ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার পাড়িয়া, চাড়োল, ধনতলা ইউনিয়নে ১২টি মন্দিরে হামলা চালিয়ে ১৪ টি প্রতিমা ভাংচুরের প্রতিবাদে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান কল্যাণ ফ্রন্ট ঠাকুরগাঁও জেলা শাখা সংবাদ সম্মেলন করেছে। মঙ্গলবার (৭ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান কল্যাণ ফ্রন্ট জেলা শাখার পক্ষ থেকে জেলা বিএনপি কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান কল্যাণ ফ্রন্ট জেলা শাখার আয়োজনে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক সত্যজিৎ কুমার কুন্ডু। লিখিত বক্তব্যে তিনি এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, উল্লেখিত স্থানে প্রতিমা ভাংচুরের বিষয়টি পূর্ব পরিকল্পিত ও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে সম্প্রীতি বিনষ্টের অপচেষ্টা। স্থানীয় একটি মহল এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ধর্মীয় উন্মাদনা উস্কে দিয়ে স্বার্থ হাসিলের নীল নকশা রচনার পায়তারা করছে।
এ জাতীয় ঘটনার মাধ্যমে মূলত চক্রটি আমাদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি দখলসহ মন্দির ও প্রতিমা ভাংচুরের মাধ্যমে আমাদের সম্প্রদায়কে উচ্ছেদ করার খেলায় লিপ্ত হয়েছে। আমরা এ ঘটনায় জড়িতদের দ্রুততম সময়ে সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক সনাক্ত করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। একই সাথে সংখ্যালঘুদের বসতবাড়ি জানমাল রক্ষায় সরকারের নিকট জোর দাবি জানাচ্ছি।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির সহ সভাপতি ওবায়দুল্লাহ মাসুদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পয়গাম আলী, সাংগঠনিক সম্পাদক মো: জাফরউল্লাহ, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান কল্যাণ ফ্রন্টের জেলা শাখার সভাপতি মনোরঞ্জন সিং, সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক কল্প বর্মন, কার্যকরী সদস্য জদুনাথ বর্মন, সহ শিক্ষা ও গবেষনা বিষয়ক সম্পাদক উজ্জ্বল শাহ্, জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব হোসেন তুহিন, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি সরকার নুরুজ্জামান নুরু, সাধারণ সম্পাদক মো. সোহেল রানাসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
ধনতলা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সমর চ্যাটার্জী বলেন, এই এলাকায় এর আগে এ ধরনের ঘটনার নজির নেই। এখানে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের সঙ্গে মুসলিমদের কোনো বিরোধ নেই। প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনায় কারা সম্পৃক্ত থাকতে পারে, তার কিছুই আন্দাজ করা যাচ্ছে না। পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে, তা এখনো চিহ্নিত করা যায়নি। কোনো গোষ্ঠী এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার উদ্দেশে এসব মূর্তি ভাঙচুর করেছে কি না, এসব বিষয় মাথায় নিয়ে ঘটনা তদন্ত করা হচ্ছে। আশা করছি, শিগগিরই দোষী ব্যক্তিদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা যাবে। তিনি হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনকে আতঙ্কিত না হয়ে পুলিশকে তথ্য দিয়ে সহযোগিতারিআহবান জানান।
ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার তিনটি ইউনিয়নে প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনায় অজ্ঞাতদের নামে মামলা করা হয়েছে। রোববার রাতে উপজেলার ধনতলা ইউনিয়নের পূজা উদ্যাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও সিন্দুরপিন্ডি মন্দির কমিটির সভাপতি জোতিময় সিংহ বাদি হয়ে অজ্ঞাতনামাদের নামে মামলাটি করেন বলে বালিয়াডাঙ্গি থানার ওসি খায়রুল আনাম ডন জানান।
এবিষয়ে জেলা প্রশাসক মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ধরনের ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে সে জন্য জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন সচেতন মূলক পদক্ষেপ নিয়েছে।’