কুষ্টিয়ার সদর উপজেলায় ভূমি অফিস ও তহসিল অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের যোগসাজশে ভুয়া দলিলের মাধ্যমে নামজারি তৈরি করে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী ও সরকারি চাকরিজীবী দুই বোনের প্রায় দশ কোটি টাকার মূল্যের প্রায় ২৮ বিঘা পৈতৃক জমি ও পেট্রোল পাম্প জবরদখলের অভিযোগ উঠেছে।

এ ঘটনায় ভুক্তভোগীদের ২৩ বছরের বিশ্বস্ত কর্মচারী এসএম জিয়াউর রহমান (৪১) ও তার প্রথম স্ত্রী সুমনাকে (৩২) গ্রেফতার করেছে কুষ্টিয়ার পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেষ্টিগশন (পিবিআই)। গত শুক্রবার (৯ ডিসেম্বর) রাজধানীর সবুজবাগের বাসা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। এঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

গ্রেফতারের সময় প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা উভয়ে ঘটনার সাথে সম্পৃক্ততার বিষয়টি স্বীকার করে। সে সময়ে তাদের বাসা থেকে ঘটনায় ব্যবহৃত পোশাকাদি, মোবাইল ফোন, দলিলে ব্যবহৃত ছবি ইত্যাদি জব্দ করা হয়। এর আগে এ ঘটনার প্রতিকার চেয়ে ভুক্তভোগী দুইবোন বাদী কুষ্টিয়া আদালতে ৭টি মামলা দায়ের করেছেন। এছাড়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানায় একাধিকবার লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়।

বাণিজ্য প্রতিদিনের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

জানা গেছে, দুই বোনের সম্পত্তি রক্ষনাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা দীর্ঘ তেইশ বছরের বিশ্বস্ত কর্মচারী এসএম জিয়াউর রহমান তার স্ত্রী সুমনাকে বিক্রেতা সাজিয়ে গুলশানের একটি বাড়ীতে জালিয়াত চক্রের উপস্থিতিতে (একজনকে দিয়েই) দুইজনের স্বাক্ষর ও টিপসহি প্রদান করায়। ভূমি অফিস ও তহসিল অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের যোগসাজশে ভুয়া দলিলের মাধ্যমে নামজারি তৈরি করে এবং অন্যান্যদের নিকট পেট্রোল পাম্পসহ জমি বিক্রি করে বিপুল অংকের টাকা আত্মসাৎ করে।

ভুক্তভোগীরা হলেন কুষ্টিয়া সদর উপজেলার হরিনারায়ণপুর ইউনিয়নের বেড়বাড়াদী গ্রামের মৃত নিয়ামত আলী শেখের মেয়ে জামিলা নাহার শেখ ও জুবাইদা নাহার শেখ। জুবাইদা নাহার শেখ অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী এবং জামিলা নাহার শেখ সরকারি চাকরিজীবী। তারা বর্তমানে ঢাকার গুলশানে বসবাস করেন।

ভূমি অফিস ও তহসিল অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের যোগসাজশে ভুয়া দলিলের মাধ্যমে নামজারি তৈরি করে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী ও সরকারি চাকরিজীবী দুই বোনের প্রায় দশ কোটি টাকার মূল্যের প্রায় ২৮ বিঘা পৈতৃক জমি ও পেট্রোল পাম্প জবরদখলের অভিযোগ উঠেছে। বাবার মৃত্যুর পর ওয়ারিশ সূত্রে ওইসব জমির মালিক হন ভুক্তভোগী দুইবোন। দীর্ঘদিন ধরে তারা ভোগদখলে করে আসছিলেন। আসামিরা গায়ের জোরে কোটি টাকার সম্পদ দখল নিতে চেষ্টা করলে বিচারের আশায় ভুক্তভোগী দুবোন আদালতের দারস্থ হন। এ নিয়ে আদালতে ৭টি মামলা চলমান রয়েছে।

ভুক্তভোগীরা আরও জানান, দীর্ঘদিন জমি, বাড়ি ও পেট্রোল পাম্প আমরা ভোগদখল করে আসছি। সবকিছু জালিয়াতি চক্র দখলের চেষ্টা করছে। এবং পেট্রোল পাম্প দখলে নিয়েছেন। তারা সব সময় নানাভাবে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে আমাদের। মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে। আমি এর সঠিক বিচার চাই। জালিয়াতি চক্রের সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।

এবিষয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা ও কুষ্টিয়া পিবিআই পুলিশ পরিদর্শক রবিউল আলম বলেন, জালিয়াতির মাধ্যমে জমি দখল ও বিক্রি করার অপরাধে ভুক্তভোগীদের বাসার কর্মচারী এসএম জিয়াউর রহমান ও তার স্ত্রী সুমনাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা অপরাধের কথা স্বীকার করেছেন। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।