Top

যমুনার চরে দুর্যোগ সহনীয় ভেড়া পালন

১৭ নভেম্বর, ২০২১ ৩:১৮ অপরাহ্ণ
যমুনার চরে দুর্যোগ সহনীয় ভেড়া পালন
গাইবান্ধা প্রতিনিধি :

গাইবান্ধার দুর্যোগ কবলিত যমুনা নদীর বালু চরে এখন দুর্যোগ সহনীয় ভেড়া পালন করে সাবলম্বী হচ্ছে চরের নারীরা। উন্নত জাত, দুর্যোগ সহনীয় ও প্রজনন ক্ষমতা বেশী হওয়ায় ভেড়া পালনে ঝুঁকে পড়েছে চরের নারীরা। এতে সংসারের চাহিদা মিটিয়ে আর্থসামাজিক উন্নয়নের স্বপ্ন দেখছে তারা।

মোল্লার চরের নব নির্বাচিত চেয়ারম্যান সাইদুজ্জামান বলেন গাইবান্ধার তিস্তা যমুনা ও ব্রহ্মপুত্র নদীর বুক জুড়ে ১শ ৬৫ টি চর রয়েছে। গাইবান্ধার, ফুলছড়ি, সাঘাটা, সুন্দরগঞ্জ সহ চার উপজেলার এসব চরে অন্তত ৩ লাখ মানুষ বাস করে। বিশেষ করে তিস্তা সহ তিন নদীর দুর্গম চরাঞ্চল কাপাসিয়া,বেলকা,তারাপুর,হরিপুর। গাইবান্ধার মোল্লারচর, কামারজানি, এ্যাড়েন্ডাবাড়ি,উড়িয়া ও কঞ্চিপাড়া। সাঘাটা উপজেলার হলদিয়া,কামালেরপাড়া,সাঘাটা সদর সহ অন্তত ১৩ টি ইউনিয়ন দুর্গম চরাঞ্চল ।

চরাঞ্চলের বাসিন্দা ও উপকার ভোগী শিল্পি বেগম বলেন, এসব এলাকার প্রায় ৩ লাখ মানুষ তাদের জীবন জীবিকা যাপনে চাষাবাদ ও গবাদী পশু সম্পদের উপর নির্ভর করে । তারা সারা বছর কোন না কোন দুর্যোগ মোকাবেলা করে বুক উঁচু করে বাস করে। বিয়ে সহ অন্যান্য বিপদ কাটে গরু ছাগল হাঁস মুরগি বিক্রি করে। তার পরেও তারা সুখি মানুষ । গবাদী পশু সম্পদ হিসাবে পালন করলেও এই চর গুলোতে কোন ভেড়া পালনের প্রচলন ছিলো না। আমি একটি ভেড়া পেয়েছি কিন্তু সামান্য সময়ে আমি এখন ৫ টি ভেড়ার মালিক হয়েছি। একেকটি ভেরার ওজনেও অনেক বেশি । দুর্যোগে বিক্রি করে সংসারে খরচ বহন করবো ।

সাজেদা বেগম বলেন, ফ্রেন্ডশীপ নামের একটি সেচ্ছাসেবী সংগঠন ময়মনসিংহ কৃষি বিদ্যালয়ের গবেষণার নতুন সফলতা হিসাবে উন্নত মানের ভেড়া দিয়েছেন। যেমন উঁচু,তেমন লম্বা। দেখতে বেশ সুন্দর। অল্প সময়ে অনেক বড় হওয়ায় তাদের আনন্দের সীমা নাই। এই প্রজননের সফলতা হিসাবে ভেড়ার উন্নত জাত,অন্তত ৩০ কেজি ওজন ও বছরে ৪ বার বাচ্চা দেয়া হয়।

ফ্রেন্ডশিপ কর্মকর্তা দিবাকর বিশ্বাশ বলেন, সারা বছর বন্যা, খড়া, নদী ভাঙ্গন সহ বিভিন্ন দুর্যোগের সাথে যুদ্ধ করে চরবাসীদের বাঁচতে হয়। সে কারণে পশু সম্পদ রক্ষা করা তাদের কঠিন হয়ে পড়ে। এ ক্ষেত্রে গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার কাবিলপুর চর জুরে উন্নত জাতের ভেড়ার দেখা মেলে। ময়মনসিংহ কৃষি বিদ্যালয়ের গবেষণায় এই নতুন জাতের ভেড়া সাড়া ফেলেছে। দেশী প্রজন্মের সাথে উন্নত জাতের ভেড়ার বীজ ক্রস করে নতুন জাতের ভেড়া উৎপান করা হয়েছে। দুর্যোগ সহনশীলতা অর্জনে এই ভেড়া পালনে সহায়ক ভূমিকা রাখছে।

এই জাতের ভেড়া পালনে খরচ কম, দুর্যোগ সহনীয়, রোগবালাই কম হয় এবং আকারে বড় হয়। কাবিলপুর চরের ২শ ৪০ জন নারী ২শ ৪০টি ভেড়া দিয়ে ভেড়া পালন শুরু করেন। প্রজনন ক্ষমতা বেশী হওয়ায় ইতিমধ্যে তারা ১ টি থেকে ৮ থেকে ১০ টি করে ভেড়ার মালিক হয়েছেন। এই পরিবার গুলো এখন ভেড়া পালন করে নতুন আশার স্বপ্ন দেখছেন। সংসারের চাহিদা, ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার খরচ জুগিয়েও নিজেরা স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন ।

জেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ মাছুদার রহমান সরকার, বলেন ভেড়ার এইটা নতুন জাত। উন্নত মানের ভেড়ার সাথে ক্রস করে ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এই ভেড়া উদ্ভাবন করেছেন। চরাঞ্চলের দুযোর্গ এলাকায় এই ভেড়া চাষ করে অনেকেই অল্প সময়ে স্বাবলম্বী হতে পারে।

শেয়ার