Top

ঠাকুরগাঁওয়ে একরাতে ১৪ প্রতিমা ভাঙচুর

০৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ২:৪৪ অপরাহ্ণ
ঠাকুরগাঁওয়ে একরাতে ১৪ প্রতিমা ভাঙচুর
ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি :

ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় এক রাতে ১২টি মন্দিরের ১৪টি প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।

শনিবার দিবাগত রাতে উপজেলার ধনতলা ইউনিয়নের আটটি, পাড়িয়া ইউনিয়নের তিনটি ও চাড়োল ইউনিয়নের একটি মন্দিরের ওই ১৪টি প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। পরদিন রোববার সকালে স্থানীয় লোকজন মন্দিরের প্রতিমাগুলো ভাঙচুরের ঘটনাটি দেখতে পান।

মন্দিরের প্রতিমা ভাংচুর ছাড়াও সনাতনী সম্প্রদায়ের অন্যতম পবিত্র গ্রন্থ গীতা ছিড়ে ফেলা হয়। এই নিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

খবর পেয়ে রোববার দুপুরে ঘটনাস্থল পর্যবেক্ষণ করেন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ ঠাকুরগাঁও জেলার সাধারণ সম্পাদক প্রবীর কুমার গুপ্ত, ঠাকুরগাঁও জেলা পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর হোসেন, ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক মো. মাহবুবুর রহমান, বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলী আসলাম জুয়েলসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।

ধনতলা ইউনিয়নের পূজা উদ্‌যাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও সিন্দুরপিন্ডি মন্দির কমিটির সভাপতি জোতির্ময় সিংহ বলেন, ‘প্রায় অর্ধশত বছর ধরে আমরা মন্দিরে পূজা করে আসছি। কোনো দিন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। শনিবার রাতে কোনো এক সময় দুর্বৃত্তরা প্রতিমা ভাঙচুর করে। এই এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন আতঙ্কে রয়েছেন। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং জড়িতদের দ্রুত বিচারের দাবি জানাই।’

হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ ঠাকুরগাঁও জেলার সাধারণ সম্পাদক প্রবীর কুমার গুপ্ত জানান, ধনতলা ইউনিয়নের সিন্দুরপিণ্ডি এলাকার আটটি, পাড়িয়া ইউনিয়নের কলেজপাড়া এলাকার তিনটি ও চাড়োল ইউনিয়নের সাহবাজপুর নাথপাড়া এলাকার একটি মন্দিরসহ ১৪টি প্রতিমা ভাঙচুর করেছে দুর্বৃত্তরা। বেশির ভাগ প্রতিমাই রাস্তার পাশে স্থাপিত মন্দিরের। সেসব মন্দিরে কালী, সরস্বতী, লক্ষ্মী ও মনসার প্রতিমা ছিল। সেসব প্রতিমার মাথা, হাত, পাসহ বিভিন্ন অংশ ভেঙে দেওয়া হয়েছে।

স্থানীয় লোকজন প্রতিমাগুলো ভাঙা অবস্থায় পেয়ে প্রশাসন ও পুলিশকে খবর দেন। দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করতেই এমন ঘটনা ঘটানো হয়েছে বলে তিনি মনে করেন। ধনতলা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সমর চ্যাটার্জী বলেন, এই এলাকায় এর আগে এ ধরনের ঘটনার নজির নেই। এখানে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের সঙ্গে মুসলিমদের কোনো বিরোধ নেই। প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনায় কারা সম্পৃক্ত থাকতে পারে, তার কিছুই আন্দাজ করা যাচ্ছে না।

পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে, তা এখনো চিহ্নিত করা যায়নি। পুলিশ এ ঘটনায় কাজ করছে। কোনো গোষ্ঠী এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার উদ্দেশে এসব মূর্তি ভাঙচুর করেছে কি না, এসব বিষয় মাথায় নিয়ে ঘটনা তদন্ত করা হচ্ছে। আশা করছি, শিগগিরই দোষী ব্যক্তিদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা যাবে। তিনি হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনকে আতঙ্কিত না হয়ে পুলিশকে তথ্য দিয়ে সহযোগিতার আহবান জানান।

এবিষয়ে জেলা প্রশাসক মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ধরনের ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে সে জন্য জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন সচেতন মূলক পদক্ষেপ নিয়েছে।’

শেয়ার