Top
সর্বশেষ
কোম্পানিগুলোর তথ্যের অবাধ প্রবাহ নিশ্চিতে কাজ করছি: বিএসইসি চেয়ারম্যান দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ২.৬৪ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এলো ডিসেম্বরে আর বিদেশে বই ছাপানো হবে না: শিক্ষা উপদেষ্টা ২৯তম বাণিজ্য মেলা উদ্বোধন করলেন প্রধান উপদেষ্টা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন: ৬০০ এমপি প্রার্থীকে ঋণ খেলাপি মুক্ত দেখানো হয় ১৫ জানুয়ারির মধ্যেই জুলাই অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র দেওয়ার আলটিমেটাম ছাত্রশিবিরের নতুন সেক্রেটারি সাদ্দাম নুরুল ইসলাম সীমান্ত পুরোপুরি বিজিবির নিয়ন্ত্রণে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আকিজের কারখানায় সিলিন্ডার বিস্ফোরণ, নিহত ৪ মার্চ ফর ইউনিটি: শহীদ মিনারে জড়ো হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা

কেশবপুরে কেঁচো সার বিক্রি করে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করছে উদ্যোক্তারা

২৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ ৯:৫৩ অপরাহ্ণ
কেশবপুরে কেঁচো সার বিক্রি করে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করছে উদ্যোক্তারা
অলিয়ার রহমান,কেশবপুর (যশোর) প্রতিনিধি :

যশোরের কেশবপুরে ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সার উৎপাদনে নতুন নতুন উদ্যোক্তারা ঝুঁকে পড়ছেন। যুব সমাজ নিজেদেরকে এ কাজে যুক্ত করে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপশি অন্যদের জন্যও সৃষ্টি করছেন কর্মসংস্থান। অল্প টাকা বিনোয়োগ করেই এসব উদ্যোক্তারা পাচ্ছেন সফলতা। কেঁচো ও সার বিক্রি করে তারা আর্থিকভাবে লাভবান হয়ে ঘুরে দাঁড়াচ্ছেন। চলতি বছরে উপজেলার ৩৩টি ভার্মি কম্পোস্ট কারখানা থেকে আনুমানিক ৩৫০ মেট্রিক টন সার উৎপাদন হয়েছে বলে জানা গেছে। এখানকার উৎপাদিত কেঁচো সার এলকার কৃষকদের নিকট বিক্রির পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয়ে থাকে। নতুন উদ্যোক্তারা এ সমস্ত ফার্ম থেকে কেঁচো কিনে থাকেন।

জানা গেছে, জমিতে নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন, মাটির সুস্বাস্থ্য রক্ষাসহ মাটির পানি ধারণ ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে কম খরচে অধিক ফসল পাওয়ায় কৃষকেরা এখন ব্যাপক হারে কেঁচো সার ব্যবহার করছেন। উপজেলা কৃষি সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে এ উপজেলায় ৩৩টি ভার্মি ক¤েপাস্ট কারখানা রয়েছে। কেউ কৃষি অফিসের প্রদর্শনীর মাধ্যমে আবার কেউ স্ব উদ্যোগে উদ্ধুদ্ধ হয়ে এ কারখানাগুলো তৈরি করেছেন। এসব কারখানায় গোবর ও কেঁচোর সমন্বয়ে ভার্মি কম্পোস্ট (কেঁচো সার) উৎপাদন করা হয়ে থাকে। ২০২৩ সালে এ সকল কারখানা থেকে আনুমানিক ২০০ মেট্রিক টন কেঁচো সার উৎপাদন হয়েছিলো। চলতি বছরে (২০২৪ সালে) আনুমানিক ৩৫০ মেট্রিক টন সার উৎপাদন হয়েছে। কারখানার গোবর ও কেঁচোর হাউজে জন্মানো বাড়তি কেঁচো নতুন নতুন উদ্যোক্তাদের কাছে বিক্রি করা হয়ে থাকে। কেশবপুর উপজেলাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ভার্মি কম্পোস্ট ও কেঁচো পৌঁছে যাচ্ছে। এগুলো বিক্রি করে এবার ৫০ লাখ টাকার বেশি আয় করতে পারবেন উদ্যোক্তারা। জমিতে ভার্মি কম্পোস্টের চাহিদা বাড়ায় এলাকায় নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি হচ্ছে। এতে যেমন বেকারত্ব দূর হচ্ছে, ঠিক তেমনি তৈরি হচ্ছে কর্মসংস্থানও।

