Top

নোয়াখালীতে ইন্টারনেট সেবায় মানা হচ্ছে না সরকারি নীতি

১১ অক্টোবর, ২০২১ ১২:২৩ অপরাহ্ণ
নোয়াখালীতে ইন্টারনেট সেবায় মানা হচ্ছে না সরকারি নীতি
নোয়াখালী প্রতিনিধি :

সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ি সেবা পাচ্ছে না নোয়াখালীর ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা। মানা হচ্ছে না সরকারি নিয়ম নীতিও। অভিযোগ রয়েছে সরকারি নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি মূল্য দিয়েও পাওয়া যাচ্ছে না ভালো (গতি) এমবিপিএস। এতে ভোগান্তির স্বীকার হতে হচ্ছে ব্যবহারকারীদের। এ ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ সংস্থার তদারকি বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন গ্রাহকরা। তবে ব্যবসায়ীদের দাবি তারা সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ি সেবা প্রদান করে যাচ্ছেন।

খবর নিয়ে জানা গেছে, গত ৬জুন সরকারি ঘোষিত ‘এক দেশ এক রেট’ ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা পাচ্ছে না নোয়াখালীর ব্যবহারকারীরা। ১ সেপ্টম্বর থেকে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী এমবিপিএস হিসেবে যে টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে তার যথাযথ সেবা নেই।

ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবহারকারী গ্রাহক বলেন, ৫ এমবিপিএস গতির জন্য তারা ৭০০ টাকা দিচ্ছেন ঠিকই কিন্তু দেখা গেছে তাকে নির্ধারিত গতির ইন্টারনেট পাওয়া যাচ্ছে না। একটি ৫০ এমবির ভিডিও ডাউনলোড করতে বেশ সময় নিতে হচ্ছে। সাধারণ গ্রাহকরা ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানকে বারবার বললেও তারা বলছে, এটি কম্পিউটারের সমস্যা। তাদের দাবি এ জেলায় ইন্টারনেটের গতি অন্তত দুর্বল, তাও আবার শহরের তুলনায় গ্রামের অবস্থা আরও খারাপ। ফলে অনেকে অফিসিয়ালি কাজ করতে গিয়ে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে।

অথচ সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী ৫ এমবিপিএস গতির জন্য ৫০০ টাকা, ১০ এমবিপিএস গতির জন্য ৮০০ ও ২০ এমবিপিএস’এর জন্য ১২০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। দেখা যায়, জেলার বেশিরভাগ গ্রাহক ব্যবহার করছে ৫ এমবিপিএস এবং ১০ এমবিপিএস। ২০ এমবিপিএস গতির গ্রাহক হাতে গোনা কয়েকজন। ৫ ও ১০ এমবিপিএস গতি ব্যবহারকারীরা জানান, ৫ এমবিপিএস ব্যবহারকারীরা সর্বোচ্চ ৩ এমবিপিএস পাচ্ছে, তাও নিয়মিত নয়, মাঝে মাঝে। একই অবস্থা ১০ এমবিপিএস ব্যবহারকারীদেরও। ৫ ও ১০ এমবিপিএস গতির টাকা নেওয়া হলেও স্পিড দেওয়া হচ্ছে তার অর্ধেক।

জেলার কবিরহাট, কোম্পানীগঞ্জ ও বেগমগঞ্জের একাধিক ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা জানান, সরকারি নির্দেশনার আগে তারা ৫ এমবিপিএস গতির জন্য ৮০০-১০০০ টাকা দিয়েছেন। এখন সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ি ৫০০টাকা নেয়ার কথা হলেও ব্যবসায়ীরা তাদের কাছ থেকে নিচ্ছে ৭০০-৮০০ টাকা। কিন্তু সে হিসেবে ইন্টারনেটের গতি অনেক কম।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেলা শহর মাইজদীর কিছু ব্যবসায়ী সরকারি নির্দেশনা মানলেও বেশিরভাগ উপজেলা শহরের ব্রন্ডব্যান্ড ব্যবসায়ীরা সরকারি নির্দেশনা মানছে না।

নোয়াখালী ইন্টারনেট ব্যবসায়ী সমিতির তথ্য অনুযায়ী সদর উপজেলাসহ জেলার সব উপজেলা শহরে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা রয়েছে। এ ব্যবসার সাথে ৬০ এর অধিক ব্যবসায়ী যুক্ত রয়েছেন। যাদের বেশিরভাগই তরুণ-যুবক উদ্যোক্তা। তবে এদের মধ্যে দুই শতাংশ রয়েছে সরকারি নির্দিষ্ট দপ্তরের লাইসেন্স প্রাপ্ত। আর সবাই বিনা লাইসেন্সে এ ব্যবসা পরিচালনা করছে। ফলে তারা নিজেরা নিজেদের ইচ্ছামতো এ টাকা নিচ্ছে এবং এমবিপিএস দিচ্ছে। এ ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রক সংস্থার তদারকি বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছে সমিতি ও সাধারণ গ্রাহকরা।

এদিকে নাম প্রকাশ না করা শর্তে জেলা পর্যায়ের একাধিক ব্রন্ডব্যান্ড ব্যবসায়ী জানান, সরকারের নির্ধারিত মূল্য অনুযায়ি গতি দিতে গেলে ব্যবসা করা কোনোভাবে সম্ভব নয়। তাদের দাবি, ঢাকা থেকে প্রতি এমবিপিএস নিতে তাদের খরচ হচ্ছে ৯০টা। আবার তা হাউজে পৌঁছে দিতে খরচ হচ্ছে আরো ৫০ টাকা, সব মিলিয়ে প্রতি এমবিপিএস গতি গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দেয়া পর্যন্ত খরচ হচ্ছে ১৫০-১৬০ টাকা। এ ক্ষেত্রে ৫ এমবিপিএস গতিতে ব্যবসায়ীর প্রায় সাড়ে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা খরচ হচ্ছে। এ জন্য ব্যবসায়ীরা সরকারের ওই নির্দেশনাকে পুণঃমূল্যায়নের দাবিও জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে জেলা ব্রডবান্ড ইন্টারনেট সমিতির সভাপতি মো. বাবর জানান, সরকারি নির্দেশনার পর থেকে তারা লোকসানে রয়েছে। যাদের লাইসেন্স নেই, তারা হয়তো তাদের মতো করে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু যাদের লাইসেন্স আছে তারা সরকারি নির্দেশনা মানতে বাধ্য হচ্ছে। ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে লাইসেন্সপ্রাপ্ত ব্যবসায়ীরা।

শেয়ার