Top

দিনাজপুরে কলার জমজমাট ব্যবসা

১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ৭:৪৭ অপরাহ্ণ
দিনাজপুরে কলার জমজমাট ব্যবসা
দিনাজপুর প্রতিনিধি :

‘‘দুধ কলা ভাত সড়াত সড়াত’’ আহসান হাবিবের ছড়ার এই লাইন থেকে বলা যায় দুধ কলা ভাত খেতে কতই না মজার ছিল। দেশের অনাচে কানাচে কলার চাহিদা ছিল সব সময় । আগের মতো সেই দুধ কলা ভাতের প্রচলন না থাকলোও কলার চাহিদা কমেনি এতটুকুও বরং বেড়েছে বহু গুনে। দিনাজপুরের কলার চাষিরা জেলা চাহিদা পূরণ করে পাঠাচ্ছেন অন্য জেলায়। কলা চাষের উপযোগী উঁচু জমি থাকায় দিনাজপুরে এই ফসলের উৎপাদন বেশি। এ ছাড়া আবাদে পরিশ্রম কম এবং ন্যায্য দাম পাওয়ার নিশ্চয়তার কারণে কৃষকেরা ঝুঁকছেন কলা চাষে। এমনটাই বলছেন সংশ্লিষ্ট সবাই।

জেলার কৃষি সম্প্রাসারন অধিদপ্তরের তথ্য মতে, জেলার ১৩ উপজেলা কৃষকদের মাঝে উচ্চ ফলনশীল বিভিন্ন জাতের কলা আবাদ করেছ। এর মধ্যে মেহের সাগর, সাগর, চিনি চাম্পা, শোভোরী ও সুন্দরী (মালভোগ) জাতের উচ্চ ফলনশীল কলার আবাদ করা হচ্ছে। বছরের মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত কলা গাছের চারা রোপন করা হয়। ১ একরে ১ হাজার কলা চারা রোপন করা যায়। ১৩ মাস পর চাষিরা ওই কলা ক্ষেত থেকে কালা কাঁদি সঙগ্রহ করতে পাড়ে। এক একটি কাঁদি থেকে ৬-৮ টি কলার ছড়ি পাওয়া যায়।
জেলার সব কটি উপজেলাতেই কলা চাষ হয়। তবে প্রায় ৭০ শতাংশ কলা চাষ হয় কাহারোল, বীরগঞ্জ, সদর ও বিরল উপজেলায়। শ্রাবণের শেষ সপ্তাহ থেকে শুরু করে আশ্বিনের শেষ পর্যন্ত ফল তোলার সময়। এই সময় কাহারোল উপজেলার দশমাইল এলাকায় বসে উত্তরাঞ্চলের দ্বিতীয় বৃহত্তম বড় কলার হাট। ঢাকার বাদামতলী, যাত্রাবাড়ী, তেজগাঁও, ওয়াইজঘাট, নারায়ণগঞ্জ জেলা, কুমিল্লা, ময়মনসিংহসহ বিভিন্ন জেলা শহর থেকে ব্যাপারীরা কলা কিনতে আসেন এখানে।

ভোর পাঁচটা থেকে ভ্যানে করে এই হাটে বিক্রির জন্য কলা আনতে শুরু করেন চাষি ও স্থানীয় কলা ব্যবসায়ীরা। এই হাটে স্থানীয় কলা ব্যবসায়ী আছেন দেড় শতাধিক। হাটের বাইরে থেকে আসা ব্যাপারীদের সঙ্গে চলে দর-কষাকষি। কেনাবেচা শেষে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকে কলা তোলা হয়। সকাল ১০টার মধ্যে শেষ হয় হাটের কারবার।
বৃহস্পতিবার সকালে কলার হাটে ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা যায় চাষি-ব্যবসায়ী ও পাইকারদের। মাঠজুড়ে সারি সারি সাজানো কলার কাঁদি। স্থানীয়ভাবে কলার কাঁদিকে কেউ বলে কাইন, ঘাউর, ঘের, পীর। প্রতিটি কলার কাঁদি বিক্রি হয় ৪০০-৪৫০ টাকা দরে। ব্যাপারীরা জানান, গেলবার প্রতিটি কলার কাঁদি কিনেছেন ৩০০-৩৫০ টাকা দরে। সে হিসাবে এবার কাঁদিপ্রতি দম ১০০ টাকা বেড়েছে।

