Top

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিএনপির সম্মেলন ঠেকাতে এবার জুতা মিছিল

২৯ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:৫১ অপরাহ্ণ
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিএনপির সম্মেলন ঠেকাতে এবার জুতা মিছিল
জুয়েল মিয়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি :

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জেলা বিএনপির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন বাতিল ও প্রতিহতের ডাক দিয়ে মশাল ও ঝাড়ু মিছিলের পর এবার জুতা মিছিল করেছে জেলা বিএনপির একাংশের নেতাকর্মীরা। সম্মেলন ঠেকানোর কর্মসূচির অংশ হিসেবে মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) রাত ৮টার দিকে জেলা শহরের পাওয়ার হাউজ রোড থেকে জুতা নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল বের করে তারা। পরে মিছিলটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে শহরের লোকনাথ ট্যাংকের পাড় ময়দানে এসে শেষ হয়।

এর আগে, সোমবার (২৭ জানুয়ারি) রাতে শহরের শিমরাইলকান্দি এলাকা থেকে ঝাড়ু হাতে নিয়ে একটি মিছিল বের হয়। মিছিলটি কালিবাড়ি মোড়, টিএ রোড, কোর্ট রোড, কুমারশীল মোড়সহ বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে লোকনাথ টেংকের পাড় মাঠ প্রাঙ্গণে গিয়ে শেষ হয়। এর আগে, রোববার রাতে বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা সম্মেলনের প্রতিবাদে হাজারও নেতাকর্মী নিয়ে মশাল মিছিল বের করেন।

সম্মেলন নিয়ে শহরজুড়ে উত্তেজনা বিরাজ করছে এবং দুই অংশের নেতাকর্মীদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশংকার সম্ভাবনা রয়েছে। জেলায় বিএনপির রাজনীতিতে শ্যামল গ্রুপ বনাম কবির গ্রুপের রাজনীতি যেন টক অব দ্যা টাউনে পরিণত হয়েছে। এনিয়ে দুই বার সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করেও সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়নি। সর্বশেষ আগামী ১ ফেব্রুয়ারি সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় বিএনপি। এক গ্রুপ সম্মেলন সফলের প্রস্তুতির চেষ্টা করলে অপর গ্রুপ আল্টিমেটাম দিয়ে সম্মেলন ঠেকানোর জন্য সর্বশক্তি নিয়ে মাঠে নানা কর্মসূচি দিচ্ছে। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সাংগঠনিক দুর্বলতা ও অভ্যন্তরীণ গ্রুপিংকে এ জটিলতার জন্য দায়ী করছেন রাজনৈতিক সচেতন মহল।

কর্মসূচীতে আসা বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা বলেন, যাকে নিয়ে এ সম্মেলনের আয়োজন চলছে, সেই কবির আহমেদ ভূইয়া আখাউড়ায় ছাত্রলীগের কমিটির নেতা ছিলেন। আজকে তিনি জেলা বিএনপির সভাপতি হতে চান। তার এ স্বপ্ন বাস্তবায়িত হতে দেওয়া হবে না। ১ ফেব্রুয়ারির সম্মেলন স্থগিত না হওয়া পর্যন্ত প্রতিদিন তাদের কর্মসূচি চলমান থাকবে বলে জানান বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা।

জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি হাফিজুর রহমান মোল্লা কচি বলেন, এ সম্মেলন নিয়ম বহির্ভূত সম্মেলন। সম্মেলনে যে ভোটার তালিকা করা হয়েছে তা সঠিক নয়। নিত্যদিনে যারা আওয়ামীলীগের ক্ষমতার অপব্যবহার করেছে তাদেরকে এখানে আনা হয়েছে। তারা অবৈধভাবে ভোটার তালিকা করেছে। এখনো ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়নি। তাদের মনগড়া সম্মেলন করছে। আমরা আহ্বান করেছি সঠিক ভোটার তালিকা তৈরি করে তারপর সম্মেলন অনুষ্ঠিত করা হোক। এবিষয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের জানানো হয়েছে কিন্তু তারা কার ভয়ে কিসের ভয়ে তাদের প্রতি দৃষ্টি দিচ্ছে না ; এখানে কোন শক্তি কাজ করছে সেটাই প্রশ্ন।

জেলা বিএনপির সভাপতি প্রার্থী কবির আহমেদ ভূইয়া বলেন,আমি দলের দুর্সময়ে দলের জন্য কাজ করেছি। আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় থাকাকালীন যারা ভয়ে মুখ খুলেনি তারাই আজকে আমার নামে বিভিন্ন অপপ্রচার করছে। ফেইসবুকে ছাত্রলীগের একটি কমিটির তালিকা প্রচার করে আমার নামে চালিয়ে দিচ্ছে ; যা আমার নামের সাথে মিল নেই এবং সেটা আমি না। আমি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে ছাত্রদলের রাজনীতি করেছি।

উল্লেখ্য, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবদুল মান্নান, সদস্যসচিব সিরাজুল ইসলাম সিরাজ ও জেলা বিএনপির সভাপতি প্রার্থী কবির আহমেদ ভূইয়ার নেতৃত্বে একাংশ এবং জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক পৌর মেয়র হাফিজুর রহমান মোল্লা কচি, জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জহিরুল হক খোকন ও কেন্দ্রীয় বিএনপির অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক খালেদ মাহবুব শ্যামলের নেতৃত্বে আরেকটি অংশ। কমিটি গঠন নিয়ে মনোমালিন্যের জের ধরে গত দুই বছর ধরেই জেলা বিএনপির ওই দুই অংশ পৃথকভাবে দলীয় সব কর্মসূচি পালন করে আসছে।

এছাড়া জেলা বিএনপির সভাপতি প্রার্থী কবির আহমেদ ভূইয়া বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ব্যক্তিগত সহকারী আবদুর রহমান সানির বড় ভাই এবং আখাউড়া উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সাংস্কৃতিক সম্পাদক ছিলেন। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ (কসবা-আখাউড়া) আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী। ২০১৮ সালের দিকে কবির আহমেদ ভূইয়া বিএনপিতে সক্রিয় হয়ে তার ভাই সানির প্রভাব খাটাচ্ছে এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিএনপির রাজনীতির মাঠে শক্ত অবস্থান তৈরি করতে মনগড়া মতো নিজ সমর্থকদের কমিটিতে পদ পদবি দিচ্ছে বলে অভিযোগ পদবঞ্চিত নেতাকর্মীদের।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির স্থানীয় কয়েকজন নেতা জানান, ৩২ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটিতে স্থান পাওয়া ২৬ নেতাই কবির আহমেদ ভূইয়ার অনুসারী। বাকি চারজন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর-বিজয়নগর) আসনে একাধিকবার প্রার্থী হওয়া কেন্দ্রীয় বিএনপির অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক খালেদ মাহবুব শ্যামলের অনুসারী। শ্যামলের অনুসারীদের কমিটিতে না রাখায় নেতা-কর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ ও ক্ষোভের সূত্রপাত হয়।

এনজে

শেয়ার