Top

শীতের সবজিতে কৃষক খুশি

০৯ নভেম্বর, ২০২১ ৬:২৮ অপরাহ্ণ
শীতের সবজিতে কৃষক খুশি
যশোর প্রতিনিধি :

শীতের সবজি দ্রুত বাজারে তুলতে পারলেই বেশি টাকা আয় করা সম্ভব। বিষয়টি বিবেচনায় রেখে আড়াই বিঘা জমিতে চাষ করা ফুলকপি ও বাঁধাকপির পরিচর্যা করছেন যশোর সদরের চুড়ামনকাটির বাগডঙ্গা গ্রামের কামাল হোসেন। সকালে সেচ আর বিকালে বালাইনাশক ছিটিয়ে জমিতে ফলানো সবজি গুলো দ্রুত পরিপুষ্ট করার চেষ্টায় দিনরাত খাটছেন তিনি।

কামাল হোসেন বাণিজ্য প্রতিদিনকে জানান, ভরা শীতের মওসুমে বাজারে সব ধরনের সবজি পাওয়া যায়। তখন সবজির ভালো দাম পাওয়া যায় না। বর্তমানে বাজারে সবজির দাম দ্বিগুণ। তাই সবজি দ্রুত বাজারে তুলতে পারলে বেশি দাম পাবো। আশা করছি অগ্রহায়ণ মাসের প্রথম সপ্তাহেই বাজারে ফুলকপি ও বাঁধাকপি তুলতে পারবো।

শুধু চুড়ামনকাটির কামাল হোসেন নন। সবজির রাজাধানীখ্যাত যশোর সদরের চুড়ামনকাটি, সাতমাইল এলাকায় শীতের আগাম জাতের সবজি পরিচর্যায় ব্যস্ত হাজারো কৃষক।

কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, চলতি বছরের অক্টোবর মাসের মাঝিমাঝি সময়ে রবি মৌসুম শুরু হয়েছে। এ সময় শীতকালীন সবজির আবাদ শুরু হয়। আবাদ চলবে আগামী বছরের মার্চ মাসের মাঝিমাঝি পর্যন্ত। এর মধ্যে যশোর জেলায় সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৬ হাজার ৭৩০ হেক্টর জমিতে।তবে ৪ হাজার ১৩৫ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে বাঁধাকপি, ফুলকপি, শিম, মূলা, লালশাক- পালংশাক, সবুজ শাকসহ নানা ধরণের সবজি।

দেশের চাহিদার প্রায় ৬০ শতাংশ সবজিই যশোর থেকে সরবরাহ করা হয়। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে পাইকারদের হাত ঘুরে সবজি চলে যায় রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে। প্রায় বছর জুড়েই এ অঞ্চলের চাষিরা নানা জাতের সবজি চাষ করে থাকেন। তবে শীত মৌসুম ঘিরে সবজি চাষের ধুম পড়ে এ অঞ্চলে। এদিকে বাজারে কিছু শীতের সবজি ওঠা শুরু হলেও দাম দ্বিগুণ। তা একরকম সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। এমন পরিস্থিতিতে ক্রেতাদের চেহারায় অসন্তষ্টির ছাপ দেখা দিলেও চাষিদের মুখে খুশির ঝিলিক মিলছে।

চাষিরা বলেছেন, বর্তমানে অল্প পরিমাণ শীতকালীন সবজি ফুলকপি, বাঁধাকপি, সিম, টমেটো, পালংশাক বাজারজাত করা হচ্ছে। এ গুলো মৌসুমের আগে চাষ করা হয়েছে। তাই চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম হওয়ায় সবজির দাম বেশি। এছাড়া বর্ষার কারণে চাষ ব্যহত হওয়ায়ও দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। আর মাসখানেক পরে শীতকালীন সবজির দাম কমে যাবে।

যশোর সদরের বাগডাঙ্গা গ্রামের উজ্জল দাস জানান, তিনি এবার দুই বিঘা জমিতে ওলকপি লাগিয়েছেন। এতে খরচ হয়েছে দেড় লাখ টাকার মতো। ফলন ভালো হলে প্রতি বিঘায় তিনি ৮০ থেকে ৮৫ মণ ওল পাবেন। এই হিসাবে তিন বিঘায় তার উৎপাদন হবে ২৪০ মণ।কোনো প্রাকৃতিক বিপর্যয় না হলে বীজ, সার, মজুরি ও পরিবহন খরচ বাদে বিক্রি করলে তার লাখ খানিক টাকা লাভ হবে।

রাজাপুর মাঠের সবজি চাষি আব্দুল জব্বার বলেন, এ বছর দীর্ঘ অনাবৃষ্টি আর তীব্র গরমের কারণে সময়মতো শীতকালীন সবজির চাষ শুরু করতে পারেনি সব চাষিরা। যে কারণে একটু দেরি হয়েছে। আমি দেড় বিঘা জমিতে কপি ও ১০ কাঠা জমিতে লালশাকের চাষ করেছি। আশা করি এখান থেকে ভালো লাভ করব।

ইবাদত আলী নামে এক চাষি জানান, বর্তমানে বাজারে যে সব শীতকালীন সবজি পাওয়া যাচ্ছে সে গুলো মৌসুমের আগে লাগানো হয়। যে কারণে ফুলকপি- বাঁধাকপি ভরা মওসুমের মতো পরিপক্ক হয় না, সাইজে ছোট হয়। এসব কপির দাম কম হওয়ার কথা। কিন্তু চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম হওয়ায় এখন দাম বেশি।

যশোর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ বাদল চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, জেলার সাতমাইল, চুড়ামনকাটি, বারিনগর, হৈবতপুর, কাশিমপুর, বন্দবিলা, লেবুতলা, নোঙরপুর, ইছালি ইউনিয়ন সহ বিভিন্ন এলাকার মাঠজুড়ে শীতকালীন সবজির সমারোহে সবুজ হয়ে উঠেছে। আগাম শীতকালীন সবজি চাষ করলে ফসলের বেশি দাম পাওয়া যায়। তাই পুরোদমে চলছে সবজি পরিচর্যার কাজ। মৌসুমের শুরুতে সবজির দাম একটু বেশি থাকে। এ সময় উৎপাদন কম হওয়ায় সবজির দাম বেড়ে যায়। এ ছাড়া বর্ষার কারণে উৎপাদন ব্যহত হওয়ায় দাম একটু বেশি। মাসখানেক পার হলে উৎপাদন বৃদ্ধি পেলে সবজির দাম স্বাভাবিক হবে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।

শেয়ার