সর্বশেষ
২২ নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ |
২২ নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ |
এ গণহত্যাযজ্ঞ সংঘটিত হয়েছিল সিরাজগঞ্জের সলঙ্গা থানার চড়িয়া মধ্যপাড়া, পাটধারী, কালিবাড়ী, শিকার মগড়াপাড়া, চড়িয়া শিকার দক্ষিণপাড়া, গোলকপুর, কাচিয়ায় চরে।
বগুড়া-নগরবাড়ী মহাসড়কের সলঙ্গা থানার হাটিকুমরুল গোল চত্বরের নিকটবর্তী চড়িয়া শিকার নামক স্থানে রাস্তায় ব্যারিকেডের সম্মুখীন হয়ে যাত্রা বিরতি করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। তারা সন্ধান পায় চড়িয়া শিকার পূর্ব দক্ষিণ পাশে অন্য একটি কাশিনাথপুর গ্রামের। এই গ্রামকেই পাবনা জেলার কাশিনাথপুর মনে করে পাক বাহিনী খুঁজতে থাকে মুক্তিযোদ্ধাদের ঘাঁটি। তাদের এদেশীয় দোসর রাজাকার আলবদরদের সহযোগিতায় পাক বাহিনী সন্ধান পায় চড়িয়া মধ্যপাড়ায় ডা. শাজাহান আলী, ইয়াকুব আলী ও মোহাম্মাদ আলীসহ অন্যান্যদের প্রচেষ্টায় গড়ে ওঠা মুক্তিযোদ্ধা প্রশিক্ষণ ঘাঁটির। হানাদার বাহিনী সূর্যোদয়ের আগে থেকে বৃষ্টির মত গুলি বর্ষণ শুরু করে এবং একটানা সকাল ৯টা পর্যন্ত গুলি চালায় নিরীহ মানুষের উপর। জ্বালিযে ভস্মীভূত করে দেয় এলাকার ঘরবাড়ী। তাদের পশুত্বের হাত থেকে রেহাই পায়নি কোলের শিশু পর্যন্ত।
সেদিন পাকিস্তানী হায়েনাদের হাত থেকে বেঁচে যাওয়া চড়িয়া মধ্যপাড়া গ্রামের আবুল কালাম (কাঙ্গাল মন্ডল) জানান, ওইদিন সকালে পাকিস্তানী হায়েনার দল আব্দুল মজিদের পুকুরের পাশে ও ইয়ার আলীর পুকুরের পাশে গ্রামবাসীদেরকে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে নির্মমভাবে গুলি চালায়। ঘটনাস্থলে ৩৫ জনের মৃত্যু হয়। ভাগ্যের জোরে চারটি গুলি খেয়েও তিনি বেঁচে যান।
পাক বাহিনীর হত্যাযজ্ঞের শিকার হন চড়িয়া মধ্যপাড়া গ্রামের বাহাজ উদ্দিন, ইয়াকুব আলী, আদম আলী, ইউছুব আলী, মেছের উদ্দিন মুন্সী, ছলিম উদ্দিন, আজিজুল হক, গগন মন্ডল, ডা. শাহজাহান আলী, মোহাম্মদ আলী, তারা সরকার, কানছু সরকার, আবু বকর প্রামানিক, আবেদ আলী, আব্দুল কাইয়ুম, ডাঃ মুজিবর রহমান, ফজল প্রামানিক, আমানত আলী, আবু তাহের, আহসান আলী, শাহজাহান, কাফি, আবু তালেব, ছানু ফকির, কাঞ্জু প্রামানিক, আব্দুস ছাত্তার, মাহাম খা, দারোগ আলী, মজিবর রহমান, আজিজ, হাকিুমুদ্দীন, আব্দুল মজিদ, পাওমুসা, শমসের আলী, তারা প্রামানিক প্রমুখ।
এছাড়াও ওইদিন পাটধারী গ্রামের ২৯ জন, কালীবাড়ী গ্রামের ১৩ জন, শিকার মগপাড়া গ্রামের ৮জন, চড়িয়া শিকার দক্ষিণ পাড়া গ্রামের ১০জন, গোলকপুর গ্রামের ৫জন, কাচিয়ার গ্রামের একজনসহ নাম না জানা আরো অনেককে নির্মমভাবে হত্যা করে হানাদার পাকিস্তানী বাহিনী। তবে স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও মধ্যপাড়া চড়িয়ার বধ্যভূমি ও শহীদ পরিবারগুলো আজও উপেক্ষিত। যাঁদের জীবনের বিনিময়ে রক্তস্নাত স্বাধীনতা ও লাল সূর্যের পতাকা তাদের কাছে আজও কেউ আসেনি সান্তনার বাণী শোনাতে।
শহীদ মিনারে স্থানীয় চড়িয়া জনকল্যাণ সমিতি দিবসটি পালনে নানা কর্মসূচী হাতে নিলেও, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কোন কর্মসূচী গ্রহণ করেনি। শহীদদের পরিবার-স্বজনদের আশা দিবসটি পালনে রাষ্ট্র ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ যথাযথ উদ্যোগের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
বাণিজ্য প্রতিদিনের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন
