গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে ভ্যান চুরির অভিযোগে ইমন মোল্যা (১৭) নামে এক কিশোরকে অমানবিক নির্যাতন করা হয়েছে। দফায় দফায় বেধড়ক মারধর, বিড়ির আগুন দিয়ে ছেঁকা দেওয়া হয়। এমনকি ওই যুবকের মাথার চুল কাঁচি দিয়ে কেটে ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। যা মুহূর্তের মধ্যে ভাইরাল হয়ে যায়। শনিবার (২৩ জুলাই) সকালে উপজেলার রামদিয়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের সামনেই এই মর্মান্তিক ও বর্বর ঘটনাটি ঘটে। নির্যাতনের শিকার ইমন কাশিয়ানী উপজেলার নিজামকান্দি ইউনিয়নের উত্তর ফলসি গ্রামের দিনমজুর ইসলাম মোল্যার ছেলে।

নাম না প্রকাশ করার শর্তে স্থানীয়রা জানান, ভ্যান চুরির অভিযোগ তুলে এলাকার মহসিন, কামরুল শেখ, টুলু শরীফ ও সিরাজ ওই কিশোরকে ধরে মারধর করে। পরে তাদের সাথে মিলে আরও বেশ লোকজন ওই কিশোরকে নির্যাতন করে। মার খেয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়লে ওই কিশোর মারা গেছে কি না নিশ্চিত হতে বিড়ির আগুন দিয়ে স্যাঁকা দেয়া হয়। পরে মাথার চুল ন্যাড়া করে দেয়া হয়।

নির্যাতনের শিকার কিশোরের বাবা ইসলাম মোল্যা বলেন, শনিবার সকালে আমার ছেলে গ্রামের মাছ ব্যবসায়ী আশুতোষ ও রবিনের মাছ ভ্যানে নিয়ে রামদিয়া বাজারে যায়। সেখানে গিয়ে ভ্যান থেকে মাছ নামিয়ে রেখে নাস্তা করতে যায়। নাস্তা করে ফেরার পথে মহসিনসহ কয়েকজন তাকে ধাওয়া করে বেথুড়ী ব্রিজের কাছে গিয়ে ধরে মারধর করে।

বাণিজ্য প্রতিদিনের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

তিনি আরো বলেন, মহসিনের সাথে কামরুল শেখ, টুলু শরীফ, সিরাজ যোগ দিয়ে দুই ঘন্টা ধরে ইমনকে নির্যাতন করে। অজ্ঞান হয়ে পড়লে বিড়ির আগুন দিয়ে ছ্যাঁকা দেয়। পরে ভ্যানে শুইয়ে রামদিয়া পুলিশ ফাঁড়ির গেটের সামনে নিয়ে প্রকাশ্যে মারধর করে ও মাথার চুল কাঁচি দিয়ে কেটে সে দৃশ্য ভিডিওধারণ করে ফেসবুকে ছেড়ে দেয়। আমি খবর পেয়ে আমার ছেলেকে উদ্ধার করতে গেলে তারা আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। আমার ছেলেকে ওদের হাত থেকে বাঁচাতে লোকজনের কাছে সাহায্য চেয়েও পাইনি। ফাঁড়ি থেকে পুলিশ এসেও তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নিয়ে চলে যায়। তারা আমার ছেলের ভ্যানও জোরপূর্বক আটকে রাখে। আমি প্রশাসনের কাছে এর বিচার চাই।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত কামরুল শেখের সাথে কথা হলে চুল কাটার কথা স্বীকার করে সাংবাদিকদের বলেন, চোরের হিসাব তো চোরের সাথেই করতে হয়। তাকে মারধর করা হয়নি। চড়-থাপ্পড় দেয়া হয়েছে।’

পুলিশ ফাঁড়ির সামনে ঘটনার কথা স্বীকার করে রামদিয়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ বাবুল আকতার সাংবাদিকদের বলেন, এ ধরণের একটা ঘটনা ঘটছে। চুরি করতে গিয়ে হাতে-নাতে ধরা পড়ে। তবে নিজামকান্দি ও বেথুড়ী ইউপি চেয়ারম্যানের মধ্যস্থায় তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। তবে ফাঁড়িতে কেউ অভিযোগ করেনি।

তবে নিজামকান্দি ইউপি চেয়ারম্যান নওশের আলী সাংবাদিকদের বলেন, আমি বিষয়টি শুনেছি যে তাকে বেধড়ক মারপিট করা হয়েছে। তবে তাকে ছাড়িয়ে আনার ব্যাপারে আমি কিছু জানি না। যারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে, তারা চরম অন্যায় করেছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া উচিত।

গোপালগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার আয়েশা সিদ্দিকা বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। যারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে তারা চরম অন্যায় করেছে। কেউ আইন হাতে তুলে নিতে পারেন না। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।