জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধিতে কষকদের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় বিকল্প সেচ সুবিধার লক্ষে রংপুরের বিভিন্ন উপজেলায় সৌরচালিত পাতকুয়ার মাধ্যমে জমিতে সেচের পানি ব্যবহার করায় কৃষদের মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে।

দুই থেকে আড়াইশ টাকা খরচ করে কৃষকেরা এক বিঘা জমিতে সেচ দিতেপারছেন তারা। এতে করে তাদের উৎপাদন খরচ কমে লাভের আশা করছে তারা। অপরদিকে ভূ-উপরিস্থ পানির সর্বোত্তম ব্যবহার এবং বৃষ্টির পানি সংরক্ষণে পরিবেশের ভারসম্য রক্ষা হচ্ছে।

বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ জেলায় ১৭টি পাতকুয়া নির্মাণ করেছে। এতে প্রায় ৬ শত ৮০ বিঘা জমি সেচের আওতায় এসেছে। এতে উপকৃত হয়েছেন সবজিচাষী। রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার রাণীপুকুর ইউনিয়নসহ সবজি চাষের জন্য প্রসিদ্ধ অন্যান্ন ইউনিয় গুলোতে এব্যবস্থা করা ও হয়েছে।

বাণিজ্য প্রতিদিনের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

বিএমডিএ সূত্রে জানা যায়, সব্জি চাষের জন্য প্রসিদ্ধ মিঠাপুকুর উপজেলায় ২০২০-২১ অর্থবছরে চারটি পাতকুয়া নির্মাণ করা হয়েছে। এই এলাকায় সবজি চাষ বেশি হয়। সবজির মধ্যে কাঁকরোল, শিম, করলা, পটল, লাউ, শসা, পেঁয়াজ ও রসুন অন্যতম।

সুবিধাভোগী কৃষক আশরাফ হোসেন জানান, তার ৬০ শতক জমিতে আগাম জাতের আলু চাষ করেছিলেন। দুবার সেচ দিয়েছিলেন। এজন্য খরচ হয়েছে মাত্র ২০০ টাকা। অথচ পাতকুয়া নির্মাণের আগে একবার সেচ দিতেই গুনতে হতো ৮০০ টাকা।

পাতকুয়া পরিচালনাকারী অপারেটর কৃষক বেলাল জানান, তার এক একর জমিতে শিম চাষ করার পর তিনবার জমিতে সেচ দিয়েছেন। খরচ হয়েছে ৪০০ টাকা। এর আগের বছর শিমের জমিতে একবার সেচ দিতে খরচ হয়েছিল ৬০০ টাকা। তিনি বলেন, জমিতে সেচ কতবার দিতে হবে এটি নির্ভর করে আবহাওয়ার ওপর। যদি বৃষ্টি বেশি হয় তাহলে সেচ কম লাগে। ফাগুন ও চৈত্র মাসে সেচ বেশি লাগে।

কৃষক বোরেক ও তালা মিয়া জানান, সবজির জমিতে সেচ লাগে ২-৬ বার। নিজস্ব স্যালো মেশিন হলে এক বিঘা জমিতে একবার পানি দিতে চার লিটার তেলের প্রয়োজন হয়। যদি পানি কিনতে হয় তাহলে সেচ বাবদ খরচ আরো বাড়ে। বর্তমানে ডিজেল বিক্রি হচ্ছে ৮১ টাকার ঊর্ধ্বে। ফলে সেচ খরচ বাড়ছে। পাতকুয়ায় সেচ খরচ তেমন নেই বললেই চলে।

বিএমডিএ মিঠাপুকুর জোনের উপসহকারী প্রকৌশলী রায়হান হাবীব জানান, তিনি নিজেই মিঠাপুকুরে চারটি পাতকুয়া দেখভাল করেন। এটি পরিচালনার জন্য একজন কৃষককে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। পাতকুয়াটি ওই কৃষকের জমিতে নির্মাণ করা হয়েছে। পাতকুয়ায় ১২০ ফুট বোরিং করা হয়েছে। কুয়ার মধ্যে ৬২ ফুট নিচে সাবমারসিবল পাম্প বসানো হয়েছে। কুয়ায় মোট ৮৪টি আরসিসিবন যরিং পাত আছে। একটি পাতকুয়া চলে পাঁচ কিলোওয়াট শক্তিসম্পন্ন আটটি সৌর প্যানেল দিয়ে।

সৌর বিদ্যুতের মাধ্যমে পরিচালিত পাম্পটির পানি সংরক্ষণে একটি টাওয়ারের ওপর তিন হাজার লিটারের ট্যাংকি স্থাপন করা হয়েছে। একটি পাতকুয়া থেকে ২৫ বিঘা পর্যন্ত শুধু চাষকৃত সবজি চাষের জমিতে সেচের জন্য ডিজাইন করা থাকলেও ব্যাপক চাহিদা থাকায় বেশি জমিতে সেচ দেয়া হচ্ছে। ভূ-উপরিস্থ পানির সর্বোত্তম ব্যবহার ও বৃষ্টির পানি সংরক্ষণে বৃহত্তর রংপুর জেলায় সেচ সম্প্রসারণ প্রকল্পের অধীন সবচেয়ে বেশি রংপুর জেলায় ১৭টি পাতকুয়া নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া নীলফামারীতে আটটি, গাইবান্ধা ও লালমনিরহাট জেলায় চারটি করে আরো ১৬টি পাতকুয়া নির্মিত হয়েছে।

বিএমডিএ রংপুর সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী প্রকল্প পরিচালক. হাবিবুর রহমান খান বলেন, সৌর বিদ্যুতের মাধ্যমে পানি উত্তোলন হওয়ায় এবং বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা থাকায় পাতকুয়া শতভাগ পরিবেশবান্ধব। সুবিধাভোগী কৃষকদের উৎপাদন খরচ অনেক কমে গেছে।