Top

রোগী মারা যাওয়ায় হাসপাতাল ঘেরাও, ক্ষতিপূরণ দেয়ার আশ্বাস কর্তৃপক্ষের

১৮ জানুয়ারি, ২০২২ ৪:১৩ অপরাহ্ণ
রোগী মারা যাওয়ায় হাসপাতাল ঘেরাও, ক্ষতিপূরণ দেয়ার আশ্বাস কর্তৃপক্ষের
মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি :

মানিকগঞ্জে গত সোমবার দুপুরে একটি বেসরকারি হাসপাতালে সাগর খান (১৮) নামের এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় প্রায় দুই ঘন্টা হাসপাতাল ঘেরাও করেছে এলাকাবাসি ও নিহতের স্বজনেরা। পরবর্তীতে পুলিশ ঘটনাস্থলে এলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। এসময় মৃতের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেয়ার আশ্বাস দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

ঘটনাটি ঘটেছে জেলা সদরের পৌর এলাকার জয়নগর গ্রামের ডাঃ যোসেফ মেমোরিয়াল হাসপাতালে।

নিহত সাগর খান চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষায় পাস করেছে এবং সম্প্রতি কলেজে ভর্তির জন্য প্রস্তুতিও নিয়েছিলেন। সে পৌর এলাকার জয়নগর গ্রামের হারুন খান (৫০) এর ছেলে বলেও জানা যায় ।

সোমবার দুপুরে জয়নগর গ্রামের নিজ বাড়িতে হারুন খান জানান, তার ছেলে কয়েক দিন যাবৎ পেট ব্যাথার যন্ত্রণা ভোগ করছিলেন। শেষমেষ কোনো উপায়ন্তর না দেখে গত শনিবার সিদ্ধান্ত নেয় স্থানীয় হাসপাতাল ডাঃ যোসেফ মেমোরিয়াল হাসপাতালে ভর্তির। সেখানে ভর্তির পর কর্তব্যরত চিকিৎসকেরা জানান তার এ্যাপেন্ডিসাইডের সমস্যা এবং অপারেশন করতে হবে। সেই মোতাবেক অপারেশনের ব্যবস্থা নিয়ে ঐ দিন সন্ধ্যায় ওটিতে নেয়া হয় অসুস্থ সাগরকে। পরবর্তীতে এ্যানেস্থেসিয়া করে চিকিৎসক অপারেশন করতে গিয়ে দেখেন কালো রক্ত। তখনই ডাক্তাররা তার ছেলের অপারেশন বন্ধ করে দেয় এবং বলে আপনার ছেলের রক্ত খারাপ। এখানে অপারেশন হবে না। তাকে সাভারে নিতে হবে এবং হাসপাতালেরই সিদ্ধান্তে অবিভাবকদের না জানিয়ে সাভারস্থ সুপার মেডিকেল হাসপাতাল নামক একটি বেসরকারি হাসপাতালে তৎক্ষনাৎ নিয়ে যায়।

সুপার মেডিকেল হাসপাতালে নেওয়ার পর ওখানকার কর্তৃপক্ষ রোগীকে ভর্তি করেন এবং দুধ, ওষুধছাড়াও যখন যা দরকার তাই চেয়েছে। এক পর্যায়ে নিহতের স্বজনেরা চিকিৎসককে যখন বলেন, আপনারা রোগীকে যাই খাওয়ান না কেন আমাদের সামনে খাওয়ান। এই বলে গতকাল রবিবার রাতে স্বজনেরা রোগীর কাছে আইসিইউ’র ভিতর ঠুকলে হাসপাতালের লোকজন রোগীকে বেড থেকে নিচে নামিয়ে দেয় এবং বলে রোগী হাসপাতালে আনার আগেই মারা গেছেন।

