Top

সিরাজগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতি সামান্য উন্নতি হলেও দুঃখ দুর্দশা বাড়ছে

০৭ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ৭:৫৫ অপরাহ্ণ
সিরাজগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতি সামান্য উন্নতি হলেও দুঃখ দুর্দশা বাড়ছে

সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর পানি কমতে থাকায় জেলার বন্যা পরিস্থিতি সামান্য উন্নতি হলেও যমুনার তীরবর্তী ৫ টি উপজেলার নিম্নাঞ্চলের প্রায় ৪৫ হাজার মানুষ এখনও পানি বন্দি রয়েছে। প্রবল বর্ষণে চরাঞ্চলসহ নিম্নাঞ্চলের অসহায় মানুষের দুঃখ দুর্দশা আরও বাড়ছে।

প্রায় সাড়ে ৭ হাজার হেক্টর জমির ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বর্তমানে যমুনা নদীর পানি বিপদসীমার ১৭ সেঃমিঃ উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (হেড কোয়ার্টার) নাসির উদ্দিন এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, যমুনা নদীর পানি কমতে থাকায় সিরাজগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতি সামান্য উন্নতি হয়েছে। তবে যমুনার তীরবর্তী শাহজাদপুর, বেলকুচি, চৌহালী, কাজিপুর ও সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার নিম্নাঞ্চল বন্যা কবলিত এলাকার অনেক কাঁচা ও পাকা সড়ক যোগাযোগ এখনও বিচ্ছিন্ন রয়েছে।

বহু অসহায় পরিবার স্থানীয় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধসহ বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়েছে এবং তারা এখন মানবেতর জীবনযাপন করছে। অবশ্য সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে বন্যা ও ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। এবার বন্যায় যমুনা নদীর তীরবর্তী ওই ৫টি উপজেলাসহ চলনবিল এলাকার তাড়াশ ও উল্লাপাড়া উপজেলার ৭ হাজার ২৯০ হেক্টর ফসলি জমি ডুবে গেছে। এরমধ্যে রোপা আমন, আঁখ ও সবজির বাগান উল্লেখযোগ্য। এছাড়া শাহজাদপুর, কাজিপুর, চৌহালী ও সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার অনেক স্থানে ভাঙনও দেখা দিয়েছে। তবে শাহজাদপুর উপজেলার জালালপুর ও খুকনী ইউনিয়ন এলাকায় তীব্র ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যেই ভাঙ্গনের মুখ থেকে অনেক পরিবার অনত্র আশ্রয় নিয়েছে।

জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিম্নাঞ্চলে বন্যা ও ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্থ অসহায় মানুষের মাঝে চাল বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। এদিকে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাবেক মন্ত্রী আব্দুল লতিফ বিশ্বাস ব্যক্তিগত উদ্যোগে ও রেড ক্রিসেন্টের পক্ষ থেকে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। গত ২ দিনে চৌহালী উপজেলা ও এনায়েতপুর থানার বিভিন্ন স্থানে প্রায় ৪’শ পরিবারের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হয়। এ ত্রাণ সামগ্রী বেলকুচি উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বিতরণ করা হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক গত অর্থ বছরে সিরাজগঞ্জে প্রায় ১৩৬ কোটি টাকা কৃষি ঋণ প্রদান করেছে। স্থানীয় কৃষকদের মাঝে শষ্য ও অন্যান্য খাতে সহজ শর্তে এ ঋণ প্রদান করা হয়। ইতিমধ্যেই এ ঋণের ১২৮ কোটি ৩১ লাখ টাকা আদায় করা হয়েছে। ওই ব্যাংকের সিরাজগঞ্জ জোনের জোনাল ম্যানেজার (এজিএম) শাহিনুর ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে জেলার ৯টি উপজেলার বিভিন্ন স্থানের কৃষকদের মাঝে সহজ শর্তে ১৩৯ কোটি ৫ লাখ টাকার ঋণ প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়।

এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক সিরাজগঞ্জের ২২টি শাখার সংশ্লিষ্ট এলাকার ১০ হাজার ৮৮৬ জন কৃষকের মাঝে ১৩৫ কোটি ৬০ লাখ ৬০ হাজার টাকা ঋণ প্রদান করা হয়। এ ঋণ প্রদানের আদায় লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয় ১৪১ কোটি ৯৩ লাখ ১৮ হাজার টাকা। এ জোনের নিয়ন্ত্রিত জেলার বিভিন্ন স্থানে ২২টি শাখা থেকে দেয়া ঋণের ইতিমধ্যেই ১২৮ কোটি ৩১ লাখ টাকা আদায় করা হয়েছে।

দেশব্যাপী মহামারি করোনাজনিত কারণে বিলম্ব হলেও এ ঋণ আদায়ে যথেষ্ট সন্তোষজনক এবং এ ঋণ আদায়ে প্রসংশিত হয়েছে। তবে বাকি ঋণের সুদাসল আদায়ে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তারা তৎপর রয়েছেন। এদিকে চলতি অর্থ বছরে জেলার ৯টি উপজেলার বিভিন্ন স্থানের কৃষকদের মাঝে ১৬৬ কোটি টাকা ঋণ প্রদান লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছে। রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের সিরাজগঞ্জের ২২টি শাখা থেকে ইতিমধ্যেই ১২ কোটি টাকা ঋণ প্রদান করা হয়েছে। স্থানীয় কৃষকদের মাঝে সহজ শর্তে এ ঋণ প্রদান করা হচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

শেয়ার