Top

কুষ্টিয়া থেকে ঈগল পরিবহনের বাস যাতায়াত বন্ধ

০৪ আগস্ট, ২০২২ ৪:১০ অপরাহ্ণ
কুষ্টিয়া থেকে ঈগল পরিবহনের বাস যাতায়াত বন্ধ
কুষ্টিয়া প্রতিনিধি :

গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কুষ্টিয়া থেকে ছেড়ে যাওয়া নারায়ণগঞ্জগামী ঈগল পরিবহনের একটি বাস‌ নিয়ন্ত্রণ নি‌য়ে যাত্রী‌দের অস্ত্রের ভয় দে‌খি‌য়ে হাত-পা, চোখ-মুখ বেঁধে, ডাকা‌তি ও ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। এঘটনার পর থেকে কুষ্টিয়া থেকে ঈগল পরিবহনের বাস নারায়নগঞ্জে যাতায়াত বন্ধ রেখেছেন কর্তৃপক্ষ।

এ ঘটনায় বাসের চালক, সুপারভাইজার ও হেলপার জড়িত আছে বলে অভিযোগ জানিয়েছেন যাত্রীরা। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কুষ্টিয়ার ঈগল পরিবহনের কাউন্টার মাস্টাররা।

পুলিশ, ভুক্তভোগীদের স্বজন ও ঈগল পরিবহন সূত্রে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার (২ আগস্ট) সন্ধ্যা ৭টার দিকে ঈগল পরিবহনের একটি বাস কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকা প্রাগপুর থেকে নারায়ণগঞ্জের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। বাসটি সিরাজগঞ্জের কাছাকাছি দিবারাত্রি হোটেলে রাতের খাবার খাওয়ার জন্য বিরতি দেয়। রাত দেড়টার দিকে আবার যাত্রা শুরু করে। পথে কাঁধে ব্যাগ বহনকারী ১০ থেকে ১২ জন তরুণ যাত্রী বাসে ওঠেন। বাসটি বঙ্গবন্ধু সেতু পার হওয়ার পর যাত্রীবেশে থাকা ডাকাতরা অস্ত্রের মুখে বাসটির নিয়ন্ত্রণে নিয়ে মারধর, ডাকা‌তি ও ধর্ষণ করে। এ ঘটনায় বাসের এক যাত্রী বাদী হয়ে টাঙ্গাইলের মধুপুর থানায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন। ধর্ষণের শিকার নারীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

ঘটনায় বৃহস্প‌তিবার (০৪ আগস্ট) ভো‌র ৫টার দি‌কে টাঙ্গাইল সদর উপজেলা থে‌কে রাজা মিয়া (৩২) নামে এক বাসের চালককে গ্রেপ্তার ক‌রে‌ছে জেলা গো‌য়েন্দা পু‌লিশ (‌ডি‌বি)। সে কালিহাতী উপজেলার বল্লা গ্রামের হারুন অর রশিদের ছেলে। প্রাথ‌মিক জিজ্ঞাসাবা‌দে সে চলন্ত বা‌সে ডাকা‌তি করার ঘটনা স্বীকার ক‌রে‌ছে।

এ বিষয়ে ঈগল পরিবহনের কুষ্টিয়ার লাইনম্যান পলাশ উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে প্রাগপুর থেকে বাসটি নারায়নগঞ্জের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। পথিমধ্যে কুষ্টিয়ার হোসেনাবাদ, ডাংমড়কা, আল্লাহরদর্গা, রাজাপুর, কাচিকাটা সহ বিভিন্ন কাউন্টার থেকে প্রায় ২৮ জন যাত্রী উঠেন। তারমধ্যে তিন-চারজন যাত্রী সুপারভাইজার রাব্বির ছিল, বাকিরা কাউন্টারের যাত্রী ছিল। বাসে ডাকাতি ও ধর্ষণের ঘটনার পর থেকে কুষ্টিয়া টু নারায়নগঞ্জ বাস চলাচল বন্ধ। কর্তৃপক্ষ আমাদেরকে বুধবার সকালের দিক থেকে টিকিট বিক্রি করতে নিষেধ করে দিয়েছে।

ওই বাসের ড্রাইভার ছিল মনি আহমেদ ও হেলপার ছিল দুলাল। বাসটির নম্বর ঢাকা মেট্রো ০১৫৪ ৷ প্রায় ২০ দিন আগে মনি বাস চালক হিসেবে যুক্ত হন।

ওই বাসের যাত্রীরা জানান, বুধবার গভীর রাতে সিরাজগঞ্জ পৌঁছালে সেখান থেকে কয়েকজন ডাকাত যাত্রীবেশে ওই বাসে উঠে পড়ে। এরপর বাসটি বঙ্গবন্ধু সেতু পার হওয়ার পর ডাকাতদল বাস‌টি নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। বাসে থাকা সব যাত্রীর হাত, পা ও চোখ বেঁধে মারধর ও লুটপাট করে। এসময় বাসের ভেতরেই এক নারী যাত্রীকে ডাকাতদল পালাক্রমে ধর্ষণ করে। বাসের সুপারভাইজার ও ড্রাইভারের বোকামির কারণে ঘটনাটি ঘটেছে। তারা ওই ঘটনার সাথে জড়িত থাকতেও পারে।

তারা আরও বলেন, বাসটি বিভিন্ন স্থানে ঘুরিয়ে তিন ঘণ্টার মতো নিয়ন্ত্রণে রাখে। বাস‌টি পথ পরিবর্তন করে টাঙ্গাইল ময়মনসিংহ সড়কের মধুপুর উপজেলার রক্তিপাড়া জামে মসজিদের পাশে বালির ঢিবিতে উল্টে দিয়ে ডাকাত দল পালিয়ে যায়।

এবিষয়ে টাঙ্গাইল জেলার পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার বলেন, ঈগল পরিবহনের যে বাসটি ডাকাতরা জি‌ম্মি ক‌রে‌ছিল, সেই বাসের চালককে সরিয়ে দিয়ে রাজা চালকের সিট দখল করে। তারা ১০ জন মি‌লে ওই বাস জি‌ম্মি ক‌রে চলন্ত অবস্থায় যাত্রী‌দের কাছ থে‌কে সব কিছু ডাকা‌তি ক‌রে‌ছে। এছাড়া বা‌সে থাকা এক নারী‌কে তার সহ‌যো‌গীরা ধর্ষণ ক‌রে‌ছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে সব কিছু স্বীকার ক‌রে‌ছে। বাকিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত আছে।

শেয়ার