দেশের পুঁজিবাজারে সরকারি বন্ডের উন্নয়নে সহযোগিতা করবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও বিশ্বব্যাংক। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ও বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বন্ডের সাথে জড়িত সবার সাথেই সংস্থা দুটির প্রতিনিধি দল এ ব্যাপারে বৈঠক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশের সরকারি বন্ডের উন্নয়নে ফিজিবিলিটি স্টাডিও শুরু করে দিয়েছে প্রতিষ্ঠান দু’টি।

বৃহস্পতিবার (৬ জুলাই) বাংলাদেশ ব্যাংকের করা এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক। এর আগে আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধি দলের সাথে বৈঠক করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

মুখপাত্র বলেন, সরকারি বন্ড ডেভেলপমেন্টের জন্য সেকেন্ডারি মার্কেটে একটা কাজ চলছে। এই মার্কেট উন্নয়নের জন্য ফিজিলিটি স্টাডি শুরু করেছে আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের একটি প্রতিনিধি দল। মূল সরকারি সিকিউরিটিজ বিক্রি হয় অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে। বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের হয়ে কাজ করে। তাই অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এবং স্টক এক্সচেঞ্জগুলোর সঙ্গেও প্রতিনিধি দল কথা বলবেন বলে জানান তিনি।

বাণিজ্য প্রতিদিনের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

তিনি বলেন, গতকাল বুধবার (৫ জুলাই) এই প্রতিনিধি দল ঢাকায় এসেছেন। আজকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে সরকারি বন্ড নিয়ে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে আইএমএফের ৫ জন ও বিশ্বব্যাংকের ২ জন উপস্থিত ছিলেন। আজকের পুরোটাই হচ্ছে একটি স্টাডি মিশন। তারা প্রথমে সরকারি বন্ড মার্কেটের ফিজিবিলিটি স্টাডি করবেন। কোন কোন ক্ষেত্রে আমাদের কী ডেভেলপমেন্ট আছে এবং কী ডেভেলপমেন্ট করতে হবে, সেই সম্পর্কে পরবর্তীতে আইএমএফ একটি রিপোর্ট দিবে।

একটি বন্ড মার্কেটে অনেক কাজ রয়েছে। বন্ড ইস্যু ও বন্ড সেটেলমেন্টসহ অন্যান্য কাজগুলোর সঙ্গে যারা যারা সম্পৃক্ত থাকবেন তাদের সকলের সঙ্গে আইএমএফ আলোচনা করবে।

আইএমএফ মনে করে, মূল্যস্ফীতি কমাতে হলে রেপোর সুদ হার বাড়াতে হবে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে বাংলাদেশ ব্যাংক সুদের বিনিময়ে যে টাকা ধার দেয় সেটাকে রেপো বলে। রেপোর সুদ বাড়িয়ে দিলে মার্কেটে টাকার প্রবাহ কমে আসবে যা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে মনে করে আইএমএফ। বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে ৬ দশমিক ৬ শতাংশ সুদে টাকা ধার দেয় যা রেপো রেট হিসেবে পরিচিত।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সাল শেষে ব্যাংকের বিল বন্ডে বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ৩ লাখ ২৫ হাজার ৬৮৭ কোটি টাকা। ২০২২ সালের ডিসেম্বর শেষে স্থিতি দাঁড়ায় ২ লাখ ৭২ হাজার ২০২ টাকা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে খাতটিতে বিনিয়োগ কমেছে ৫৩ হাজার ৪৮৫ কোটি টাকা।

এদিকে বুধবার (৫ জুলাই) ঢাকা সফরের প্রথম দিনে বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থবিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে টানা বৈঠক ও এক কর্মশালা করে প্রতিনিধি দল। বৈঠকে আইএমএফ দেশের আর্থিক খাতে আরও সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছে।

ট্রেজারি বিল ও বন্ড কী?
রাষ্ট্রীয় খরচ মেটাতে সরকার বিভিন্ন সময় দেশের নাগরিক বা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ঋণ নেয়। এর বিপরীতে তাদের নামে ট্রেজারি বিল ও বন্ড ইস্যু করা হয়। একে সরকারি সিকিউরিটিজও বলা হয়। তিন মাস থেকে সর্বোচ্চ এক বছর জন্য নেওয়া ঋণকে ট্রেজারি বিল ও এক বছর থেকে ২০ বছর পর্যন্ত নেওয়া ঋণকে ট্রেজারি বন্ড বলা হয়।

দেশের পুঁজিবাজারে প্রথমবারের মতো ২০২২ সালের অক্টোবরে ২৫০টি সরকারি সিকিউরিটিজ বা ট্রেজারি বন্ডের লেনদেন শুরু হয়। যার বাজার মূলধন ছিলো ৩ লাখ ১৬ হাজার ৮০৮ কোটি টাকা। দেশের দুই পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) একসঙ্গে এ লেনদেন শুরু করেছিলো।

বিপি/আজাদ