Top
সর্বশেষ

মাগুরায় লিচুর ফলন ভালো না হওয়ায় হতাশ চাষিরা

২৪ মে, ২০২১ ৫:০৭ অপরাহ্ণ
মাগুরায় লিচুর ফলন ভালো না হওয়ায় হতাশ চাষিরা
মাগুরা প্রতিনিধি :

চলতি মৌশুমে মাগুরায় আবহাওয়া প্রতিকুলে থাকায় মাগুরার ১০ গ্রামে লিচুর ভালো ফলন না হওয়ায় এলাকার শতাধিক লিচু চাষির স্বপ্ন ম্লান হতে চলেছে। জ্যৈষ্ঠ মাসের প্রথমদিকে লিচুর ভরা মৌসুম। এ সময় মাগুরা সদরের হাজীপুর, হাজরাপুর, মির্জাপুর, ইছাখাদা, সত্যপুর, শিবরামপুর, নড়িহাটি’র প্রতিটি লিচু বাগানে উৎসব শুরু হয়ে যায়।

লিচু চাষিরা জানান, লিচুর ভরা মৌসুমে ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানের লিচু ব্যাপারীরা মাগুরায় এসে লিচু সংগ্রহ করতো। আবার কোনো কোনো ব্যাপারী ১ মাস আগেই লিচু সংগ্রহের জন্য লিচু’র বাগান মালিকদের আগাম টাকা দিতো। প্রতিবছর লিচু চাষিরা খরচ বাদে লাভ করতো লাখ লাখ টাকা আয় করতো। কিন্তু এবার অতিরিক্ত খরা, প্রচণ্ড তাপদাহ ও নির্ধারিত সময়ে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় মাগুরায় লিচুর ফলন বিপর্যয়ের ফলে লিচু চাষে উৎপাদন খরচ না ওঠার শঙ্কা করছেন অনেক চাষিরা। মৌসুমের ঠিক শেষের দিকে আবার অনেক বাগানে কিছুটা ভালো ফল দেখা গেছে।

কৃষি বিভাগ বলছে, চলতি মৌসুমে এবার জেলায় মোট লিচুর আবাদ হয়েছে ৫৮৮ হেক্টর জমিতে। চাষিরা এবার স্থানীয় জাত হাজরাপুরী,মোজাফফরী, বোম্বাই, চায়না-৩ সহ বিভিন্ন জাতের লিচুর আবাদ করেছে। জেলার ৪ উপজেলার মধ্যে সদরে সবচেয়ে বেশি আবাদ হয়ে থাকে। প্রচণ্ড খরা ও তীব্র তাপদাহে এবার সদরের বিভিন্ন লিচু বাগানের লিচু ফেটে যাচ্ছে। এ বিষয়ে কৃষি বিভাগ থেকে চাষিদের নানা পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

মাগুরা সদরের শিবরামপুর গ্রামের লিচু চাষি আকামত জানান, এবার ১০ বিঘায় আমার ৬টি লিচু বাগানে মোট ৬শ’ লিচু গাছ রয়েছে। বাগানের প্রতিটি লিচু গাছে এবার মুকুল আসেনি। কিছু কিছু গাছে মুকুল এসেছে। এখন প্রতিটি গাছে ফল না থাকাতে আমার আর্থিক ক্ষতির শঙ্কা রয়েছে। ৬টি বাগানে ৫ লাখ টাকা লিজ নিয়ে চাষ করি। লিচুর মুকুল আসার আগে নিয়মিত সেচ ও সার প্রদান করে আসছি। মুকুল শেষে লিচু ফল যখন একটু একটু বড় হতে থাকে ঠিক তখনই বৈশাখের শুরুতে তাপদাহ বাড়তে থাকে। এ সময় আমি প্রতিটি গাছের গোড়ায় পানি দিতে শুরু করি। কিন্তু প্রচণ্ড তাপে লিচু ফেটে নষ্ট হয়ে যায়। অনেক গাছের লিচু তাপে পুড়ে রং নষ্ট হয়ে যাওয়ার ফলে এতে ফলন বিপর্যয়ের শঙ্কা রয়েছে। বর্তমানে বাইরের ব্যাপারীরা এসে লিচু সংগ্রহ করছে। কিন্তু দাম আগের মতো পাচ্ছি না। ফলে আমার উৎপাদন খরচ না ওঠার শঙ্কা।

মাগুরা সদরের ইছাখাদা গ্রামের লিচু চাষি জিয়ারুল জানান, আমার ২ শতাধিক লিচুর গাছ রয়েছে। বাগান রয়েছে ৩টি। এবার বাগানের প্রতিটি গাছে মুকুল আসেনি। নিদিষ্ট সময়ে হয়নি বৃষ্টি। লিচুর ফল একটু বড় হতে শুরু করলে দেখা দেয় প্রচণ্ড খরা ও তাপদাহ। প্রচণ্ড তাপদাহে এবার অধিকাংশ লিচু ফেটে নষ্ট হয়ে যায়। গত বছর লিচুর ভালো ফলনে আমাদের আর্থিক সংকট হয়নি। কিন্তু এবার লিচু’র ফলন বিপর্যয়ের শঙ্কা রয়েছে।

এই ইছাখাদা গ্রামকে বলে লিচুর গ্রাম। কিন্তু এবার বাগানের প্রতিটি গাছে তুলনামূলক লিচু না থাকাতে চাষিরা রয়েছেন বিপাকে। বছর শেষে এই সময়ে চাষি লিচুর বাগানের দিকে চেয়ে খুশি। কিন্তু এবার ফলন বিপর্যয়ে চাষির মাথায় হাত। এবার আমার ৩ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু বিক্রি হয়েছে মাত্র ২ লাখ টাকার। করোনার কারণে বাইরের লিচু ব্যাপারীরা আসছে না তাই আমাদের বেচাবিক্রি কম।
ঢাকা থেকে আসা লিচুর ব্যাপারী মহসিন ও হিমেল জানান, এবার করোনার কারণে লিচুর বাজার মন্দা। মাগুরা থেকে ঢাকায় নিতে খরচ খুবই বেশি।

পূর্বের বছরগুলোতে আমরা লিচু যে দামে ক্রয় করে ঢাকায় বিক্রি করতাম এখন বাগান থেকে কিনে আমাদের খরচ উঠছে না। পরিবহন কম, ভাড়া বেশি তাই আমরা লিচু খুব কম সংগ্রহ করছি। মাগুরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সুশান্ত কুমার প্রামানিক বলেন, জেলায় মোট ৫৮৮ হেক্টর জমিতে লিচুর চাষ হয়েছে। এবার নির্দিষ্ট সময়ে বৃষ্টিপাত না হওয়া ও প্রচণ্ড তাপদাহে অনেক বাগানে লিচু নষ্ট হয়ে গেছে। আমরা লিচু চাষিদের নিয়মিত ফ্রেশ পানি দিয়ে সেচ ও গাছের গোড়ায়, পাতায় এবং ফলে স্প্রে করার পরামর্শ দিয়েছি।

শেয়ার