কুষ্টিয়া প্রতিনিধি:

কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে আরো ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে করোনা আক্রান্ত হয়ে ৭ জন এবং করোনার লক্ষণ নিয়ে আরো ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার সকাল সাড়ে ৯ টায় কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বধায়ক ডা: এম এ মোমেন গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এদিকে হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত এবং উপসর্গ নিয়ে রোগী ভর্তির চাপ অব্যাহত রয়েছে। করোনা আক্রান্ত এবং উপসর্গ নিয়ে সোমবার সকাল সাড়ে ৯ টা পর্যন্ত হাসপাতালে ১৮৩ জন রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এর মধ্যে করোনা আক্রান্ত ১৩৭ জন এবং করোনা উপসর্গ নিয়ে আরো ৪৬ জন রোগী চিকিৎসাধীন আছেন বলে জানানো হয়। এদিকে কুষ্টিয়া জেলায় চলমান লকডাউনের মেয়াদ আগামী পহেলা (১ জুলাই) পর্যন্ত বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। এর আগে ২০ জুন থেকে ২৭ জুন রাত ১২ টা পর্যন্ত লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছিল।

বাণিজ্য প্রতিদিনের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

হাসপাতালের তত্ত্বধায়ক ডা: এম এ মোমেন জানান, হাসপাতালে করোনায় আক্রান্ত এবং উপসর্গ নিয়ে রোগী ভর্তির চাপ বেড়েই চলেছে। চাপ সামলাতে সংশ্লিষ্টদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। উপজেলা সদর এমনকি জেলার দূর-দূরান্ত থেকেও করোনা আক্রান্ত হয়ে এবং উপসর্গ নিয়ে এই হাসপাতালে মানুষ ভিড় করছেন। আপাতত হাসপাতালে চিকিৎসক ও জনবল যা আছে তা দিয়ে রোগীর চাপ সামাল দেয়া যাচ্ছে। তবে এভাবে রোগীর চাপ ওভারলোডেড হতে থাকলে পরিস্থিতি মোকাবেলা করা তাদের জন্য মুশকিল হবে। তখন অতিরিক্ত আরো লোকবল প্রয়োজন হবে।

পরিস্থিতি শেষ পর্যন্ত যে কোথাই গিয়ে দাঁড়াবে তা একমাত্র আল্লাহপাকই জানেন বলে তিনি মন্তব্য করেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে হাসপাতালে অক্সিজেন সংকট দেখা দেয়ার আশংকা রয়েছে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, যারা হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন তাদের প্রায় প্রত্যেকেরই অক্সিজেন সাপোর্ট দিতে হচ্ছে। ব্যবহৃত সিলিন্ডারগুলো প্রতিদিনই খালি হচ্ছে।

খালি হয়ে যাওয়া অক্সিজেন সিলিন্ডারগুলো আগে কুষ্টিয়া থেকে রিফিল করা গেলেও বর্তমানে তা সম্ভবপর হচ্ছে না। এগুলো প্রতিদিন দু’বার করে রিফিলের জন্য যশোর জেলায় পাঠানো লাগছে। যশোর থেকে একবার রিফিল করে নিয়ে আসতে কমপক্ষে ৭ ঘন্টা সময় লেগে যাচ্ছে। যে কারণে হাসপাতালের করোনা আক্রান্ত রোগীদের চাহিদা অনুযায়ী অক্সিজেন পাপোর্ট দিতে গিয়ে তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালটিতে এখন আর করোনা ছাড়া ছাড়া অন্য কোন রোগী ভর্তি নেয়া হচ্ছে না। হাসপাতালটি করোনা ডেডিকেটেড ঘোষণা করে বর্হিবিভাগ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। অন্য রোগীদের পার্শ্ববর্তী ডায়বেটিস ও আদ্বদীন হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে বলা হচ্ছে।

এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ৪৫৫ টি নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে নতুন করে ১৭২ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ৩৮ দশমিক ৪৭। এ নিয়ে জেলায় করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা গিয়ে দাঁড়ালো ৭ হাজার ৩৫৭ জনে। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ৫ হাজার ৩৪০ জন। মৃত্যের সংখ্যা গিয়ে দাঁড়িয়েছে ১৮৯ জনে। নতুন করে শনাক্ত হওয়া ১৭২ জনের মধ্যে রয়েছেন কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় সর্বাধিক ৯৪ জন, দৌলতপুর উপজেলায় ২৫ জন, কুমারখালী উপজেলায় ১৫ জন, ভেড়ামারা উপজেলায় ১৭ জন, মিরপুর উপজেলায় ১৩ জন ও খোকসা উপজেলায় ০৮ জন। এখন পর্যন্ত জেলায় ৬০ হাজার ৬০৫ জনের নমুনা পরীক্ষার জন্য নেওয়া হয়েছে। নমুনা পরীক্ষার প্রতিবেদন পাওয়া গেছে ৫৮ হাজার ৭৫৮ জনের। বাকিরা নমুনা পরীক্ষার প্রতিবেদনের অপেক্ষায় রয়েছেন। বর্তমানে কুষ্টিয়ায় সক্রিয় করোনা রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ৮২৮ জন। এদের মধ্যে হাসপাতালে আইসোলেশনে চিকিৎসাধীন আছেন ১৭৭ জন এবং হোম আইসোলেশনে আছেন ১ হাজার ৬৫১ জন।