কলার দাম পেয়ে খুশি কৃষকেরাও। কাহারোল উপজেলার কলাচাষি নুরুল আমিন বলেন, ‘কলা চাষে কোনো ঝুঁকি নেই। গেলবার ২০০ গাছ দিয়ে বাগান শুরু করি। এবার সেখানে ৫০০ গাছের বাগান করেছি। বাগানে মোট খরচ হয়েছে ৩৫ হাজার টাকা। প্রায় ২ লাখ টাকার কলা বিক্রির আশা করছি।’ তিনি জানান, কলার বাগানে যে খরচ হয়েছে, বাগানের ভেতরে বিভিন্ন শাকসবজির আবাদ থেকেই সেটা উঠে এসেছে।

কাহারোল উপজেলার শীতলাই এলাকার কৃষক সঞ্জিত রায় বলেন, কলা বিক্রি করতে হাঁটে আসতে হয় না। পাইকারেরা আগেই টাকা দিয়ে দেন। হাঁটে আনলে খাজনা দেওয়া, পরিবহন খরচসহ পড়তা করা যায় না। তাই ব্যবসায়ীদেরই দিয়ে দিই, বিক্রির ঝামেলা থাকে না। তিনি জানালেন এবার, ৩০০ কাঁদি কলা বিক্রি করেছেন তিনি। প্রতিটি কাঁদির দাম পেয়েছেন ২৮০ থেকে ৩৪০ টাকা।

হাটের ইজারাদার মিজানুর রহমান জানান, মৌসুমে প্রায় প্রতিদিন ৭০-৮০ লাখ টাকার কলা কেনাবেচা হয় এই হাটে। হটের বাহিরের বিভিন্ন উপজেলায়ও প্রায় ২০ লক্ষটাকা কলা বিক্রিয় দিনে। দশমাইল হাটে শতাধিক ব্যাপারী কলা কিনতে আসেন। প্রতিদিন ২৫-৩০টির বেশি ট্রাকে কলা নেওয়া হয়। একটি ট্রাকে সর্বনিম্ন ৮০০-৯০০ কাঁদি কলা ধরে। অর্ধশত শ্রমিক শুধু ট্রাকে কলা তোলার কাজ করেন। তবে গত বছরের চেয়ে এবার কলার আমদানি কম। তিনি বলেন, ভুট্টার আবাদ বেড়ে যাওয়ায় কলার আবাদ কিছুটা কমেছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক প্রদীপ কুমার গুহ বলেন, এ জেলায় প্রায় ৪ হাজার হেক্টর জমিতে কলার আবাদ হচ্ছে। উত্তরাঞ্চলের সবচেয়ে বড় কলার হাট বগুড়ায়। তবে ওই হাটে চম্পা কলার আধিক্য বেশি। দিনাজপুরে উৎপাদিত সাগর কলা ঘ্রাণে ও স্বাদে অনন্য হওয়ায় এবং মৌসুমের শুরুতে এবার চাহিদা বেশি থাকায় দামও কিছুটা বেশি। কলা চাষে খরচ কম। ঝুঁকি ও রোগবালাইও কম। তাই কলা চাষ জনপ্রিয় হয়েছে। তিনি বলেন, আমের মতো কলাও বিশেষ কার্বন ব্যাগ দিয়ে ঢেকে বড় করার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। যদি এটি করা সম্ভব হয়, তাহলে সম্পূর্ণ কীটনাশক ও দূষণমুক্ত কলা উৎপাদন করে দেশের বাইরেও রপ্তানি করার সুযোগ সৃষ্টি হবে।

শেয়ার