Top
সর্বশেষ

রংপুরে বোরো চাষে বাড়তি খরচের শঙ্কা

০৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ১:৩২ অপরাহ্ণ
রংপুরে বোরো চাষে বাড়তি খরচের শঙ্কা
সাজ্জাদ হোসেন বাপ্পী, রংপুর :

সার, কিটনাশক,ডিজেলসহ কৃষি উপকরনের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় রংপুর অঞ্চলের কৃষকেরা বোরো চাষে এবার বাড়তি খরচের আশংকা করছে।
সরকার ডিজেলের মূল্য ৬৫ থেকে বাড়িয়ে ৮০ টাকা নির্ধারণ করায় প্রতি একর জমিতে তাদের বাড়তি খরচ গুনতে হবে ৩০০ টাকা। আর প্রতি হেক্টরে খরচ আড়াই হাজার টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে জানান কৃষকেরা।
কৃষকেরা জানান, গত মৌসুমে বোরো ধানে উৎপাদন খরচ হয়েছিল ২৭ টাকা। এবার প্রতি কেজিতে খরচ ৩ টাকা বেশি পড়বে। তারা বলেন, জ্বালাণি তেল, বিদ্যুৎ,কৃষি উপকরণের মূল্য বৃদ্ধি, বন্যা, অতিবৃষ্টি-অনাবৃষ্টতে ফসল নষ্ট হওয়াসহ বিভিন্ন কারণ রয়েছে। বোরো চাষ সেচ নির্ভর হওয়ায় ২ লাখ ২০ হাজার হেক্টর জমিতে ডিজেল দিয়ে সেচ দিতে ৬৫ কোটি টকার ওপরে বাড়তি খরচ গুনতে হবে এখানকার হাজার হাজার কৃষকে।
চলতি বোরো মৌসুমে রংপুর অঞ্চলের রংপুর, গাইবান্ধা, লালমনিহাট, কুড়িগ্রাম ও নীলফামারী জেলায় ৫ লাখ ৩ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে রংপুর কৃষি বিভাগ। এর মধ্যে প্রায় অর্ধেকেরও বেশি জমিতে বোরো ধান চাষ করা হয়েছে।
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত বোরো মৌসুমে রংপুর অঞ্চলের ৫ জেলায় বিদ্যুৎ, ডিজেল ও এনএনপি, সোলার চালিত প্রায় ২ লাখ ৩০ হাজার সেচ চালিত যন্ত্র দিয়ে জমিতে সেচ দেওয়া হয়েছে। এবারও সেই লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।
সেই হিসেবে গভীর নলকুপ বিদ্যুৎ চালিত ২ হাজার ৭৭০টি দিয়ে ৬৩ হাজার ৩৯৫ হেক্টর, ডিজেল চালিত ২৩টি গভীর নলকূপ দিয়ে ২৯৫ হেক্টর, এনএনপি বিদ্যু চালিত ৪২টিতে ২৯১ হেক্টর, ডিজেল ৫২৬টি দিয়ে ৭৪৯ হেক্টর, সোলার চালিত ২৫টিতে ৪৯ হেক্টর জমিতে সেচ দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।
এছাড়াও বিদ্যুৎ চালিত অগভীর ৭১ হাজার ২৫৪টি নলকূপ দিয়ে ২ লাখ ৪ হাজার ৪৭০ হেক্টর, অগভীর ডিজেল চালিত ১ লাখ ৫৫ হাজার ৬৫৯টি সেচ যন্ত্র দিয়ে ২ লাখ ২০ হাজার ১০৩ হেক্টর জমিতে সেচ দেওয়া হবে। অগভীর ৯৯টি সোলারে ৮০৯ হেক্টর জমিতে সেচ দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।
এই অঞ্চলে ৫ লাখ ৩ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমির মধ্যে অগভীর ডিজেল চালিত সেচ যন্ত্র দিয়ে ২ লাখ ২০ হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে সেচ দেওয়া হবে। ডিজেলের মূল্য লিটার প্রতি ১৫ টাকা বেড়ে যাওয়ায় কৃষকদের একর প্রতি ৩০০ টাকার ওপরে অতিরিক্ত খরচ হবে। সেই হিসেবে প্রতি হেক্টরে অতিরিক্ত খরচ দাঁড়াবে আড়াই হাজার টাকার ওপরে। সবমিলিয়ে ২ লাখ ২০ হাজার হেক্টর জমিতে ডিজেল নির্ভর সেচে বাড়তি খরচ পড়বে ৬৫ কোটি টকার ওপরে।
পীরগাছা উপজেলার পারুল ইউনিয়নের বিরাহীম গ্রামের কৃষক হুমায়ন খান জানান, এবার বোরো চাষের জন্য বীজতলা তৈরিসহ সার ও সেচের ব্যবস্থাও করেছেন। তবে ডিজেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় তাদের বাড়তি টাকা খরচ করতে হবে। তিনি জানান, বর্তমানে আবহাওয়া এখন পর্যন্ত বোর চাষে অনুকূলে রয়েছে। তবে ঘন কুয়াশার কারণে কোনো কোনো বীজতলা সামান্য নষ্ট হয়েছে। আবার কোথাও পচনও দেখা দিয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ফলন ভালো হবে।
রংপুর আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক মাহবুবার রহমান জানান, ভূ-গর্ভস্থ পানির ব্যবহার কম হয় এমন ফসল চাষে কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। বোরো মৌসুমে যেসব জমিতে সেচের জন্য ফিতা পাইপসহ বিভিন্ন ড্রেনেজ ব্যবস্থা করা হয়, সেগুলো নষ্ট না করার জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ওবায়দুর রহমান মন্ডল জানান, চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে বোরোর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। বর্তমান যে আবহাওয়া বিরাজ করছে তাতে ধানের বীজতলার ক্ষতি হওয়ার শঙ্কা কম রয়েছে।

শেয়ার