Top

শেরপুরে দেশী-বিদেশী ফল চাষ করে সফল হযরত আলী

১৩ অক্টোবর, ২০২১ ৩:২২ অপরাহ্ণ
শেরপুরে দেশী-বিদেশী ফল চাষ করে সফল হযরত আলী
হাফিজুর রহমান লাভলু :

শেরপুরের চাষীরা একসময় শুধু ধান আর পাট চাষ করেই দিনাতিপাত করতেন। তাদের এই সমতল জমিতে পরবর্তীতে নানা শাকসবজী ও ফল চাষ শুরু করলেও শেরপুরের চাষীসহ কেউ জানতো না এ জমিতেও মাল্টা, আঙ্গুরসহ বিদেশী ফলের চাষ হবে। শেরপুরের সেই সমতল মাটিতে মাল্টা, আঙুরসহ দেশী-বিদেশী বিভিন্ন প্রজাতির ফল চাষ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন হযরত আলী। তার মিশ্র ফল বাগান শুধু লাভই না এ বাগানের সৌন্দর্য বিনোদনের খোরাক হয়ে দাঁড়িয়েছে মানুষের কাছে।

শেরপুর জেলা সদরের হাজী মো: ইব্রাহিম খলিলুল্লাহর তিন ছেলের সবার বড় হযরত আলী ঢাকার যাত্রবাড়ীতে ব্যবসা করেন। ব্যবসার ফাঁকে চিন্তা করেন নিজ এলাকায় ফলের বাগান করবেন। এ থেকেই বিভিন্ন কৃষি বিশেষজ্ঞদের কাছে পরামর্শ নিয়ে শেরপুর সদরের রৌহা গ্রামে একশ বিঘা জমিতে ২০১৯ সালে মাল্টা, কমলা, আঙ্গুর, ড্রাগন, লটকন, পেপে, পেয়ারা, লেবু, বড়ই, সৌদী খেজুরসহ ১২টি প্রজাতির ফল বানিজ্যিকভাবে চাষ করে শুরু করেন। একই সাথে বিদেশী উন্নত জাতের এমকাটো, ফ্রাই ছবেদা, মালবেরি, থাই সরিষাসহ আরো ২শ ৭১টি জাতের ফলের পরীক্ষামূলক চাষ শুরু করেছেন। ইতিমধ্যে তিনি শেরপুর সদর উপজেলার রৌহা, ভাতশালা, কামারিয়া ও বলায়েরচর ইউনিয়নে প্রায় আটশ বিঘা জমিতে ১২টি ফল ও চারা উৎপাদন বাগান করেছেন। একশ বিঘা নিজের থাকলেও বাকী জমি সে ২০ বছরের জন্য লিজ নিয়েছেন।

সফল ফল চাষী মো: হযরত আলী জানান, আমি ব্যবসার ফাঁকে চিন্তা করি আমার দেশের মানুষকে কিভাবে বিষমুক্ত ফল খাওয়ানো যায়। এ চিন্তা থেকেই আমি ২০১৯ সাল থেকে ফল চাষ শুরু করি। ফল চাষ ভালো হওয়ায় আমি ১টি নার্সারী, ও ১১টি ফলের বাগান করেছি। এখানে এখন দুইশর বেশী শ্রমিক কাজ করছে। সামনে আরো বেশী শ্রমিক কাজ করতে পারবেন। আমার যে লক্ষ্য মাত্রা আছে তার চেয়ে বেশী ফল উৎপাদন হচ্ছে এবং বিক্রিও হচ্ছে। আমার দেখাদেখি অনেক মানুষ ফলচাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে। আমার কাছে সহযোগীতা নিচ্ছেন, এতে আমার খুব ভালো লাগে। প্রতিদিনই অনেকেই এ ফল বাগান দেখার জন্য আসেন, তারা খুশী হন, ফল কিনেন, আবার কেউ কেউ ফল বাগান করার সহায়তা চান। আমরা ছাদ বাগান করে দেই। ইতিমধ্যে ১শ’রও বেশী ছাদ বাগান আমরা করে দিয়েছি। আমি ফল বাগানের পাশাপাশি মাছ চাষ, মুরগী, কবুতর ও গরু পালন করে আসছি।

