Top

মধ্যপাড়া পাথর খনি বন্ধের আশংকা

২৬ আগস্ট, ২০২১ ১২:২৭ অপরাহ্ণ
মধ্যপাড়া পাথর খনি বন্ধের আশংকা
দিনাজপুর প্রতিনিধি :

দেশের একমাত্র উৎপাদনশীল দিনাজপুরের পার্বতীপুরের মধ্যপাড়া পাথর খনির বর্তমান ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কোম্পানী জার্মানীয়া-ট্রেস্ট কনসোর্টিয়ামের চুক্তির মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী সেপ্টেম্বর মাসে ।

মধ্যপাড়া পাথর খনিটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান জিটিসির হাতে ৩য় বারের মত লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে, এখন এই লাভজনক প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার মুখে পড়তে পারে। পেট্রোবাংলা পাথর খনির ঠিকাদার নিয়োগে আর্ন্তজাতিক দরপত্র আহবান করে ৭ দফা তারিখ পরিবর্তন করেলেও করোনার মহামারি কারনে বিদেশী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সাড়া মেলেনি। ফলে, আর্ন্তজাতিক দরপত্র বাতিল করা হয়েছে।

খনির পাথর উত্তোলন, উন্নয়ন, রক্ষণাবেক্ষণ এবং ব্যবস্থাপনা কাজে নিয়োজিত বেলারুশ ভিত্তিক কোম্পানী জার্মানীয়া- ট্রেস্ট কনসোর্টিয়াম (জিটিসি) ঠিকাদারে সাথে চুক্তি নবায়ন সম্পন্ন করতে পারেনি পেট্রোবাংলার এই প্রতিষ্ঠান মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানী লিমিটেড (এমজিএমসিএল)। নতুন করে আর্ন্তজাতিক দরপত্রের মাধ্যেমে এই মেগা প্রকল্পটিতে নতুন কোন ঠিকাদার নিয়োগ করা হবে? নাকি বর্তমান ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সাথে নতুন করে চুক্তি হবে এই নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় বড় ধরনের হুমকির মুখে পড়তে যাচ্ছে দেশের একমাত্র এবং বৃহৎ মধ্যপাড়ার্ এই পাথর খনিটি।

ফলে আবার এই খনিটি বন্ধ হওয়ার আশংকা রয়েছে। ফলে অনিশ্চিত হয়ে পড়বে বছরে রেকর্ড পরিমান ১.৬ মিলিয়ন টন পাথর উত্তোলন। মধ্যপাড়া পাথর খনিটির উৎপাদন বন্ধ হলে দেশের রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্র, এবং শাহাজালাল বিমান বন্দরের ৩য় টার্মিনালসহ মেগা প্রকল্প গুলো বিপাকে পড়তে পারে।

অন্যদিকে, খনি বন্ধ হয়ে গেলে এখানে কর্মরত ৭ শতাধিক খনি শ্রমিকসহ প্রায় ১ হাজার কর্মকর্তা কর্মচারী কর্মহীন হয়ে পড়বে।

খনি কর্তৃপক্ষের রহস্যজনক ভুমিকার কারনে পাথর খনির নতুন ঠিকাদার নিয়োগের কোন সিদ্ধান্ত না হওয়ায় ধারাবাহিকভাবে ৩ বার লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিনত হওয়া পাথর খনিটি আবার বন্ধের আশংকা দেখা দিয়েছে।মধ্যপাড়ার পাথর উত্তোলনের কারনে জিটিসির মেয়াদকাল আরও একদফা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এই বিষয়ে অনুমোদনও দেওয়া হয়েছে। কিন্ত তার পরেও ষড়যন্ত্রকারী মহল রহস্যজনক কারনে চুক্তি নিয়ে নানা টালবাহানা শুরু করছে।

খনিটিকে সচল রাখতে গত ২০১৩ সালে ২ সেপ্টম্বর বর্তমান বেলারুশ ভিত্তিক কোম্পানী জার্মানীয়া- ট্রেস্ট কনসোর্টিয়াম (জিটিসি) এর সাথে। নানা প্রতিকুলকতা পেরিয়ে পাথর খনিতে পাথর উত্তোলনের নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করে পাথর খনি থেকে প্রতিদিন তিন শিফটে সাড়ে ৫ হাজার মেট্রিক টন পাথর উত্তোলনের যে লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে পাথর খনিটি চালু করা হয়েছিল, একমাত্র জিটিসিই সেই লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে এক দিনে তিন শিফটে ৬ হাজার মেট্রিক টন পর্যন্ত পাথর উত্তোলন করে তাদের সক্ষমতা দেখিয়েছে।

শতাধিক বিদেশী খনি বিশেষজ্ঞ ও অর্ধশত দেশী প্রকৌশলী এবং সাড়ে ৭শ দক্ষ খনি শ্রমিক দিনে রাতে রেকর্ড পরিমান পাথর উত্তোলন করার কারনে মধ্যপাড়া পাথর খনি কর্তৃপক্ষ ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে লোকসানের কলংক ঘুচিয়ে প্রায় ৭ কোটি ২৬ লক্ষ টাকা প্রথমবারের মত লাভের মুখ দেখে।

২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে প্রায় ২২ কোটি টাকা মুনাফা করে দ্বিতীয়বার লাভজনক প্রতিষ্ঠানের ধারা অব্যাহত রাখে পাথর খনিটি। চলতি ২০২০-২০২১ অর্থ বছরেও খনিটি লাভের মুখ দেখেছে। সেই সাথে পাথর বিক্রি থেকে সরকারের ভ্যাট ও ট্যাক্স সহ কয়েক কোটি টাকা সরকারের কোষাগারে জমা হয়েছে। এতে বিপুল পরিমানে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হয়েছে। এই অবস্থায় নতুন করে ঠিকাদার নিয়োগ করা হবে নাকি বর্তমান ঠিকাদারের মেয়াদ নবায়ন এই নিয়ে চলছে টানা পোড়ন।

নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক এক প্রকৌশলী জানান, বৈশ্বিক মহামারিক কারনে দীর্ঘ প্রায় দেড় বছর ধরে মধ্যপাড়ার পাথর খনির পার্শ্ববর্তী বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে চীনা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সিএমসি-এক্সএমসি। সেখানে চাকুরী না থাকায় সহশ্রাধিক খনি শ্রমিকের মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ শ্রমিক চাকুরী হারা হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। খনি বন্ধ থাকায় সেখানে শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে এবং শ্রমিক আন্দোলন চলছে। অথচ এই করোনা মহামারীর মধ্যেও কঠোর স্বাস্থ্য বিধি মেনে মধ্যপাড়া পাথর খনির উৎপাদন কাজ অব্যাহত রেখেছে জিটিসি। ফলে করোনার মধ্যেও খনিটি এই অর্থ বছরে আবারও লাভের মুখ দেখেছে।

গতকাল বুধবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত খনির বর্তমান ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের চুক্তির মেয়াদ শেষ ও পেট্রোবাংলা পাথর খনির ঠিকাদার নিয়োগে আর্ন্তজাতিক দরপত্র আহবান করে ৭ দফা তারিখ পরিবর্তন করেও ঠিকাদারের সাড়া না পাওয়ায় এ বিষয়ে জানতে একাধিকবার মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানী লিমিটেডর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী আবু দাউদ মুহাম্মদ ফরিদুজ্জামান ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য জানা যায়নি ।

শেয়ার