উপজেলার চিংড়া ভার্মি কম্পোস্টের উদ্যোক্তা শেখ মুহাইমিনুল ইসলাম সেতু বলেন, বেকারত্ব দূর করতে কৃষি অফিসের পরামর্শে মাত্র ৫ কেজি থাইল্যান্ডের কেঁচো নিয়ে প্রায় ৪ বছর আগে চিংড়া ভার্মি কম্পোস্ট কারখানা তৈরি করেন। বর্তমানে খামারের ৩৫টি হাউজ রয়েছে। এ বছর তিনি হাউজ থেকে ১৮০ টন সার উৎপাদন করেছেন। ২০২৩ ও ২৪ অর্থ বছরে তিনি ১২ লাখ টাকার ও ৩ লাখ টাকার কেঁচো বিক্রি করেছেন। প্রতি কেজি সার ১৫ টাকা ও প্রতি কেজি কেঁচো ২ হাজার টাকা দরে বিক্রি করে থাকেন। তার কারখানায় ৬ জনের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। তারা গোবর আনা, হাউজে ঢালা, পরিচর্যা করা, ছাকনির সাহায্যে হাউজের কেঁচো ও সার আলাদা করা, এগুলো পরিবহন করাসহ বিভিন্ন কাজ করে থাকেন। ভার্মি কম্পোস্ট ও কেঁচো বিক্রি করে প্রতি মাসে তিনি অর্ধ লাক্ষাধিক আয় করছেন বলে জানান। তার ভার্মি কম্পোস্ট কারখানা দেখে এলাকায় আরও ১০ টি ভার্মি কম্পোস্ট কারখানা তৈরি করেছেন নতুন উদ্যোক্তরা।

উপজেলার সাগরদাঁড়ি ইউনিয়নের মির্জাপুর গ্রামের ভাই ভাই ভার্মি কম্পোস্টের নতুন উদ্যোক্তা রাসেল কবির বলেন, তিনি চলতি বছরের মার্চ মাসে চিংড়া ভার্মি কম্পোস্ট কারখানা দেখে ও কৃষি অফিসের পরামর্শে কেঁচো সার উৎপাদন শুরু করি। তার রয়েছে ১৮টি হাউজ। প্রথম বছরেই ১২ মেট্রিক টন সার উৎপাদন হয়েছে। ১ লাখ ৮০ হাজার টাকার সার ১০ কেজি কেঁচো বিক্রি করতে পেরেছেন। এ কাজে শুরু করে তিনি ঘুরে দাঁড়ানোর নুতন স্বপ্ন দেখছেন বলে জানান। এলাকার সব ধরণের ফসল উৎপাদনকারী কৃষকরা ভার্মি কম্পোস্ট সার ব্যবহার করে থাকেন। যে কারণে এলাকায় এ সারের চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

উপজেলার ছোট দোরমুটিয়া গ্রামের এহসানুল কবির রাহাত বলেন, স্বউদ্যোগে বাড়িতে ভার্মি কম্পোস্ট কারখানা তৈরি করেছেন। দুইটা বেড ও ১১টি চাড়ি থেকে প্রতিমাসে তার দেড় থেকে দুই টন সার উৎপাদিত হয়। এলাকার পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কেঁচো সার বিক্রি করে থাকেন বলে তিনি জানান।

উপজেলার ব্রহ্মকাটি গ্রামের কৃষক খন্দকার শফি বলেন, মাল্টা, বেগুন, ফুলকপি, পাতাকপিসহ তার বিভিন্ন সবজি খেতে ভার্মি কম্পোস্ট সার ব্যবহার করে থাকেন। রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমিয়ে জমিতে ভার্মি কম্পোস্ট দেওয়ার ফলে তিনি অধিক ফসল উৎপাদন করতে পারছেন। এতে যেমন তার খরচও কম হচ্ছে, ঠিক তেমনি নিরাপদ ফসলও উৎপাদন করতে পারছেন।

এ ব্যাপারে কেশবপুর উপজেলা সহকারী কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কিরন্ময় সরকার বলেন, এ উপজেলায় বর্তমানে ৩৩টি ভার্মি কম্পোস্ট কারখানা রয়েছে। কেউ স্ব উদ্যোগে আবার কাউকে প্রদর্শনীর মাধ্যমে কারখানা করতে উদ্ধুদ্ধ করা হয়েছে। যশোর অঞ্চলে টেকসই কৃষি স¤প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় চলতি বছর অনেক উদ্যোক্তাকে বেকারত্ব ঘুচাতে ভার্মি কম্পোস্ট প্রদর্শনী দেওয়া হয়েছে। তারা এ কাজে সফলতা পেয়ে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হয়ে ঘুরে দাঁড়াচ্ছেন। সৃষ্টি করেছেন কর্মসংস্থান। কৃষি অফিস থেকে এসব উদ্যোক্তাদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দেওয়া অব্যাহত রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন ও মাটির সুস্বাস্থ্য রক্ষায় কেঁচো সারের জুড়ি নেই। এ জৈব সার মাটির পানি ধারণ, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও উপকারী অনুজীবের সংখ্যা বাড়ায়। ফলে জমিতে কম খরচে অধিক ফসল উৎপাদন সম্ভব।

বিএইচ

শেয়ার