ঝড়ে পড়া আমগুলোর সিংহভাগই অপরিপক্ক। ছোট ও মাঝারি সাইজের এসব অপরিপক্ক আম বিক্রি হচ্ছে ১১০-২০০ টাকা মণ দরে। গ্রামের নারী-পুরুষ ও কিশোর-কিশোরীর কুড়ানো এসব আম পাইকারী ব্যবসায়ীরা কিনে আড়তে নিয়ে যান। পরে আড়ত থেকে কিনে ট্রাকযোগে এসব আম যাচ্ছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে।
সদর উপজেলার মহিপুর বাজার, শিবগঞ্জের চককীর্তি, নাচোলের মল্লিকপুর, গোমস্তাপুর উপজেলার বোয়ালিয়া ইউনিয়নের মকরমপুর ব্রিজ, কাঞ্চনতলা, বোয়ালিয়া বাজার, ঘাটনগর ও মিনিবাজার মোড়ে গ্রাম থেকে কিনে জড়ো করেন। এরপর বস্তায় ভর্তি করে রাতে ট্রাকযোগে যাচ্ছে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্নস্থানে।
আমচাষী ও ব্যবসায়ীরা জানান, সোমবার মধ্যরাতে ব্যাপক কালবৈশাখী ঝড়বৃষ্টি হয়। এসময় গাছ থেকে ব্যাপক অপরিপক্ক আম ঝরে পড়ে। এসব আম গ্রামের মানুষজন বাগান থেকে কুড়িয়ে ৩-৫ টাকা দরে বিক্রি করে। আমের জাতভেদে একেকরকম দামে বিক্রি হয়েছে এসব আম। ফজলী আম ৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও অন্যান্য গুটিজাতের আম বিক্রি হয় ৩-৪ টাকা কেজি দরে।
নাচোল উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের মল্লিকপুর গ্রামের আমচাষী আল আমিন বলেন, প্রায় ৭ বিঘা জমিতে মাঝারি সাইজের প্রায় ৫৭টি আমগাছ রয়েছে। এসব গাছে ঝুলছে আশ্বিনা, ফজলী, ক্ষিরসাপাত, লক্ষণভোগ জাতের আম। হঠাৎ সোমবার রাতে ব্যাপক বৃষ্টির সাথে ঝড় হয়। এতে অনেক আম পড়ে নষ্ট হয়। এসব আম গ্রামের অনেকেই কুড়িয়ে ৩-৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছে।
সদর উপজেলার গোবরাতলা ইউনিয়নের মহিপুর গ্রামের সাইদুল ইসলাম জানান, গতকাল রাতের ঝড়ে চার বস্তা আম কুড়িয়েছিলাম। তিন টাকা কেজি করে এসব আম বিক্রি করেছি। বাড়িতে কিছু ফজলী আম রেখে সবগুলো বিক্রি করেছি। সকাল থেকে এখন পর্যন্ত ৬০০ টাকার আম বিক্রি করেছি।
গোমস্তাপুর উপজেলার বেলাল বাজার এলাকার জুলকার নাইন বলেন, রাতের ঝড়ে ১০ মণ আম কুড়িয়েছিলেন। তবে আম কিনে নেয়ার মানুষ খুঁজে পাচ্ছিলাম না। পরে জানতে পারলাম, পাইকারি বয়বসায়ীরা এসেছে আম কিনবে। তাই তাদের কাছে ৩-৪ টাকা কেজি দরে বিক্রি করলাম। তারা আমের মৌসুমে প্রত্যেক ঝড়ের পর আম কিনে নিয়ে যায়।
পাইকারী ব্যবসায়ী তহরুল ইসলাম জানান, ঝড়ে পড়া আম তেমন কোন কাজে লাগে না। তাছাড়া এখনকার আমগুলো পরিপক্ব নয়। তাই আচার করে অনেকেই। তবে অনেক বেশি আম হওয়ার কারনে বাধ্য হয়েই বিক্রি করতে হয়। আমরাও কম দামে এসব আম পায়। পরে এগুলো রাজধানী ঢাকায় ট্রাকে করে পাঠিয়ে দেয়। ঢাকায় এসব আমের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। মঙ্গলবার ২ ট্রাক আৃ কিনেছি।
তিনি আরও জানান, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ও রাতে দুটি ট্রাক আম ভর্তি করে ঢাকায় রওনা দিয়েছে। এখানে ১১০-২০০ টাকা মন দরে কিনলেও ঢাকায় ৪০০-৫০০ টাকা মন দরে বিক্রি হবে। তবে আমের জাত হিসেবে দাম ভিন্ন আছে যেমন আশ্বিনা, লক্ষণভোগ গুটি জাতের আম ৩-৪ টাকা আর ফজলি আম ৫ টাকা কেজি দরে ক্রয় করেছি।
আরেক পাইকারি ব্যবসায়ী আব্দুল মাজেদ বলেন, ঝড়ে পড়া আমে দাগ পড়ে নষ্ট হয়ে যায়। তাই বেশিরভাগ সময় আম পরিপক্ব থাকলে তা স্থানীয় জুস ফ্যাক্টরিতে চলে যায়। তবে এখন যেহেতু আমগুলো অপরিপক্ক হয়ে আছে, তাই জুসের পাল্প করা যাবে না। তাই কম দামে কিনে ট্রাকে করে ঢাকায় পাঠিয়ে দেয়। সেখানে অনেকেই এই আম আচার ও রান্না করে খাওয়ার কাজে কিনে নেয়।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, সোমবার রাতে জেলার বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক ঝড়বৃষ্টি হয়েছে। তবে গোমস্তাপুরে ক্ষতির পরিমাণ তুলনামূলকভাবে বেশি। ঝড়ে আম ও লিচুর অনেক ক্ষতি হয়েছে। অনেক অপরিপক্ক আম গাছ থেকে ঝড়ে পড়েছে। এসব আম তেমন কোন কাজে না আসায় কম দামে বিক্রি হয়।
উল্লেখ্য, এবছর চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৩৮ হাজার হেক্টর জমিতে আমের চাষাবাদ হয়েছে। প্রায় ৫৫-৬০ লাখ গাছে চলতি মৌসুমে কৃষি বিভাগ জেলায় আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ৩ লাখ ২৫ হাজার মেট্রিক টন। গতবছর জেলায় ৩৫ হাজার হেক্টর জমিতে আড়াই লাখ মেট্রিক টন এবং তার আগের বছর ৩৩ হাজার হেক্টর জমিতে ২ লক্ষ ৪৫ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদন হয়েছে।
বাণিজ্য প্রতিদিনের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন
