মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার ইছামতী নদী বর্তমানে যৌবন হারিয়ে মরা খালে পরিণত হয়েছে। এক সময়ের প্রমত্তা ইছামতী নদী নাব্যতা হারিয়ে কৃষি জমিতে রূপ নিয়েছে। এতে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়েছে।

মরা নদীতে বোরো ধানসহ বিভিন্ন ফসল চাষ করছেন নদী তীরবর্তী কৃষকেরা। বছর তিনেক আগে নদীটি খনন করা হলেও তা তেমন কোনো কাজে আসেনি। তিন বছর যেতে না যেতেই ইছামতীর প্রবেশ পথ হতে নদীর প্রায় ৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য আবার ভরাট হয়ে গেছে। নদী খননের সময় খননকৃত মাটি নদীর তীর ঘেঁষে রাখায় বৃষ্টিতে সেই মাটি পুনরায় নদীতে এসে ভরাট হয়ে গেছে বলে দাবি করেন স্থানীয়রা। নদীটি পুনঃখনন করে নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট দাবি এলাকাবাসীর।

জানা যায়, এক সময়ের প্রমত্তা ইছামতী বর্তমানে যৌবন হারানো মরা খালে পরিণত হয়েছে। মূলত বর্ষা মৌসুমে এক-দুই মাস নদীতে পানি দেখা গেলেও বর্ষা মৌসুম শেষ হতে না হতেই আবার নদীটি তার আপন সত্তা হারিয়ে শুকিয়ে যায়। ফলে নদী তীরবর্তী কৃষকেরা প্রায় চার কিলোমিটার এলাকা জুড়ে চলতি মৌসুমে বোরো ধান চাষ করছেন। অথচ এই নদীতে নব্বই দশকের মাঝামাঝিতেও বৈশাখ-জৈষ্ঠ্য মাসে ছিল অথৈ পানি। ছিল দেশীয় প্রজাতির বিভিন্ন রকমের মাছ। এছাড়াও উপজেলার সর্ববৃহৎ ঝিটকার হাটে বিভিন্ন জেলা থেকে নৌপথে মালামাল আনা নেয়া হতো। নদীর নাব্যতা সংকটে এখন আর ব্যবসায়ীরা নৌপথে মালামাল আনা নেয়া করতে পারে না।

বাণিজ্য প্রতিদিনের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

এই নদীর সাথে সংযোগ একাধিক খাল স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেয়ায় বিভিন্ন এলাকার ফসলি জমিতে পানি প্রবেশ করতে না পারায় কৃষি জমির উর্বরতাও হ্রাস পেয়েছে বলে দাবি করেন কৃষকেরা। নদীতে আগের মতো পানি না থাকায় এ অঞ্চলে দেশীয় প্রজাতির মিঠা পানির মাছেরও অভাব দেখা দিয়েছে। ফলে নদীকেন্দ্রিক জেলেরাও বেকার হয়ে ভিন্ন পেশা বেছে নিয়েছেন বলে জানান জেলেরা। গ্রীষ্ম মৌসুম শুরু হতে না হতেই নদী শুকিয়ে যায়। এতে করে অনেক স্থানে দীর তলায় চিপচিপে পানিতে বোরোধান চাষ করা হচ্ছে। অনেক জায়গায় নদী হয়ে পড়েছে পানিশূন্য হাহাকার।

সরেজমিনে দেখা যায়, ইছামতী নদীটি পদ্মা-যুমনা অববাহিকায় জেলার দৌলতপুর, ঘিওর ও শিবালয় উপজেলা হয়ে হরিরামপুরের বাহাদুরপুর এলাকায় এসে পদ্মায় মিলিত হয়েছে। বাহাদুরপুর থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য উপজেলার ঝিটকা বাজার সংলগ্ন এলাকা পর্যন্ত পানি শূণ্য হয়ে নাব্যতা সংকটে একেবারে নদীর তলা শুকিয়ে গেছে। এতে করে ৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য নদীর বুক জুড়ে রয়েছে সবুজ হাজারো ভূমিহীন বোরো ধানের সমারহ।

এভাবে চলতে থাকলে এক সময় হয়েতো নদীর প্রাণ হারিয়ে মানচিত্র থেকে মুছে যাবে। তাই নদীর অস্তিত্ব সংকট কাটিয়ে খনন ও সংস্কার করা জরুরী। নদীর তলদেশে পানি থাকায় এ অঞ্চলের কৃষকেরাও সেচ পদ্ধতিতে পানি সংকটে পড়েন বলেও কৃষকেরা দাবি করেন।

তবে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, ৬৪ জেলার অভ্যন্তরে ছোট নদী, খাল, জলাশয় পুনঃখনন প্রকল্পের আওতায় ২০২০/২১ অর্থবছরে ১৫ কোটি টাকা ব্যয় দৌলতপুর থেকে হরিরামপুরের বাহাদুরপুর পর্যন্ত ১৯ কি. মি. দৈর্ঘ্য ইছামতী নদী পুনঃখনন করা হয়।

সচেতন মহল বলছে, এভাবে ধীরে ধীরে অনেক নদী হারিয়ে যাচ্ছে। আমাদের সবার উচিত নিজ নিজ জায়গা থেকে এগুলোর ক্ষণাবেক্ষণ করা। জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটেছে এসব নদী মারা যাবার কারণে। সরকারের উচিত উদ্যোগ নিয়ে এই সমস্ত নদীগুলো রক্ষা করা ও সচল করা।

এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি অফিসার মো. তৌহিদুজ্জামান খান বলেন, গ্রামীণ জনপদ উন্নয়নে নদীর সাথে সংযোগ অনেক খালগুলোও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।নাব্যতা সংকট এখন সারাদেশেই ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। এভাবে যদি ধারাবাহিক নাব্যতা সংকট দেখা যায়, তাহলে কৃষির ওপর একটা প্রভাব পড়বে। তাই যত দ্রুত সম্ভব নাব্যতা সংকট রোধে কাজ করা প্রয়োজন।

মানিকগঞ্জ জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাঈন উদ্দীন জানান, তিন বছর আগে আমরা ইছামতী নদী খনন করেছিলাম। এখন আবার নদীর প্রবেশ মুখ ভরাট হয়ে গেছে। এ জন্য নদী খননের জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি। বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। অনুমোদন পেলেই আমরা আবার যতটুকু প্রয়োজন খননের কাজ শুরু করব।

এসকে