবী। শহরের লোটো জুতার দোকানের শোরূম ও রুপালী ব্যাংক ভবনের মালিক তিনি। তাদের এক ছেলে ও এক মেয়ে সন্তান রয়েছে। দুই সন্তানেরই বিয়ে হয়ে গেছে। এলাকাবাসী জানান, মিলি ছিলেন সুন্দরী, সদালাপী, লাস্যময়ী ও সাজগোজ করে চলাফেরা করতেন। মিলি সদর উপজেলার রুহিয়া কলেজের শিক্ষক প্রয়াত নিরঞ্জন চক্রবর্তীর মেয়ে। তার পিতার পরিবারের বেশ সুনাম রয়েছে এলাকায়। তবে সংসারে মিলির সাথে তার স্বামী সমীর কুমারের মধ্যে সম্পর্ক কিরূপ ছিল এনিয়ে প্রতিবেশিরা কেউ মুখ খুলছেননা। পুলিশ জানায়, মিলির এই অনাকাঙ্খিত ও রহস্যজনক মৃত্যু নিয়ে তার স্বামী সন্তান ও স্বজনদের অভিযোগ দেওয়ার জন্য বলা হলেও তারা কোন রকম অভিযোগ দিতে অস্বীকৃতি জানান। লাশের পাশে তার স্বামী ও সন্তান ছিলেন বেশ স্বাভাবিক।

ঘটনার দুদিন পর ১০ জুলাই ঠাকুরগাঁও সদর থানার এসআই নির্মল কুমার রায় বাদি হয়ে থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় বলা হয়, গত ৮ জুলাই সকালে পুলিশের জাতীয় সেবা নম্বর ৯৯৯ থেকে ফোন পেয়ে শহরের শহীদ মোহাম্মদ আলী সড়কের দু’টি বিপণিবিতানের মাঝের ফাঁকা সরু গলি থেকে মিলি নামে এক গৃহবধূর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। সুরতহাল রিপোর্টে মিলির শরীরের বিভিন্ন জায়গা পোড়া ও ঝলসানো অবস্থায় পাওয়া যায় বলে উল্লেখ করা হয়। তার ভ্রুর চুল, চোখের পাতা আংশিক পোড়া ছিল। এছাড়াও কোমরের নিচ অংশ হতে পায়ের তালুর উপরের অংশের বিভিন্ন জায়গায় পোড়ানো ছিল। তার পোশাকের বেশিরভাগ অংশ পোড়া অবস্থায় ছিল। মৃতদেহের আশপাশে পরে থাকা সমস্ত আলামত ও আনুষাঙ্গিক দ্রব্যাদি ক্রাইমসিন টিম সিআইডির মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয় এবং সেগুলো জব্দ করা হয়। মামলায় আরো বলা হয়, গৃহবধু সান্তনা রায় ওরফে মিলি চক্রবর্তীর মৃত্যুর প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনের জন্য মামলার বাদি ওই গৃহবধুর স্বামী, ছেলে, ভাইসহ আত্মীয় স্বজন ও এলাকার লোকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।

পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে মৃত গৃহবধূর স্বামী ও তার ছেলে জানান, ৭ জুলাই রাত ১০টার দিকে খাওয়া দাওয়া শেষ করে বাড়ির লোকজন ঘুমিয়ে পড়েন। পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে বাড়ির লোকজন মিলির মৃত্যুর খবর পান। ঠাকুরগাঁও সদর থানার ওসি তানভিরুল ইসলাম বলেন, ময়নাতদন্তের জন্য গৃহবধূর লাশ ঠাকুরগাঁও সিভিল সার্জনের মাধ্যমে দিনাজপুরের এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান বরাবর পাঠানো হয়েছে। পুলিশের দায়ের করা মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, গৃহবধু সান্তনা রায় ওরফে মিলি চক্রবর্তীকে কে বা কারা হত্যা করে ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য তার মরদেহ তাঁতিপাড়াস্থ বাটা শোরুম এবং নির্মাণাধীন ভবনের মাঝে সরু গলিতে ফেলে রাখে। প্রাথমিকভাবে এমন তথ্য পাওয়ার পর মৃতের আত্মীয় স্বজনদেরকে অভিযোগ দেয়ার জন্য বলা হয়। কিন্তু তারা অভিযোগ দিতে অস্বীকৃতি জানায়। তবে ঘটনার দিন অর্থাৎ ৮ জুলাই নিহতের স্বামী সমীর কুমার রায় বলেছিলেন, রাতে একসাথে খাওয়া করে ঘুমিয়ে পড়ি। সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি মিলি বিছানায় নেই। পরে খোঁজাখুজি বাড়ির পাশের গলিতে তার লাশ দেখতে পাই। কিভাবে এমনটা হলো কিছুই বলতে পারছি না। তবে তিনি দাবি করে বলেন, মিলি চক্রবর্তী দীর্ঘদিন ধরে মানষিক রোগে ভুগছিলেন।

স্থানীয়রা জানান, গৃহবধু সান্তনা রায় ওরফে মিলি চক্রবর্তী খুব ভালো একজন মানুষ ছিলেন, তিনি স্বাভাবিক ছিলেন। কখনও তিনি অস্বাভাবিক আচরণ করেননি। তার মৃত্যুটি কেউ মেনে নিতে পারছে না। তাই এই মৃত্যুর মূল রহস্য উদঘাটনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্বোচ্চ ভুমিকা রাখবে বলে স্থানীয়রা আশাবাদি।

মামলার বাদি সদর থানায় উপ-পরিদর্শক (এসআই) নির্মল কুমার রায় বলেন, মিলি চক্রবর্তীর লাশ উদ্ধারের ঘটনাটি আমার কাছে সন্দেহজনক মনে হয়েছে। মনে হয়েছে কে বা কারা তাকে হত্যা করেছে এবং ঘটনাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য লাশ ঐ দুই বিপণিবিতানের মাঝখানের সরু গলিতে ফেলে রেখেছে। তাই সত্য ঘটনা উদঘাটনের জন্যই মামলাটি করেছি। এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও সদর থানার ওসি তানভিরুল ইসলাম বলেন, মিলি চক্রবর্তীর মৃত্যুর রহস্য উদঘাটন করতে আমরা কাজ করছি। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট এখনও আমরা পাইনি, সেটি পেলে অনেকগুলো বিষয় পরিষ্কার হয়ে যাবে। আশা করি খুব অল্পসময়ের মধ্যে মিলি মৃত্যুর রহস্য উন্মোচন হবে এবং এ ঘটনার সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে।

শেয়ার