চট্টগ্রাম নগরীর দেওয়ান বাজারে চোরাই মোবাইলসমূহের আইএমইআই (ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল ইকুইপমেন্ট আইডেনটিটি) পরিবর্তন করছিল মো. তানভীর হাসান (২৫) নামে এক যুবক। তার বিশেষ সফটওয়্যারের মাধ্যমে ল্যাপটপ ওপেন থাকলে মাত্র ৩-৫ সেকেন্ডের মধ্যেই আইএমইআই নম্বর পরিবর্তন করে ফেলে। যদি ল্যাপটপ ওপেন না থাকে তাহলে ১৫-২০ মিনিট সময় লাগে তার। এরপর সেগুলো বিভিন্ন মার্কেটে বিক্রি করে। তার এই কাজে সহযোগিতা করে সুরুজ, জয় ও বাবু নামে তিন যুবক।

বৃহস্পতিবার (১২ আগস্ট) দিবাগত রাতে নগরীর কোতোয়ালী থানার রিয়াজউদ্দীন বাজার, রেলস্টেশন ও দেওয়ান বাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে পেশাদার মোবাইল চোর চক্রের এ ৬ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সদস্যরা। এসময় তাদের কাছে থাকা ১৫৬টি মোবাইল চোরাই মোবাইল, ৭টি ল্যাপটপ, আইএমইএই নম্বর পরিবর্তনের কাজে ব্যবহৃত ৮টি ডিভাইস, ২টি ফ্লাশিং ডিভাইস উদ্ধার করা হয়।

পরে শুক্রবার (১২ আগস্ট) বিকেলে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) উত্তর বিভাগের কার্যলায়ে এক সংবাদ সম্মেলনে গোয়েন্দা উত্তর বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ আলী হোসেন এসব তথ্য জানিয়েছেন।

বাণিজ্য প্রতিদিনের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

গ্রেপ্তারকৃত ৬ জন হলেন- মো. খোরশেদ আলম (৩২), মো. কামাল (৩২), মো. সুরুজ মিয়া (৩২), জয় চৌধুরী (২৫), মো. বাবু (৩২) ও মো. তানভীর হাসান (২৫)।

সংবাদ সম্মলনে উপ-পুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ আলী হোসেন বলেন, ‘বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে নগরীর পুরাতন রেলস্টেশন থেকে খোরশেদ ও কামালকে ৪টি মোবাইলসহ গ্রেপ্তার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায় চোরাই মোবাইলগুলো রিয়াজুদ্দিন বাজারের একটি দোকানে বিক্রি করে দেয় তারা।’

পরে খোরশেদ ও কামালের তথ্যের ভিত্তিতে নগরীর রিয়াজউদ্দীন বাজার আব্দুল লতিফ মার্কেটের ষষ্ঠ তলা থেকে সুরুজ মিয়া, জয় চৌধুরী, মো.বাবুকে গ্রেপ্তার করে ডিবি। ষষ্ঠ তলার ১৫৪ নম্বর রুম থেকে ১৬টি চোরাই মোবাইল উদ্ধার করা হয়।

চোরাই মোবাইলগুলো আব্দুল লতিফ মার্কেট থেকে চলে যায় দেওয়ান বাজারে। সেখান থেকে আইএমইআই পরিবর্তন করে সেগুলো আবার বিক্রয়ের জন্য বিভিন্ন মার্কেটে পৌঁছে দেয়ার কাজ করে সুরুজ, জয় ও বাবু। আর দেওয়ান বাজারে আইএমইআই চেঞ্জ করার কাজ করে মো. তানভীর হাসান। যিনি নগরের একটি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে ডিপ্লোমা পাস বর্তমানে বিএসসি পড়ছেন।

উপ-পুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ আলী হোসেন বলেন, ‘নগরীর দেওয়ান বাজারে চোরাই মোবাইলসমূহ আইএমইআই পরিবর্তন করে মো. তানভীর হাসান। আইএমইআই পরিবর্তন করে মোবাইলসমূহ মার্কেটে বিক্রি করে। তানভীরের কাছ থেকে ১৩৬টি মোবাইল,আইএমইএই নম্বর পরিবর্তনের কাজে ব্যবহৃত ৮টি ডিভাইস, ২টি ফ্লাশিং ডিভাইস ও ৭টি ল্যাপটপ উদ্ধারসহ তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।’

গোয়েন্দা কর্মকর্তা মুহাম্মদ আলী হোসেন বলেন, ‘তানভীরকে যখন গ্রেপ্তার করি তখনো মোবাইলের আইএমইআই নম্বর পরিবর্তনের কাজ করছিল তানভীর। তার বিশেষ সফটওয়্যারের মাধ্যমে ল্যাপটপ ওপেন থাকলে মাত্র ৩-৫ সেকেন্ডের মধ্যেই আইএমইআই নম্বর পরিবর্তন করে ফেলে। যদি ল্যাপটপ ওপেন না থাকে তাহলে ১৫-২০ মিনিট সময় লাগে। এছাড়া যেকোন এন্ড্রয়েড মোবাইলের লক খুলে আবার বিক্রি করতো। তানভীর গত ৩-৪ বছর যাবত আইএমইএই নম্বর পরিবর্তনের কাজ করে। মাঝখানে কিছুদিন আইএমইএই নম্বর পরিবর্তনের কাজ বন্ধ রেখেছিল। পুনরায় টাকার লোভে আইএমইএই নম্বর পরিবর্তনের কাজে জড়িয়ে পড়েছেন।’

তিনি বলেন, ‘অনেকগুলো মোবাইল আছে যেগুলোর আইএমইআই নম্বর চেঞ্জ করার আগেই আমরা জব্দ করেছি। সেগুলো সহজেই মালিকের কাছে ফিরিয়ে দেয়া যাবে। যদি প্রকৃত মালিক পাওয়া যায়।’

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ডিবি গোয়েন্দা উত্তর বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার উপ-পুলিশ কমিশনার মো. জহিরুল ইসলাম, সহকারী কমিশনার মো. কামরুল হাসান ও পরিদর্শক মোক্তার আহমেদ।