বিচারিক আদালতের রায়ের ৫ বছর পর ফেনীর মাদরাসা শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলায় ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদন) ও আসামিদের আপিল এবং জেল আপিলের ওপর হাইকোর্টে শুনানি শুরু হয়েছে।

বুধবার (৪ ডিসেম্বর) বিচারপতি মো. হাবিবুল গণি ও বিচারপতি সৈয়দ জাহেদ মনসুরের হাইকোর্ট বেঞ্চে এ বিষয়ে শুনানি শুরু হয়েছে।

এ মামলার ৪ জন আসামির আইনজীবীর পক্ষে রয়েছেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এস এম শাহজাহান। তিনি জানান, বিচারিক আদালতের রায়ের ৫ বছর পর হাইকোর্টে এ মামলার শুনানি শুরু হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষ পেপারবুক উপস্থাপন করছেন। এরপর আসামিপক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করবো।

বাণিজ্য প্রতিদিনের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

২০১৯ সালের ২৯ অক্টোবর আসামিদের মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদনের জন্য (ডেথ রেফারেন্স) মামলার সব ধরনের কার্যক্রম হাইকোর্টে পৌঁছে। এরপর অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পেপারবুক (মামলার সব নথি) ছাপানো শেষ করা হয়েছিল। পরে প্রয়োজনীয় কাজ শেষে শুনানির জন্য মামলাটি প্রধান বিচারপতি বরাবর উপস্থাপন করা হয়। পরবর্তীতে প্রধান বিচারপতি শুনানির জন্য হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ নির্ধারণ করেন।

ফৌজদারি কার্যবিধি অনুসারে বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ডাদেশ হলে সে রায় অনুমোদনের জন্য মামলার সব ধরনের কার্যক্রম উচ্চ আদালতে পাঠাতে হয়। সে অনুযায়ী ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে আসে। এছাড়া আসামিরা জেল আপিল ও ফৌজদারি আপিল করেন।

২০১৯ সালের ২৪ অক্টোবর ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদ এ মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে প্রত্যেক আসামিকে (১৬ আসামি) মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেয়া হয়। পাশাপাশি আসামিদের প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত করেন বিচারক।

পরে একই বছরের ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলার বিরুদ্ধে নুসরাতকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগে মামলা করেন তার মা শিরীন আখতার। এ মামলার জের ধরে অধ্যক্ষকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর তার অনুগত কিছু ক্যাডার সিরাজকে জেল থেকে বের করে আনতে জনমত গঠন করে।

পরবর্তীতে ৩ এপ্রিল খুনিরা সিরাজের সঙ্গে কারাগারে পরামর্শ করে ৪ এপ্রিল মাদরাসার ছাত্রাবাসে নুসরাতকে খুন করার পরিকল্পনা করে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ৬ এপ্রিল নুসরাত মাদরাসায় আলিম পরীক্ষা দিতে গেলে পরিকল্পিতভাবে সাইক্লোন শেল্টারের ছাদে নিয়ে তাকে হত্যার চেষ্টা চালায় তারা।

একপর্যায়ে ঘটনাস্থল থেকে নুসরাতকে উদ্ধার করে প্রথমে সোনাগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হয়। এরপর সেখান থেকে তাকে ফেনী ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। তবে অবস্থা সঙ্কটাপন্ন হওয়ায় সেখান থেকে নুসরাতকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে নেয়া হয়। পরবর্তীতে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২০১৯ সালের ১০ এপ্রিল মারা যান নুসরাত।

এ ঘটনায় নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান ৮ এপ্রিল একটি মামলা দায়ের করেন। ২০১৯ সালের ২৮ মে এ মামলায় অভিযোগপত্র দাখিলের পর ২০ জুন অভিযোগ গঠন করেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল। পরে সাক্ষ্যগ্রহণ ও যুক্তিতর্ক শেষে ৩০ সেপ্টেম্বর আদালত রায়ের জন্য ২৪ অক্টোবর নির্ধারণ করেন। মামলাটিতে মাত্র ৬১ কার্যদিবসে ৮৭ সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ ও যুক্তিতর্ক গ্রহণ করা হয়।

পরবর্তীতে একই বছরের ২৪ অক্টোবর রায়ে ১৬ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত। আসামিরা হলেন- সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসার সাবেক অধ্যক্ষ এস এম সিরাজ-উদ-দৌলা (৫৭), নূর উদ্দিন (২০), শাহাদাত হোসেন শামীম (২০), কাউন্সিলর ও সোনাগাজী পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ আলম ওরফে মোকসুদ কাউন্সিলর (৫০), সাইফুর রহমান মোহাম্মদ জোবায়ের (২১), জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন (১৯), হাফেজ আব্দুল কাদের (২৫), আবছার উদ্দিন (৩৩), কামরুন নাহার মনি (১৯), উম্মে সুলতানা ওরফে পপি (১৯), আব্দুর রহিম শরীফ (২০), ইফতেখার উদ্দিন রানা (২২), ইমরান হোসেন ওরফে মামুন (২২), সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মাদরাসার সাবেক সহ-সভাপতি রুহুল আমিন (৫৫), মহিউদ্দিন শাকিল (২০) ও মোহাম্মদ শামীম (২০)।

এম জি