প্রায় ১৯ ঘণ্টা পর উপাচার্যের আশ্বাসে অনশন স্থগিত করেছেন ভর্তি পরীক্ষায় পোষ্য কোটা বাতিলের দাবিতে আমরণ অনশনরত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরা।
সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) ভোর পৌনে ৬টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান অনশনরত শিক্ষার্থীদের জুস পান করিয়ে অনশন ভাঙান। এর আগে, রাত ১১টা থেকে অনশন স্থগিত করা পর্যন্ত উপাচার্য, উপ-উপাচার্যদ্বয়, ট্রেজারার, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, বিভিন্ন অনুষদের ডিনসহ প্রশাসনের অনেকেই সেখানে উপস্থিত ছিলেন এবং অনশনকারিদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
অনশন স্থগিতের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী কাজী মেহরাব বলেন, ভিসি মহোদয় কামরুল আহসান স্যার আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন যে, উনি আমাদের এই আন্দোলনের সাথে সংহতি পোষণ করেছেন। আজকে বিকেল তিনটায় শিক্ষক সমিতি এবং কর্মকর্তা সমিতির সাথে মিটিংয়ে বসবেন এবং আমাদের পক্ষ থেকে আমাদের দাবিগুলো তুলে ধরবেন। যেহেতু ভিসি স্যার আমাদের প্রতিনিধিত্ব করবেন, তাই আমরা আমাদের অনশন স্থগিত করেছি। আমাদের দাবির ন্যায্যতার পক্ষে আমাদের হয়ে তারা লড়াই করবেন। প্রশাসন যাতে আমাদের হয়ে শিক্ষক সমিতি এবং কর্মকর্তা সমিতির মিটিংয়ে আমাদের প্রতিনিধিত্ব করতে পারে সেজন্য আমরা তাদেরকে একটা সময় দিয়েছি। তারাও আমাদের সাথে অবস্থান করেছেন, তাই তাদের সুস্থতার কথাও আমরা মাথায় রেখেছি এবং আজকের সকল কার্যক্রম যাতে তারা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে পারে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ৫৩ ব্যাচের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ আলী চিশতি বলেন, প্রশাসন আমাদের দাবির সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে নৈতিকভাবে পোষ্য কোটা বাতিলের আশ্বাস দিয়েছেন। বিকেল ৩টায় শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের সঙ্গে এ নিয়ে মিটিং করবেন। মিটিংয়ে যদি পুনরায় পোষ্য কোটা সংস্কার বা পুনর্বহাল রাখার কোনো পাঁয়তারা করা হয় এবং আমাদের সঙ্গে বেইমানি করা হয়, তাহলে আমি আবার অনশনে বসব। তখন কোনো আশ্বাস আমাকে আর আমার অবস্থান থেকে দূরে সরাতে পারবে না। যদি সেই অনশনে বসে আমার মৃত্যুও হয়, আমি পিছপা হবো না। আমার লাশের ওপর দাঁড়িয়ে প্রশাসনকে পোষ্য কোটা বহাল রাখতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান বলেন, আমরা নীতিগত জায়গায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একমত। আজ বিকেল তিনটার সভায় এই বিষয়ের সমাধান হবে। এতে শিক্ষার্থীরাও খুশি হবেন বলে আশা করছি।
এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জাবি শাখার আহ্বায়ক আরিফুজ্জামান উজ্জ্বল বলেন, প্রশাসন আমাদের সঙ্গে নীতিগত জায়গায় একমত হয়েছে। আজ বিকেল ৩টায় সব পক্ষের সঙ্গে বসে প্রশাসন সিদ্ধান্ত নেবে। প্রশাসন আমাদের আশ্বাস দিয়েছে যৌক্তিক সমাধান করার। বিকেল তিনটার মিটিংয়ে আলোচনার ফলাফল দেখার শর্তে আমরা আমাদের কর্মসূচি স্থগিত করেছি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জাবি শাখার সদস্য সচিব তৌহিদ মোহাম্মদ সিয়াম বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, জাবি পোষ্য কোটার বিরুদ্ধে যে কঠোর আন্দোলন শুরু করেছে আমি তার সদস্য সচিব হিসেবে ঘোষণা করছি, আমার যেই ভাইবোনেরা কাল সারারাত ১৯ ঘন্টা না খেয়ে আমার সাথে বসে ছিলো তাদের সবাইকে ওয়াদা করছি, আমার মৃত্যু ছাড়া এই আন্দোলন এর সফলতা না পাওয়া অব্দি আমাকে কেউ সরাতে পারবেনা।
উল্লেখ্য, গতকাল রোববার বেলা ১১টার দিকে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ব্যানারে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসনিক ভবনের সামনে ভর্তি পরীক্ষায় পোষ্য কোটা বাতিলের দাবিতে ৮ জন শিক্ষার্থী আমৃত্যু অনশন কর্মসূচি শুরু করেন। এরপরে তাদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে এই অনশন কর্মসূচির সঙ্গে যোগ দেন আরও ৬ শিক্ষার্থী।
এম জি