প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুল, কলেজ, দোকান, ব্যাংক, এনজিওসহ নানা প্রতিষ্ঠানে চাঁদা দাবির অভিযোগ উঠেছে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ ও ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। স্বাধীনতার সূবর্ণ জয়ন্তী উদ্ধসঢ়;যাপনের আমন্ত্রণপত্র পাঠিয়ে চাঁদা দাবির চাঞ্চল্যকর এ ঘটনাটি ঘটেছে টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার নারান্দিয়া ইউনিয়নে। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ ও ইউনিয়ন পরিষদের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে চাঁদা আদায়ের এমন ঘটনায় যেমন হতাশ ভুক্তভোগীরা, তেমনি ক্ষুব্ধ সচেতন মহল।

অভিযোগে জানা যায়, কালিহাতী উপজেলার নারান্দিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ ও ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোগে মহান স্বাধীনতা দিবস ও জাতীয় দিবস উদ্ধসঢ়;যাপনসহ স্থানীয় নেতাকর্মীদের বরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। ২৫ ও ২৬ মার্চ দুইদিন ব্যাপি বর্ণাঢ্য আয়োজনে অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানের পুরস্কারসহ ব্যয়ভার বহনের অজুহাতে চাঁদা আদায়ের ঘটনাটি ঘটেছে। গত ৬ মার্চ নারান্দিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মাসুদ তালুকদারের নির্দেশে একটি মিটিং এর আয়োজন করা হয়। ওই মিটিংয়ের মাধ্যমে নারান্দিয়া ইউনিয়নের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানসহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নাম চাঁদার পরিমাণ ধার্য করা হয়।

এ অনুসারে প্রাইমারী স্কুল ৩০০০, উচ্চ বিদ্যালয়, কলেজ ৫০০০ আর নারান্দিয়া বাজারের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য ৫০০ ও ১০০০ টাকা। চাঁদা উত্তোলন ও আমন্ত্রণপত্র বিতরণের জন্য কর্মীও মনোনীত করা হয়। মনোনীত কর্মীদের প্রধান হিসেবে কাজ করেন ৭ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পালিমা গ্রামের মানিক মিয়া।

বাণিজ্য প্রতিদিনের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

লুহুরিয়া বি.এইচ উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি সুলতান জানান, ইউনিয়নের স্বাধীনতার সূবর্ণ জয়ন্তী অনুষ্ঠান উদ্ধসঢ়;যাপনের কার্ড দিয়ে পাঁচ হাজার টাকার চাওয়া হয়েছিল। চেয়ারম্যান সাহেবের কথা বলে আমার স্কুলে কার্ড নিয়ে আসেন ৭ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পালিমা গ্রামের মানিক মিয়া। পরে স্কুলের সহকারি প্রধান শিক্ষক তাকে দুই হাজার টাকা দিয়েছেন বলে আমাকে জানান। রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে এভাবে চাঁদা নেয়াটা অসম্মানের বলেও জানান তিনি।

সৈয়দা নুরজাহান উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাখাওয়াত জানান, চেয়ারম্যান সাহেব মিটিং ডেকে আমাদের কাছে সাধ্য অনুযায়ি সহযোগিতা চেয়েছিলেন। তবে আমন্ত্রপত্র পৌছে দিতে আসা ৭নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পালিমা গ্রামের মানিক মিয়া ৫ হাজার টাকা দাবি করেন। দাবিকৃত টাকা দেয়া না হলেও আমরা
সহযোগিতা করেছি।

৭নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পালিমা গ্রামের মানিক মিয়া জানান, আমি স্কুলে স্কুলে ইউনিয়নের স্বাধীনতার সূবর্ণ জয়ন্তী অনুষ্ঠান উদ্ধসঢ়;যাপনের চিঠি পৌছে দিয়েছি। তবে আমি কারো কাছ থেকে কোন টাকা নেয়নি।

নারান্দিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বণিক সমিতির সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম জানান, আমাদের সমিতির সদস্য সংখ্যা প্রায় দেড় শতাধিক। অনুষ্ঠান উদ্ধসঢ়;যাপনের ব্যয়বহনের জন্য চেয়ারম্যান সাহেব প্রতিটি দোকান থেকে চাঁদা দাবির জন্য চাপ প্রয়োগ করেছিলেন। আমাদের বাজার সমিতির সেক্রেটারীকে বলা হয় প্রতি দোকান থেকে টাকা উত্তোলন করতে বলা হয়েছিল। তবে আমরা সেটির সমর্থন দেয়নি। তবে এরপরও ছাত্রলীগ নেতা সোলায়মান, সাবেক ইউপি সদস্য সামছুল ও আবু বক্কর নামের তিনজন চেয়ারম্যান সাহেবের পরিচয় দিয়ে ও স্বাধীনতার সূবর্ণ জয়ন্তী অনুষ্ঠান উদ্ধসঢ়;যাপনের আমন্ত্রণপত্র দিয়ে কয়েকটি দোকান, ব্যাংক, এনজিও এবং স্কুল থেকে টাকা নিয়েছে। ঢালাও ভাবে সকল দোকান থেকে চাঁদার টাকা উত্তোলন করতে না পারলেও ইউনিয়নের জনতা ব্যাংক, গ্রামীণ ব্যাংক, ভূমি অফিস ও কয়েকটি স্কুল থেকে ২ হাজার করে টাকা নেয়া হয়েছে।

নারান্দিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাসুদ তালুকদার জানান, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ ও পরিষদের যৌথ উদ্যোগে দুইদিন ব্যাপি স্বাধীনতার সূবর্ণ জয়ন্তী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এ কারণে আমরা স্কুল, কলেজসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষকে নিয়ে গত ৬ মার্চ আমরা একটি প্রস্ততি মিটিং দিই। ওই মিটিংয়ে সকলকে উপস্থিত থেকে সহযোগিতা করতে বলেছিলাম। তবে অনুষ্ঠানের জন্য পরিষদের কেউ কারো কাছ থেকে কোন টাকা উত্তোলন করেননি। দল কি করেছে সেটি আমার জানা নেই। এছাড়াও অনুষ্ঠানের সকল ব্যয়ভার বহন করছে পরিষদ। এরপরও যদি কেউ টাকা নেয়া হয়েছে এমন অভিযোগ আমাকে করেন, তাহলে সে বিষয়ে আমি ব্যবস্থা নেব।

এ বিষয়ে কালিহাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমুল হুসাইন জানান, স্বাধীনতার সূবর্ণ জয়ন্তী একটি রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান। এ অনুষ্ঠান উদ্ধসঢ়;যাপনের ব্যয়ভার বহন করে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন। এ ধরণের অনুষ্ঠানের নামে চাঁদাবাজির কোন সুযোগ নেই। চাঁদাবাজির অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।