শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের দেড় বছর শেষ হতে চলছে। এমতাবস্থায় সবচেয়ে করুণ দশা আমাদের মতো শিক্ষার্থীদের। ভাল লেখাপড়া করানোর আশায় স্বনামধন্য কলেজ বা কোচিং এ ভর্তি করিয়েছিলেন বাবা-মা। চারদিকের বন্ধ দেয়ালে নিজেকে আর কতোদিন বন্ধ করে রাখবো আমরা?? আমি মানসিক অসুস্থ হয়ে যাচ্ছি আমি নিজেকে সুস্থ মনে করছিনা। এখন আমি সেই লেভেলের মোবাইলে এডিক্টেড হয়ে গেছি। আমার স্বপ্ন গুলো শুরুর দিকেই শেষ হতে যাচ্ছে। আমার দিনকে রাত, রাতকে দিন মনে হচ্ছে। আমার আবারও ইচ্ছে করছে সেই দিনগুলো যে দিনগুলো আমি হাসি ঠাট্টাতে কাটাতাম বন্ধু-বান্ধবদের সাথে। আমার আবারও ইচ্ছে করছে চারদেয়ালকে ভেঙ্গে আবারও সুস্থ জীবনযাপন করতে। আমি ফিরে পেতে চাই আমার কলেজ জীবন।

যে জীবন আমাকে সুন্দর সুন্দর স্বপ্ন দেখাতো, আমাকে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পথ দেখাতো। কিন্তু প্রতিষ্ঠিত হয়েও লাভ কি এ সমাজে তো মধ্যবিওদের দাম নেই। এ সমাজ উচ্চবিওবানদের কথাই চলে। এ সমাজ নেতাদের কথাই চলে। আমাদের মতো সাধারণ মানুষের কথা তো তারা ভাবেনা। করোনার কারনে প্রায় দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। করোনা কি স্কুল -কলেজ, আর আমাদের মধ্যবিওদের ব্যবসায়…???

বিত্তবানদের বড় বড় শিল্পকারখানা, অফিস, আদালত সব খুলে দেয়া হয়েছে সেখানে কি করোনা নেই…?সেখানেও তো হাজার শিক্ষার্থীর বাবা-মা চাকরি করেন তাহলে তাদের ও তো বাহির হতে হয়। স্কুল -কলেজ বন্ধ রেখে কী করে ভাবছেন শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা…?? যখন একজন শিক্ষার্থীর বাবা-মা বাহিরে অফিস করেন তাহলে তার নিরাপত্তা কিভাবে রইলো…? এ অবস্থায় অনেক কোচিং বন্ধ হয়ে গেছে, একবার কি ভেবে দেখেছেন তাদের কথা..? তারা দু’বেলা ভাত খেতে পারছে নাকি না..? তাদের পরিবার কিভাবে চলছে..? তারা তো কোথাও হাত পাততে পারে না। তারাও তো স্বপ্ন দেখছিল তারা প্রতিষ্ঠিত হলে তাদের বয়স্ক বাবা-মা কে কষ্ট করতে হবেনা আর। এখন তারা নিজেকে ছোট মনে করছে। তারা আর মানসিক চাপ নিতে পারছেনা। এরকম ভয়াবহ অবস্থা দেখে অনেক শিক্ষক, শিক্ষার্থী নিজের তাদের স্বপ্ন গুলো গলা টিপে হত্যা করে দিচ্ছে। তারা আর স্বপ্ন দেখতে চাচ্ছে না।

বাণিজ্য প্রতিদিনের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

হাজার হাজার ভালো শিক্ষার্থী শুকনো ফুলের মতো ঝরে যাচ্ছে। মধ্যবিত্ত বাবাদের ব্যবসা, দোকান, সেন্টার বন্ধ হয়ে আছে। প্রথমবার লগডাউনের পর খুললে ও আজ তা আবার বন্ধ অবস্থায় রয়েছে। সেখানে ঘর ভাড়া, দোকান ভাড়া, গোডাউন ভাড়া, স্কুল-কলেজ বেতন কিভাবে দিব আমরা…?যেখানে আমরা দু’বেলা ঠিকমতো খেতে পারছিনা, সেখানে আমরা কিভাবে পড়াশোনা করবো…? আমরা তো না খেয়ে মারা যাবো। আমাদের মতো মধ্যবিওরা কি আর স্বপ্ন দেখবে না..?? উচ্চবিওবানদের তো সমস্যা নাই বাড়ি আছে ২-৩ টা ভাড়া তুলবে আর খাবে, কিন্তু আমাদের মতো মধ্যবিওদের কি হবে…? তাহলে সমাজে মধ্যবিওদের কি হবে তাদের কথা কি একবার বেবে দেখেছে কেও…?? মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনার কাছে আমি বিনীত অনুরোধ করছি আমার স্বপ্ন গুলো দেখার সুযোগ করে দিন। আমার বাবার মতো অনেক বাবাদের ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেছে তাদের জন্য একটু ভাবুন। নাহলে আমরা পড়াশোনা করতে পারবোনা। নাহলে আমাদের মতো মধ্যবিওদের স্বপ্নগুলো গলা টিপে হত্যা করতে হবে। আমরা এ সোনার বাংলার বুকে বাঁচতে চাই।

লেখক: সুমনা আক্তার
এইচএসসি পরীক্ষার্থী, খিলগাঁও মডেল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ।