কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে ২২ মণ ওজনের বড় আকারের ষাঁড় কালু মামার দাম হাকা হচ্ছে ১০ লাখ টাকা। শেরপুরের ওই ষাঁড়ের আকৃতি ও সৌন্দর্য নজর কেড়েছে সবার। গরুটির মালিকের দাবি, এবার এটিই শেরপুরের সবচেয়ে বড় গরু। কেউ কেনার জন্য দেখতে আসছেন, আবার অনেকে শুধু ষাঁড়টি সামনাসামনি দেখার জন্য আসছেন।

কালু মামার মালিক শেরপুর পৌরসভার কসবা কাঠগড় এলাকার বাহাদুর ইসলাম। তিনি পেশায় গাড়িচালক। গাড়ি চালিয়ে আয় করে লালনপালন করেছেন কালু মামাকে। গায়ের রং কালো , উচ্চতা ৫ ফুট আর লম্বায় ৯ ফুট।

বাহাদুর বলেন, ‘করোনার সময় পাবনা ঘুরতে গেছিলাম। সেখানে গরুগুলা অনেক বড় সাইজের হয়। তাই সেখান থেকে একটা গরু নেওয়ার খুব ইচ্ছে জাগে আমার। পরে আমার এক বড় ভাই আর বন্ধুর সঙ্গে কথা বলে পাবনা থেকে একটা হলস্টেইন জাতের ষাড় গরু কিনি ৮৫ হাজার টাকায়। সেখান থেকে বাড়িতে আনার পর সব মিলিয়ে মোট খরচ পড়ে ১ লাখ ১০ হাজার টাকা’।

বাণিজ্য প্রতিদিনের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

প্রায় ২ বছর ধরে গরুটি লালনপালন করতে গিয়ে মায়া জন্মে গেছে বাহাদুরের। তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন এর পেছনে একজন লোকের খাটাখাটনি আছে। আর ৬-৭শ টাকার খাবার খায় প্রতিদিন। গোসল দিতে হয় ২-৩ বেলা। আমার এখন পর্যন্ত তার পেছনে খরচই হয়েছে ৪ লাখ টাকা। তাহলে কেনা খরচসহ পড়ল ৫ লাখ টাকা। আমি এখন কালু মামাকে বিক্রির জন্য ১০ লাখ টাকা চাচ্ছি। বিভিন্ন জায়গা থেকে কেনার জন্য মানুষ আসছে, দরদাম করতেছে। এখন পর্যন্ত ৫ লাখ টাকা দাম হয়েছে। উপযুক্ত দাম পেলে বিক্রি করবে’।

কালু মামার মালিক বলেন, সম্পূর্ণ দেশীয় পদ্ধতির খাবার খাইয়ে লালনপালন করা হয়েছে তাকে। ভুট্টা, জব, ঘাস, কালাইয়ের ভূষি, গমের ভূষি এবং ধানের খড় খাইয়ে বড় করা হয়েছে ষাঁড়টিকে। কালু মামার সবচেয়ে পছন্দের খাবার আঙ্গুর।

নাম কালু মামা রাখার ব্যাপারে জানতে চাইলে বাহাদুর বলেন, ‘গরুটি আমার বন্ধুর মামা কিনে দিয়েছিল পছন্দ করে। আর ষাড়টির রং হলো কালো। তাই দুই মিলে নাম রেখেছি কালু মামা’।

বাহারি নামের বিরাট আকারের এই ষাঁড় নিয়ে উৎসাহী আশপাশের এলাকার মানুষ। শহর থেকে দেখতে আসা মো. জিহাদ বলেন, ‘আমি কখনো এত বড় ষাঁড় দেখিনি। শহরের মধ্যেই এতবড় ষাঁড় পালছে, এইটা ফেসবুকে দেখে বাস্তবে দেখতে আসলাম। তাই একটা সেলফিও নিলাম’।

সদরের চরশেরপুর থেকে আসা রফিক বলেন, ‘সব সময় টিভিতে দেখি, বড় বড় গরু কোরবানির হাটে ওঠে। আজ বাস্তবে দেখলাম’।

বড় ষাঁড় গরুর কথা শুনে দরদাম করতে আসছে পাইকাররা। গরুর পাইকার হাসান বেলাল জানান, ‘ষাঁড় গরুটি দেখতে বড়ই। আমি কেনার জন্য আসছি। দেখতেছি। দরদাম করে যদি নিতে পারি তাহলে ঢাকায় নিয়ে বিক্রি করব’।

শেরপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ড. মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, জেলায় অনেক খামারি এমন গরু কোরবানির জন্য তৈরি করেছেন। অনেকের বাড়ি থেকেই গরু বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। এবার গরুর যে বাজার রয়েছে এতে খামারিরা বেশ লাভবান হবেন। প্রাণিসম্পদ বিভাগ থেকে খামারিদের প্রশিক্ষণসহ বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করা হয়। ফলে প্রাকৃতিক উপায়ে খামারিরা গরু মোটাতাজা করে বেশ লাভবান হচ্ছেন।

জেলায় এবার মোট ২০টি কোরবানির হাট বসবে। পাশাপাশি ৫টি অনলাইন প্লাটফর্ম থাকবে। প্রতিটি হাটে প্রাণিসম্পদ বিভাগের পক্ষ থেকে একটি করে ভ্যাটেনারি টিম নিয়োজিত থাকবে।