শুকনো মৌসুমে সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলা সীমানার যমুনা নদীর বুক জুড়ে জেগে ওঠা শত শত ছোট বড় বালুচরের ফাঁকে খাড়ী, কোল-কাছার সৃষ্টি হয়েছে, আটকা পড়েছে নদীর বিভিন্ন প্রজাতির বড় বড় মা মাছ। কোটি কোটি টাকার মৎস্যসম্পদ হাতিয়ে নিতে কতিপয় স্বার্থান্বেষী দখলদারেরা জোট বেঁধে জেগে ওঠা কোল কাছারে ঝান্ডা উড়িয়ে সীমানা নির্ধারণ করে মৎস্য আহরণে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। সময় সুযোগ বুঝে অবৈধ গুল্লিজাল দিয়ে এসব মাছ শিকার করা হবে। নির্ধারিত এলাকায় স্থানীয় মৎস্যজীবীরাসহ কেউই মাছ শিকার করতে পারছে না। ফলে তাদের জীবন যাপন কষ্ট সাধ্য হয়ে উঠেছে। সৌখিন মৎস্য শিকারী ও জনসাধারণের মনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

এভাবে মা মাছ শিকার করলে মৎস্য সম্পদ ও জীববৈচিত্র্য হুমকিতে পড়বে বলে ধারণা সচেতন মহলের। বেআইনি এমন কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস প্রশাসনের।

সরেজমিনে উপজেলার শুভগাছা ইউনিয়নের ঘাটিশুভগাছায় নদীতে ঝান্ডা দিয়ে সীমানা নির্ধারণের চিত্র দেখা যায়, এ ছাড়া তেকানি ইউনিয়নের কিনিরবেড় হতে উত্তরের কান্তনগর গ্ৰাম পর্যন্ত যমুনা নদীতে প্রায় ৫/৬ কিলোমিটার লম্বা এবং প্রায় ১ কিলোমিটার প্রশস্ত কোল (জলাধার) সৃষ্টি হয়েছে। যার চার পাশে বালু চর মূল স্রোতধারা থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে। স্থানীয় শিক্ষক, কৃষক, জনপ্রতিনিধি ও মৎস্যজীবিসহ সকলের ধারণা এই জলাধারে হাজার হাজার মন বড় বড় রুই, কাতলা, বোয়াল, পাঙ্গাস, চিতল, আইড়সহ নানা প্রজাতির মা মাছ আটকা পড়েছে। ঝান্ডা দেখা যায় মনসুর নগর, খাসরাজবাড়ী ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে, এছাড়াও নাটুয়ারপাড়া ইউনিয়নের ফুলজোড় গ্ৰাম সহ নানা স্থানে।

বাণিজ্য প্রতিদিনের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

যমুনায় মৎস্য শিকাররত নাটুয়ারপাড়া, তারাকান্দি, বরইতলিসহ বিভিন্ন গ্ৰামের নানা বয়সী মৎস্যজীবী নিবারণ, আঁধার, টুক্কা, হরি, খগেশ, নরেন (ছদ্মনাম) প্রমূখ জানান, যেখানে মাছ সেখানেই ঝান্ডা, আশেপাশে গেলেই গালিগালাজ, মারধরের শিকার হতে হয়, মাছ ধরার নৌকা ধরে নিয়ে যায় জরিমানা দিয়ে ছাড়াতে হয়। সরকারি নিষেধাজ্ঞার পর স্থানীয় নিষেধাজ্ঞায় নদীতে আর মাছ মিলছে না, পরিবার নিয়ে খুব কষ্টে আছেন বলে তারা জানান। এ সময় তারা প্রভাবশালী স্বার্থান্বেষীদের নাম বললেও নিজেদের নিরাপত্তা বিবেচনায় সংবাদে না লেখার অনুরোধ জানান। উপজেলার চরাঞ্চলের ৬টি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের জনসাধারণের সাথে কথা বলে জানা যায়, চিহ্নিত কিছু স্বার্থান্বেষীদের কারনে প্রতিবছর তারা বঞ্চিত হচ্ছেন। অনেকে নিজের বাড়ির সামনে নদীতীর থেকেও নিষেধাজ্ঞার কারণে মাছ ধরতে পারেননি জানিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক, নৌকার মাল্লারা জানান, প্রতিবছরই নদীতে এমন কোল সৃষ্টি হয়, কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তি ঝান্ডা উড়িয়ে দখল করে গুল্লিজাল দিয়ে রাতের আঁধারে শতশত মন মাছ বিক্রি করে, প্রশাসনের কতিপয় অসাধু ব্যক্তি, স্থানীয় রাজনীতিবিদ, সাংবাদিকসহ প্রভাবশালীরা সুবিধা নেয়। মৎস্য সম্পদের ভবিষ্যৎ হুমকিতে ঠেলে দেয়ার পাশাপাশি প্রতিবছর কোটি কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয় সরকার।

গত ১৮ ডিসেম্বর অবৈধ গুল্লি জালের মালিক মানিকদিয়া গ্ৰামের ইদ্রিস আলীকে ফোন করে মাছের আরতদার পরিচয় দিলে তিনি বলেন, বুরুঙ্গী চরে গুল্লিজাল দিছিলাম, এখানে বড়‌ মাছ তেমন হয় নাই, ছোট ইলিশ আর সব ছোট মাছ, জাল তুলে ফেলছি, কান্তনগরে জাল ফেলার কথা চলছে।

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা হাসান মাহমুদুল হক বিষয়টি অবৈধ নিশ্চিত করে বলেন, পরীক্ষার ডিউটি আছে, শুক্র শনি ছুটি, সুবিধামত সময়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দেওয়ান আকরামুল হক বলেন, বিষয়টি অবগত হয়েছি, জরুরিভাবে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তাকে বলা হয়েছে।

এম জি