সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে বিএনপি বিএনপি নেতা আতাউর রহমান আঙুরের  অডিও ফাঁস হয়েছে। বিএনপির এই নেতা নারায়ণগঞ্জ-২ (আড়াইহাজার) আসনের সাবেক এমপি ও আড়াইহাজার উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি। একই সাথে ১/১১-এর সংস্কারপন্থি নেতা হিসেবেও আলোচিত আতাউর রহমান আঙ্গুর।

৪ মিনিট ৫৫ সেকেন্ডের রেকর্ডটি রীতিমতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে গেছে। আতাউর রহমান আঙ্গুরের একটি বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘুরপাক খাচ্ছে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে এবং স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে এ নিয়ে সমালোচনার ঝড় বইছে। দলীয় ত্যাগী নেতাকর্মীরা আঙ্গুরের বিরুদ্ধে দলীয়ভাবে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।

বাণিজ্য প্রতিদিনের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

এদিকে ভাইরাল হওয়া অডিওতে বিএনপির সাবেক এমপি আতাউর রহমান আঙ্গুর তার নেতাকর্মীদেরকে কাছে বলতে শোনা যায় যে, আজ পর্যন্ত আমার নামে কোনো মামলা হয়নি। কারণ আড়াইহাজারের সাবেক এমপি নজরুল ইসলাম বাবু, শেখ হাসিনা, খালেদা জিয়া, তারেক রহমান সকলেই আমার।

তিনি বলেন, আমি রাজনীতি ছেড়ে দিয়েছি। আমার রাজনীতি করার কোনো আগ্রহ নেই। শেখ হাসিনা দশ বছর পর মারা গেলে তার পরিবর্তে দলের নেতৃত্বে অন্য কেউ আসবে। কিন্তু বিএনপি’র কবে আসবে সেটা আমি জানি না। আল্লাহ মাবুদ ভালো জানে।

আঙ্গুর বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষে ও বিপক্ষে কিছুই বলছি না। তবে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার সাথে আমার ব্যক্তিগত সম্পর্ক রয়েছে। তার কাছে আমার মোবাইল ফোন নাম্বার রয়েছে এবং তার নাম্বারও আমার কাছে রয়েছে।

শেখ হাসিনা যখন আড়াইহাজারের গোপালদীতে এসেছিলেন তখন তিনি ইউএনও ও তার নেতাকর্মীদের দিয়ে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন উল্লেখ করে আঙ্গুর বলেন, শেখ পরিবারের সাথেও তার সম্পর্ক রয়েছে।

অডিওতে আঙুরকে বলতে শোনা যায়, আমি সাথে থাকতে পারবো না তবে ওসি এবং টিএনওকে বলে দিয়েছিলাম। তার যেন কোনো অসম্মান না হয় চা নাস্তা থেকে সবকিছু খাওয়াবেন। পরে টাকা দিয়ে বলেছি উনাকে খাবার-দাবার সব খাওয়াবেন শাড়ি লুঙ্গি উপহার দিবেন তাতে যেন কোনো ত্রুটি না হয় আর বলবেন আঙ্গুর সাব দিছে।

এছাড়াও আঙ্গুরকে ব্যক্তিগতভাবেই শেখ হাসিনা চেনেন ও জানেন। পরে উনি (সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) ঢাকায় এসে আমাকে ফোন করেন বলেন বাবা তুমি আমাকে এত সম্মান দিয়েছো। বাবা তুমি কালকে আমার অফিসে এসো যাওয়ার পরে উনি সবাইকে বলেছে এই ছেলেটা আমাকে এই সম্মান করেছে। এরপর তিনি আমাকে বলেন তুমি মমতাজের সাথে দাঁড়াইছিলানা। যে কোনো প্রয়োজনে তুমি আমাকে ফোন করবা আমি তোমার পাশে আছি। আঙ্গুর বলেন, প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে শেখ হাসিনা আমার খোঁজ খবর নিয়েছেন।

আরও শোনা যায়, এর মধ্যে সাবেক এমপি নজরুল ইসলাম বাবুর আমার একটু খারাপ সম্পর্ক হয়েছিল। সে সময় সাবেক মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী ও সাবেক এমপি বাবুসহ সবাই নেতাদের নিয়ে একটা মিটিংয়ে বসেছিলাম। সে মিটিংয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছিল। শেখ হাসিনা সেদিন মিটিংয়ে বাবুকে বলেছিল। তোদের এখানে আঙ্গুর সাব নামের একজন নেতা আছে। উনি বিএনপি করতে পারে কিন্তু আমার সাথে উনার ভাই বোনের সম্পর্ক। তাহলে বুঝেন আজ পর্যন্ত আমার বিরুদ্ধে কোনো মামলা হয়েছে?

এ বিষয়ে আড়াইহাজার থানা বিএনপির সভাপতি ইউসুফ আলী মেম্বার মঙ্গলবার বলেন, সাবেক সংসদ সদস্য আতাউর রহমানের যে অডিও বক্তব্য ভাইরাল হয়েছে সেটি শতভাগ সঠিক। আঙ্গুর ১/১১’র সময় থেকেই দলের বিরুদ্ধে কথা বলা শুরু করেন। তিনি আমাদের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অশ্লীল মন্তব্য করেছেন।

তিনি নামেই বিএনপি ভেতরে ভেতরে আওয়ামী লীগের সুবিধবাদী এবং দোসর। আমি বিএনপির হাইকমান্ডের কাছে আঙ্গুরের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাই।

নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবদলের আহ্বায়ক সাদেকুর রহমান সাদেক জানান, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আদর্শকে লালন করে একজন সাবেক সংসদ সদস্য আতাউর রহমান আঙ্গুরের মুখে যে ধরনের ফোনালাপ শোনা গেছে এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।

আওয়ামী লীগ সরকারের দীর্ঘ সময়ে তাকে কখনো আন্দোলন সংগ্রামে মাঠে দেখা যায়নি। কোনো বিএনপির নেতাকর্মীদের পাশেও ছিলেন না কখনো তিনি। এসকল মীরজাফরদের কারণেই বিএনপির ঘুরে দাঁড়াতে ১৬ বছর লেগেছে। অবিলম্বে আতাউর রহমান আঙ্গুরকে দল থেকে বহিস্কার করার দাবি জানান তিনি।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ফোন আলাপ ফাঁসের বিষয়ে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আতাউর রহমান আঙ্গুর বিষয়টিকে বানানো দাবি করেন এবং কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি গিয়াস উদ্দিনকে একাধিকবার ফোন করা হলে তিনি রিসিভ করেননি। সূত্র:কালবেলা।