এদিকে নিহত সাগরের প্রতিবেশী বিমল চন্দ্র রাজবংশী জানান, নয়টি টেস্ট করানোর পর ডাক্তাররা বলে রোগীর অপারেশন করতে হবে। সেই মোতাবেক ব্যবস্থা নিয়ে ওটিতে নেয়া হয়। তখন এলাকার অনেক লোকজন, নিহতের বন্ধুমহল, এলাকার মহিলারা বাইরে অপেক্ষা করতে ছিলো। অনেকক্ষণ হয়ে যাওয়ার পর যখন দেখা যায় রোগীকে আর বের করে না তখন সবাই জানতে চায় রোগীর কি হয়েছে? এলাকা বাসির চিল্লাচিল্লিতে ডাক্তার বাইরে আসে এবং তারা বলে রোগীর রক্ত কালো হয়ে গেছে। তাকে এখানে অপারেশন করা সম্ভব না।

পরবর্তীতে সাভারের হাসপাতালে নিলে ওখানকার চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। সেই সাথে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আরও বলেন, এতোদূরে রোগীকে এনেছেন কেন? আপনাদের কাছে কি কোনো ভালো হাসপাতাল ছিলো না? মুলত তাদের ভাষ্যমতে রোগী ডাঃ যোসেফ মেমোরিয়াল হাসপাতালেই মারা গেছেন।

অপরদিকে নিহতের সঠিক চিকিৎসা না পাওয়ায় ওই ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে বলেও দাবি জানিয়েছেন স্বজনেরা । এই দায় থেকে রক্ষা পেতেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মৃত সাগরকে ঢাকাস্থ সাভারের একটি হাসপাতালে স্থানান্তর করেছে।

চিকিৎসকের অবহেলা ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অনিয়মের অভিযোগ এনে সোমবার বেলা ১২টা থেকে দুইটা পর্যন্ত জয়নগর এলাকায় ওই হাসপাতাল ঘেরাও করেন মৃত সাগরের বিক্ষুব্ধ স্বজন, সহপাঠী ও এলাকাবাসি। এক পর্যায়ে হাসপাতাল ভাঙচুরের চেষ্টাও চালানো হয়। এ সময় ঘটনাস্থলে পুলিশ এসে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করেন এবং তাদের অনুরোধে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসি হাসপাতাল প্রাঙ্গণ ত্যাগ করেন।

ডাঃ যোসেফ মেমোরিয়াল হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হাসপাতালের সার্জন ও অ্যানেস্থেসিয়ার ব্যবস্থা নেই। অস্ত্রোপচারের সময় সাধারণত সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের ডেকে আনা হয়। সে সময় সাগরের এ্যাপেন্ডিসাইটিস’র অস্ত্রপচারের দায়িত্বে ছিলেন মানিকগঞ্জ সদরের ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের সার্জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আরিফুর রহমান এবং শিক্ষানবিশ (ইন্টার্নি) এ্যানেস্থেসিয়া চিকিৎসক আবদুল মোমেন। মোমেন রংপুরের বেসরকারি প্রাইম মেডিকেল কলেজ থেকে সদ্য এমবিবিএস পাশ করেছেন।

এবিষয়ে মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট সদর হাসপাতালের সার্জন চিকিৎসক আরিফুর রহমান বলেন, রোগীর স্বাস্থ্যগত সব পরীক্ষা রিপোর্ট ভালো ছিল। অচেতন করার পর রোগীর কার্ডিয়াক অ্যারেসট (হৃৎপিন্ড যখন হৃৎকম্পন পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়) হয়। এই পরিস্থিতিতে রোগীকে অস্ত্রপচার করা হয়নি।

এদিকে ডাঃ যোসেফ মেমোরিয়াল হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাবিল উদ্দিন বলেন, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি ও স্বজনদের সঙ্গে আলোচনা করে বিষয়টি মিমাংসা হয়েছে। ওই ছাত্রের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

মানিকগঞ্জ সদর থানার উপপরির্দশক (এসআই) শরিফুল ইসলাম বলেন, রোগীর চিকিৎসার সকল কাগজপত্র সংরক্ষণ করা হয়েছে। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শেয়ার