দেশে প্রায় শতাধিক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। কিন্তু এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন পর্যন্ত কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগের জন্য দেওয়া হয়নি কোনো নীতিমালা। এ কারণে কর্তৃপক্ষ খামখেয়ালিভাবে জনবল নিয়োগ, চাকরিচ্যুত, বেতন না দেওয়া, যোগ্যতা অনুযায়ী বেতন কম দেওয়াসহ নামা অনিয়ম করছেন। তাই কর্মকর্তা- কর্মচারীরা বিভিন্ন সময় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) কাছে অভিযোগ করেছেন। এসব অভিযোগ গুরুত্ব দিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগে ইতিমধ্যে ইউজিসি একটি উপযোগী নীতিমালা তৈরির কাজ শুরু করেছে। শিগগির এটি চূড়ান্ত করে তা কার্যকর করা হবে।

দেশে শতাধিক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থাকলেও এসবের মধ্যে ৯৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম চলমান রয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রায় এক লাখ কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্মরত। তবে যেসব পদে তারা কর্মরত, সেসব পদে নিয়োগে নেই কোনো বিধি বা নীতিমালা। ফলে অধিকাংশ পদে তদবিরে নিয়োগ দেওয়া হয়। যোগ্য ব্যক্তিরা চাকরির জন্য এলেও তাদের নিয়োগ দেওয়া হয় না। বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় স্যাররা আমাদের সঙ্গে যখন-তখন অশোভন আচরণ করলেও তার কোনো বিচার করা হয় না।

অভিযোগ রয়েছে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কর্মীদের কারণে-অকারণে চাকরিচ্যুতি, অল্প বেতনে নিয়োগ, যোগ্যতা অনুযায়ী বেতন ধার্য না করা, দীর্ঘদিন চাকরি করেও অবসরে কোনো সুবিধা না দিয়ে বিদায় দেওয়া হয়। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অশোভন আচরণেরও অভিযোগ রয়েছে।

বাণিজ্য প্রতিদিনের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

এসব বিষয় আমলে নিয়ে একটি সুনির্দিষ্ট দিক-নির্দেশনা দিতে গাইডলাইন হিসেবে ‘বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ বিধিমালা’ প্রণয়নের কাজ শুরু করেছে ইউজিসি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্তচারীরা জানান, করোনা পরিস্থিতিতে একদিকে আমাদের বেতন কমিয়ে দেওয়া হয়েছে, অন্যদিকে পাঁচ শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে অকারণে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। তাদের অনেককে এখনো পাওনা টাকা দেওয়া হয়নি। টাকা চাইলে ভয়ভীতি দেখিয়ে বিদায় করে দেওয়া হচ্ছে। পাওনা টাকা না পেয়ে অনেকে চোখের পানি ফেলে আল্লাহর কাছে বিচার দিয়ে চলে যাচ্ছেন। দেশ-বিদেশ থেকে উচ্চ ডিগ্রি অর্জন করে এখানে চাকরি করতে এলেও চাকরিচ্যুত হওয়ার ভয়ে দিন পার করতে হয়।

ইউজিসি সূত্রে জানা যায়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে একটি নীতিমালা তৈরি করা হলেও কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রে কোনো গাইডলাইন বা বিধিমালা নেই। এ বিষয়ে নীতিমালার খসড়া তৈরিতে গত ২২ আগস্ট পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এতে ইউজিসির সদস্য (বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়) অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ দত্তকে আহ্বায়ক করা হয়েছে এবং অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলমগীর (প্রশাসন) ও ইউজিসি সচিব (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ড. ফেরদৌস জামানকে সদস্য করা হয়েছে।

কমিটি সূত্রে জানা যায়, এ কমিটি গঠন হওয়ার পর সব সদস্য মিলে বৈঠক করেছেন। এ সংক্রান্ত একটি খসড়া তৈরির কিছু দিকনির্দেশনা নির্ধারণ করা হয়েছে। সে অনুযায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ নীতিমালার খসড়া তৈরি করা হচ্ছে। এটি চূড়ান্ত করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শেখ কবির জানান, ইউজিসি কর্মকর্তা-কর্মচারী নীতিমালা তৈরি করছে, কিন্তু বিষয়টি আমাদের অবগত করেনি। কোনো কিছু করা হলে তা আমাদের অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে শিক্ষামন্ত্রী আমাদের নিশ্চিত করেছেন। তাই বিষয়টি চূড়ান্ত করার আগে আমাদের মতামত নেয়ার সুপারিশ জানাই।

তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় তাদের নিজেদের নিয়ম মোতাবেক শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দেয়। যোগ্যদের যাচাই-বাছাই করে নিয়োগ দেওয়া হয়। তাই ঢালাওভাবে অভিযোগ তুলে কিছু চাপিয়ে দিলে তা কাজে আসবে না।

অন্যদিকে ইউজিসির সদস্য ও কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক বিশ্বজিৎ দত্ত জানিয়েছেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রে নিয়োগ পদ্ধতি ও যোগ্যতা নির্ধারণ, বেতন কাঠামো নির্ধারণসহ বিভিন্ন বিষয়ে একটি ইউনিক গাইডলাইন নির্ধারণ করতে নীতিমালা তৈরি হচ্ছে। এটি চূড়ান্ত হলে সে অনুযায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ কার্যক্রম পরিচালিত হবে। একই সঙ্গে শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালাও যুগোপযোগী করে তোলা হবে। আগামী এক মাসের মধ্যে খসড়া তৈরির কাজ শেষ হবে।
’