Top

হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের গণ-অনশনের ঘোষণা

১৬ অক্টোবর, ২০২১ ৫:১১ অপরাহ্ণ
হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের গণ-অনশনের ঘোষণা
চট্টগ্রাম প্রতিনিধি :

সারাদেশে শারদীয় দুর্গোৎসবে হামলা ও ভাঙচুরের প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ। শনিবার (১৬ অক্টোবর) দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের এস রহমান হলে সংগঠনটির পক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত। তিনি সারাদেশে সাম্প্রদায়িক হামলার তীব্র নিন্দা জানান এবং দোষীদের অনতিবিলম্বে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।

তিনি বলেন, এসব ঘটনাকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে আজ আর উড়িয়ে দেওয়ার কোনও সুযোগ নেই। এর সবটাই পরিকল্পিত, যার মূল লক্ষ্য হচ্ছে বাংলাদেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের দেশ থেকে তাড়িয়ে পুরো দেশকে সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে পরিণত করা।

এ পরিস্থিতিতে সাম্প্রদায়িক সহিংসতাকারীদের বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স ঘোষণার যথাযথ বাস্তবায়ন এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টে সাম্প্রদায়িক মহলের চক্রান্ত প্রতিরোধে আগামী ২৩ অক্টোবর সারাদেশে ভোর ৬টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত গণ-অনশন ও গণঅবস্থান এবং প্রতিবাদে মিছিলের ঘোষণা দেওয়া হয়। ঢাকায় এ কর্মসূচি পালিত হবে শাহবাগ চত্বরে এবং চট্টগ্রামে আন্দরকিল্লা চত্বরে।

রানা দাশগুপ্ত আরও বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে গত বছর সারাদেশে দুর্গোৎসব উদযাপিত না হলেও আমরা আশা করেছিলাম এবারের পূজা ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার সম্মিলনের উৎসবে পরিণত হবে। কিন্তু সব আনন্দ ম্লান হয়ে যায় মহাষ্টমীর দিন ১৩ অক্টোবর সকাল ১১টায়। ভেঙে দেওয়া হয় কুমিল্লার নানুয়ার দীঘির উত্তর পাড়ে দর্পণ সংঘের অস্থায়ী পূজামণ্ডপ, চানমনি কালীবাড়ির বিগ্রহ ও ফটক অগ্নিসংযোগে ভস্মীভূত করা হয় এবং ১৭টি পূজামণ্ডপের তোরণ ভেঙে দেওয়া হয়।

হামলার পরিসংখ্যান তুলে ধরে রানা দাশগুপ্ত বলেন, ধর্ম অবমাননার মিথ্যা জিগির তুলে পরিকল্পিত সাম্প্রদায়িক হামলা চলে ১৫ অক্টোবর বিজয়া দশমীর দিন পর্যন্ত। ১৩ অক্টোবর কুমিল্লার ঘটনা ছাড়াও হাজীগঞ্জে ত্রিনয়নী সংঘের পূজামণ্ডপ, লক্ষী-নারায়ণজী আখেড়ার গেট ভাঙা, রামকৃষ্ণ মিশন জমিদার বাড়ি দুর্গা মন্দির, শ্মশান কালী মন্দির, নবদুর্গা সংঘ পূজামণ্ডপ, দশভূজা সংঘ পূজামণ্ডপ, সোনাইমুড়ী গ্রামের পূজামণ্ডপ, হাজীগঞ্জে পূজামণ্ডপ, রামপুর লোকনাথ মন্দির, ভদ্রকালী মন্দির, ত্রিশুল সংঘ পূজামণ্ডপ, রামপুরে দুর্গামণ্ডপ, হাজীগঞ্জ রাধাগোবিন্দ মন্দির, বাজারগাঁও মুকুন্দ সাহার বাড়ির দুর্গা মন্দির ও হাটিলা গঙ্গানগর দুর্গামন্দিরে ভাঙচুর করা হয়েছে।

এছাড়া চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার বাঁশখালী উপজেলার শেখেরখীল, নাপোড়া গ্রামে হামলা চালায় সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী। এদের নেতৃত্ব দেয় মো. সাবের আহমেদ, মো. রিদোয়ান ও মো. শামছুল ইসলাম। এরা সবাই শেখেরখীল, গণ্ডামারা, নাপোড়ার বাসিন্দা। এদের হামলায় শেখেরখীল সর্বজনীন মন্দির ধ্বংস হয়েছে, হরি মন্দিরের সামনের সড়কে ২০টি হিন্দুর দোকানে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে।

১৩ অক্টোবর রাতে কক্সবাজার পেকুয়া উপজেলা শীলখালীর দুটি পূজামণ্ডপের প্রতিমা এবং হরি মন্দিরে লুটপাট ও ভাঙচুর করা হয়েছে। এছাড়া ১৬টি ঘরে হামলা করে লুটপাট ও ভাঙচুর চালানো হয়। মগনামা ইউনিয়নের ১২টি ঘরে ভাঙচুর ও লুটপাট এবং ১টি ঘরে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। স্থানীয় সরস্বতী মন্দিরের দুর্গা প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়। পেকুয়া সদর ইউনিয়ন, বারবাকিয়া ইউনিয়ন ও চকরিয়ার ৫টি পূজামণ্ডপ, লোকনাথ মন্দিরে লুটপাট ও ভাঙচুর করা হয়েছে।

চট্টগ্রামের বন্দর থানার কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পাশে জুলদা জেলেপাড়া পূজামণ্ডপে স্থানীয় জয়বাংলা ক্লাবের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা হামলা চালায় ইলিয়াস মেম্বার, জয়নাল ও মনিরের নেতৃত্বে। জয়নাল-মনির এ দুই ভাই বিএনপি থেকে সম্প্রতি আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছে।

এছাড়া চট্টগ্রাম মহানগরীর জেএম সেন হলের পূজামণ্ডপে হামলা ও তোরণ ভেঙে ফেলেছে দুর্বৃত্তরা। এছাড়া হাজারী গলি, দেওয়ানজী পুকুর পাড়, রাজাপুকুর লেইনেও তারা হামলা চালানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়।

এদিকে শনিবার (১৬ অক্টোবর) বেলা ১২টা পর্যন্ত অর্ধদিবস হরতাল পালন করে সমর্থকরা। নগরের আন্দরকিল্লা এলাকায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করলে এসময় যানবাহন চলাচল সাময়িক বন্ধ ছিল। তবে নগরের অন্যান্য এলাকায় যান চলাচল স্বাভাবিক ছিল। পরবর্তীতে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।

শেয়ার