পায়ে লিখে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিলেন তামান্না। জন্মগতভাবেই দুই হাত এক পা বিহীন বিশেষ শারীরিক প্রতিবন্ধী সেই তামান্না আক্তার নুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। গত কাল শনিবার (৩০জুলাই) দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব একাডেমিক ভবনের কেন্দ্রীয় গ্যালারিতে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেন।

তামান্না যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার আলীপুরের রওশন আলী ও খাদিজা পারভীন শিল্পী দম্পতির সন্তান। অদম্য এই তরুণী শুধুমাত্র একটি পা দিয়ে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে সবকটি পাবলিক পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে চমক দেখিয়েছিলেন। তার এই সাফল্যে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহেনা খোঁজখবর নেন। একইসঙ্গে তারা দুই বোন তামান্নার স্বপ্ন পূরণে এগিয়ে আসেন। তার চিকিৎসার যাবতীয় ব্যবস্থা নিয়েছেন শেখ হাসিনা ও শেখ রেহেনা।

তামান্নার বাবা রওশন আলী জানান, ছোটবেলা থেকে তামান্না খুব মেধাবী। নিজের ইচ্ছা শক্তি দিয়েই এই জায়গায় এসেছে। অনেক কষ্ট ও মেধার জোর দিয়ে সবকয়েকটি পাবলিক পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে সে। তার স্বপ্ন গবেষণাধর্মী কোনো বিষয়ে পড়াশোনা করে বিসিএস দিয়ে সরকারি চাকরি নেওয়ার। স্বপ্ন পূরণে কয়েক মাস আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছিলো। দুর্ভাগ্য সেখানে তার চান্স হয়নি। শনিবার যবিপ্রবিতে সে বিশ্ববিদ্যালয়ের গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। পরীক্ষা ভালো হয়েছে বলে সে জানিয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে রওশন আলী বলেন, আমি একটি ননএমপিওভুক্ত দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষক। টিউশনি করে সংসার চালাই। তার পক্ষে জেলার বাইরে পড়াশুনার খরচ বহন করাও সম্ভব হয়ে উঠবে না। তাছাড়া তামান্না যেখানেই পড়াশুনা করবে সেখানে তার সঙ্গে পরিবারের কাউকে না কাউকে থাকা লাগবেই। কেননা তার চলাচলে সকল কাজে একজনের সহযোগিতা ছাড়া সে সম্পন্ন করতে পারে না। তাই তার ইচ্ছা বাড়ির কাছে নিজ শহরে যবিপ্রবিতে পড়াশুনা করার। এখানেই তামান্না চান্স পেলে আমার পরিবারের সবার জন্যই ভালো। আমার চাকুরিটাও করা যাবে আবার সে ভালোভাবে লেখাপড়াটাও করতে পারবে।

বাণিজ্য প্রতিদিনের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

যবিপ্রবির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, সারা বাংলাদেশে আমরা খবর পেয়েছি-দ্বিতীয়বারের মতো অনুষ্ঠিত গুচ্ছ পদ্ধতির পরীক্ষাটি অত্যন্ত সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন হয়েছে। যবিপ্রবি কেন্দ্রে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেছেন, আমরা তাদের প্রয়োজনীয় সুবিধা নিশ্চিত করেছি। শিক্ষার্থীদের দুর্দশা লাঘবে গুচ্ছ পরীক্ষা পদ্ধতি একটি সফল পদ্ধতি হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। ভর্তি পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য তিনি যবিপ্রবির সকল শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।

এদিকে, সুষ্ঠু ও নির্বিঘ্নে গুচ্ছ পদ্ধতিতে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি দ্বিতীয়বারের মতো যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়েও (যবিপ্রবি) স্মাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষার প্রথম দিনে এ ইউনিটে যবিপ্রবিতে আসন পড়ে ৩ হাজার ৮৬১ জন শিক্ষার্থীর। এরমধ্যে যবিপ্রবিতে ৯৬ শতাংশের বেশি শিক্ষার্থী উপস্থিত হয়েছেন বলে পরীক্ষা সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। জিএসটিভুক্ত সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার ওয়েবসাইটে জানানো হয়, শনিবার এ ইউনিটে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পাশ করা শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আগামী ১৩ আগস্ট বি ইউনিটে মানবিক ও ২০ আগস্ট সি ইউনিটে বাণিজ্য বিভাগ থেকে পাশ করা শিক্ষার্থীদের দুপুর ১২টা-১টা পর্যন্ত ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এরমধ্যে একটি ভবনে অবৈধভাবে মুঠোফোন রাখার দায়ে একজন ভর্তি পরীক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়।