তার বাগানের মাল্টাসহ অন্যান্য ফল ফরমালিন মুক্ত থাকায় এবং ক্ষতিকর কীটনাশক ব্যবহার না করায় এখানে উৎপাদিত ফলের চাহিদা বেশী। এ বছর ১৪ কোটি টাকার ফল বিক্রির লক্ষমাত্রা থাকলেও ইতিমধ্যে ১০ কোটি টাকা ফল বিক্রী করা হয়েছে বলে বাগানের ম্যানেজার আবু সাঈদ জানান। তিনি জানান, আমাদের বাগানে ক্রেতারা প্রতিনিয়তই আসতে থাকায় ফল বিক্রি অব্যাহত আছে। এতে আশা করা হচ্ছে ১৪ কোটি টাকার বেশী ফল বিক্রি করা সম্ভব হবে।

তার এ ফল বাগানে দুই শতাধিক শ্রমিক সারা বছর কাজ করে আসছেন। ধীরে ধীরে এসব ফল বাগানে এক হাজারেরও বেশী শ্রমিক কাজ করতে পারবেন বলে বাগান মালিক জানান।

এ ব্যাপারে বাগানের শ্রমিক শাহিন আলম জানান, আমরা এ বাগানে কাজ করতে পেরে আমাদের কর্মসংস্থান হয়েছে। এখন আমাদের ছেলে মেয়েদের লেখা পড়া করানোসহ সংসার চালাতে কোন চিন্তা করতে হয়না।

এদিকে হযরত আলীর সফলতা দেখে এখানকার কৃষকরাও উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন মাল্টাসহ অন্য ফল চাষ করতে। অনেকেই শুরুও করেছেন। এ ব্যাপারে কৃষক আলহাজ্ব মো: হবিবুর রহমান জানান, আমি হযরত সাবের বাগান দেইখা আমার ১০ কাঠা জমিতে মাল্টার চাষ করেছি। আমার মাল্টার বাগান অনেক ভালো হয়েছে। আমি সামনে আরও বেশী জমিতে ফল বাগান করবো।

এ ফলবাগান ঘুরে দেখার জন্য প্রতিদিনিই ভিড় করেন এ এলাকার সাধারণ মানুষ। দেখে মুগ্ধও হন তারা। এ ব্যাপারে এখানে ঘুরতে আসা শেরপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার অতিরিক্ত সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক মানিক দত্ত জানান , আমি এ বাগানে এসে মুগ্ধ হয়েছি। আমাদের এলাকায় এত সুন্দর ফল বাগান হতে পারে আমি বিশ্বাসই করতে পারছি না। এখানে না আসলে আমি কোনদিনও বিশ্বাস করতাম না।

শেরপুর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রুবাইয়া ইয়াসমিন জানান, আমরা তাদেরকে নানাভাবে পরামর্শসহ সহযোগিতা করে আসছি। তিনি জানান, আগে আমাদের ধারনাই ছিলো না শেরপুরের সমতল ভূমিতে মাল্টা চাষ হবে। হযরত আলী সাহেবের মাল্টা চাষে সফল হওয়ায় উজ্জল সম্ভাবনা দেখছি আমরা। এখানকার মাল্টাসহ অন্যান্য ফল চাষে বিদেশী ফল আমদানী অনেকাংশেই হ্রাস পাবে বলে আমরা আশা করছি।

সফল ফল চাষী হযরত আলী তার বাগানে ফল চাষের পাশাপাশি মাছ চাষ, কবুতর, মুরগী ও গরু পালন শুরু করেছেন। তার এসব উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন আরও অনেকেই।

শেয়ার